বিএনপির ৭ সংসদ সদস্যের ‘দ্বিমুখী আচরণ’ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপির অনেক নেতাও বলছেন, এ সাত সংসদ সদস্য একদিকে পার্লামেন্টকে ‘অবৈধ’ বলে তা বিলুপ্তির দাবি জানাচ্ছেন, অন্যদিকে সংসদের সব সুযোগ-সুবিধাও ভোগ করছেন। বিএনপি ও তাদের মিত্রদের অনেকেই মনে করেন, এ সাতজনের কারণে বিএনপির দাবি-দাওয়া নিয়ে জনমনে এক ধরনের নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে। আবার ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্যের কারণে অস্বস্তিতে পড়ছেন আন্দোলনরত কর্মীরাও।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, বিএনপি এ পার্লামেন্ট থেকে ট্যাক্স ফ্রি গাড়িসহ সব সুবিধা ভোগ করছে এবং সংসদকে অবৈধ বলছে। বিএনপির নৈতিক কোনো জায়গা নেই।
তবে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘বিএনপি ঘটনাচক্রে সংসদে যোগ দিয়েছিল। এ অবস্থায় আমার দল হলে সংসদেই যেতাম না। তার পরও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কী বলল, সেটা বিষয় নয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণতন্ত্র মঞ্চের জ্যেষ্ঠ এক নেতা বলেন, ‘বিএনপি মনে হয় নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে ব্যাপক সিরিয়াস। গত জুলাই থেকে বিএনপির পাঁচ নেতাকর্মী মারাও গেছে। বহু নেতাকর্মী আহত হয়েছে, বহু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এর পরও তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু দলীয় সংসদ সদস্যদের পদ বহাল রেখে রাজপথে কর্মসূচি করে দলটি কী আদায় করতে চায়, তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। এটা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরোধীদের মধ্যে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এ বিষয়টি তাদের পরিষ্কার করা উচিত।’
এদিকে বিএনপির দাবি, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট হয়েছে আগের রাতে। এ অবস্থায় সংসদে বহাল থাকা নিয়ে বিএনপির এমপিদের নানা স্থানে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। দলের নেতাকর্মীরাও বিব্রতকর প্রশ্ন করে বসেন। কেউ কেউ মনে করেন, দল চাইলেও সংসদ থেকে তারা পদত্যাগ করবেন না। এ কারণে দলও এসব এমপিদের চাপ দিতে পারছে না।
বিএনপির ৭ এমপিরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদ, বগুড়া-৬ আসনে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, বগুড়া-৪ আসনে মোশাররফ হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আমিনুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জাহিদুর রহমান জাহিদ ও সংরক্ষিত মহিলা আসনে রুমিন ফারহানা।
এদের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের দুই এমপি নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে তাদের আগাম ‘পদত্যাগপত্র’ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠিয়ে রেখেছেন। তারেক রহমান বললে তারা যে কোনো সময় সংসদ থেকে পদত্যাগ করবেন। ওই দুই এমপির একজন বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য হচ্ছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যখন যে সিদ্ধান্ত নেবেন, আমরা তা মেনে নেব। হয়তো কাউকে কাউকে নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের অবস্থান আমরা স্পষ্ট করে রেখেছি।’
সাত এমপির ‘দ্বিমুখী’ ভূমিকা প্রসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘আমাদের যেসব এমপি জাতীয় সংসদে আছেন, হয়তো তারা মনে করছেন, তারাই কেবল জনগণের ভোটে নির্বাচিত; অন্যরা দিনের ভোট রাতে করে জিতেছেন।’
২০১৯ সালে ২৭ এপ্রিল দলের সিদ্ধান্ত ছাড়াই শপথ নিয়েছিলেন ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের এমপি জাহিদুর রহমান জাহিদ। এ কারণে তার প্রাথমিক সদস্যসহ বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু এর পর ৩০ এপ্রিল শেষ দিনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া দল থেকে নির্বাচিত বাকিরা শপথ নেন। মির্জা ফখরুলের শূন্য আসনে বগুড়া-৬ থেকে উপনির্বাচনে জিএম সিরাজ এমপি হন। তিনিও পরে শপথ নেন। তখন বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, দলের সিদ্ধান্তেই তারা সংসদে গিয়েছেন। তারেক রহমানের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা হয়। যে সমালোচনা এখনো চলছে। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, ওই সময়ে যে সমস্যা ছিল, এখনো তা রয়ে গেছে। কিছু এমপি দলের সিদ্ধান্ত মানলেও অন্যরা নাও মানতে পারেন। এ কারণে চাইলেও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না দলটি।