রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি বাবদ ৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছিল রাশিয়া। এই ঋণ সুদাসলসহ আট কিস্তি পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। ঋণের ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ বা ১০ কোটি ডলার এখনো বকেয়া। ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। এই জটিলতায় রাশিয়াকে ১০ কোটি ডলার ফেরত দিতে পারছে না বাংলাদেশ। সংকট নিরসনে রাশিয়া তাদের নিজস্ব মুদ্রা রুবল ও চীনের ইউয়ানে ঋণ পরিশোধের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশকে। তবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
ইআরডি সূত্র জানায়, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর পর পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা ও বৈশ্বিক লেনদেন ব্যবস্থা সুইফট থেকে রুশ ব্যাংকগুলোকে বের করে দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়া এ প্রস্তাব দেয়। তবে রুবল বা ইউয়ানে পরিশোধের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বাংলাদেশ। প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছে ইআরডি।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি যখন অনুমোদন দেওয়া হয় তখন আইন-কানুনের ওপর ভিত্তি করে কিছু চুক্তিও করা হয়। নতুন করে রুবল বা ইউয়ানে দিলে সেই চুক্তি পুনরায় সংশোধন করতে হবে। রুবল বা ইউয়ানে পরিশোধ করতে হলে পার করতে হবে কয়েকটি ধাপ। এর মধ্যে অন্যতম রুবল বা ইউয়ানও ডলার বিক্রি করে কিনতে হবে। কারণ রুবল বা ইউয়ানের তেমন কোনো শক্ত সোর্স বাংলাদেশের নেই। এছাড়া সব সময় রেট ওঠানামা করে। সেই হিসেবে অনেকটাই স্থিতিশীল ইউএস ডলার। সুতরাং, এতে ক্ষতির সম্মুখীন হবে বাংলাদেশ। এর চেয়ে ডলারে পরিশোধ করা বাংলাদেশের জন্য সুবিধা। কারণ প্রচুর রেমিট্যান্স ডলারে আসে দেশে। এছাড়া এক্সপোর্টও হয় ইউএস ডলারে। এর বাইরে কোনো কারেন্সি পরিশোধ করতে হলে ডলার বিক্রি করে কেনা লাগবে।
ইউয়ান ও রুবলে ঋণ পরিশোধে তিনটি বাধা দেখছে ইআরডি। প্রথমত চুক্তি সংশোধন করতে হবে। চুক্তির আবার কয়েকটা ধারা আছে। প্রথমে চুক্তি করা ছিল রাশিয়াকে ডলারে সুদ ও আসল পরিশোধ করা হবে। এটা পরিবর্তন করে নতুন করে লিখতে হবে রাশিয়াকে ডলার অথবা অন্য কোনো কারেন্সিতে সুদ ও আসল পরিশোধ করা যাবে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে দুটি চুক্তি আছে রাশিয়ার ব্যাংক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ফরেন ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্সের (ভিইবি) সঙ্গে। এই চুক্তিও বাতিল করতে হবে। রাশিয়ার যে ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক এই প্রকল্পের অর্থ লেনদেন করে, সেই রুশ ব্যাংকটি তাদের সঙ্গে আপাতত লেনদেন থেকে বিরত থাকতে বলেছে বাংলাদেশকে। কারণ রাশিয়ার ওই ব্যাংক বৈশ্বিক অর্থ লেনদেনের মাধ্যম সুইফটের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়েছে। সুতরাং, রাশিয়া যেভাবে চাচ্ছে চাইলেই দিতে পারবে না বাংলাদেশ। তৃতীয়ত, রাশিয়ার ঋণের সুদাসল রুবলে পরিশোধের ক্ষেত্রে আরেকটি সমস্যা কয়েক দফা মুদ্রা পরিবর্তনের ফলে যে বাড়তি ব্যয় দাঁড়াবে, তার দায় কে নেবে তা ঠিক হয়নি।