আজ সন্ধ্যা ৬টা থেকে আবারও কারফিউ জারি

উত্তপ্ত সারা দেশ, সংঘর্ষে নিহত ২০

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৪ আগস্ট ২০২৪, ১৬:৫৩

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘অসহযোগ আন্দোলন’কে ঘিরে সারা দেশে সংঘর্ষ-সহিংসতায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। হামলা থেকে রক্ষা পায়নি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়  মেডিকেল কলেজ। হাসপাতালে ভেতরে ঢুকে এম্বুলেন্স, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেয় এবং  সিএমএম কোর্টের ফটকে হামলা ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরও করে আন্দোলনকারীরা। 
রোববার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সংঘর্ষে এই প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে ফেনীতে পাঁচজন, পাবনায় তিনজন, মুন্সিগঞ্জে দুজন, বগুড়ায় দুজন, মাগুরায় দুজন, রংপুরে দুজন এবং ঢাকার সাভার, বরিশাল, কুমিল্লা ও সিরাজগঞ্জে একজন করে নিহত হয়েছেন।
পাবনা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সরকারের পদত্যাগ দাবিতে ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে পাবনা শহর। অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মিছিল থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর চালানো গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন।
রোববার (৪ আগস্ট) পাবনার খেয়াঘাট মোড়ে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মিছিল থেকে গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এসময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩৫ জন। এরপর বিক্ষোভকারীরা এক আওয়ামী লীগ নেতার গাড়ি এরপর গাড়ি পুড়িয়ে দেন।
মুন্সিগঞ্জ
ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে মুন্সিগঞ্জে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। রোববার সকাল পৌনে ১০টা থেকে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবু হেনা জামাল বলেন, সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এদের মধ্যে দুজন মৃত ছিল। তাদের বয়স ২২ থেকে ২৫ বছর। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বগুড়া
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় রোববার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় দুইজন নিহত হয়েছেন। নিহত একজনের নাম মুনিরুল ইসলাম (৩৪)। তিনি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তার বাড়ি কাহালু উপজেলার বীরকেদার এলাকায়। অপরজনের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।  
রংপুর
রংপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সরদার হোমের (লাশ এন্ট্রি করেন) ইনচার্জ মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
বরিশাল
বরিশালে মহানগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি টুটুল চৌধুরীকে রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। স্বজনরা জানান, নগরের করিম কুটির এলাকায় আন্দোলনকারীরা আকস্মিক হামলা চালায়। এ সময় সেখানে থাকা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে আওয়ামী লীগ নেতা টুটুলকে কুপিয়ে ও ইট দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।
বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের চিকিৎসক ও মেডিকেল কলেজের স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সাধারণ সম্পাদক ডা. এ এস এম সায়েম জানান, টুটুলের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। আর আঘাতগুলো এমনভাবে করা হয়েছে যে মাথার খুলির ভেতরে থাকা অনেক কিছুই বাইরে বের হয়ে গেছে। এক কথায় রক্তক্ষরণ ও মাথায় আঘাতের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।
মাগুরা
মাগুরা শহরের ঢাকা রোডে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বীসহ দুজন নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় আহত হয়েছেন তিন পুলিশ সদস্যসহ ১০ জন।  
রোববার (৪ আগস্ট) সকাল ১১টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানায়, সকাল ১১টার দিকে পারনান্দুয়ালী এলাকা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে শহরে ঢুকতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ তাদের ধাওয়া করে রাবার বুলেট ও গুলি নিক্ষেপ করে। এ সময় নিহত হন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী।  
সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জে সংঘর্ষে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। কয়েকঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় শহরের বাজার স্টেশন, এসএস রোড, মুজিব সড়ক, রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
ফেনী
ফেনীতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক। দুপুরে শহরের মহিপালে দফায় দফায় সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ফেনী জেলা সদর হাসপাতালে পাঁচজনের মরদেহ যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সাভার (ঢাকা)
সাভারের আশুলিয়ায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতের পিঠে গুলির চিহ্ন রয়েছে। বিকেল তিনটার দিকে নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেন ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আহমেদুল হক তিতাস।
কুমিল্লা
জেলার দেবিদ্বারে গুলিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। দুপুর দেড়টায় দেবিদ্বার আজগর আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।  
নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক আলী এহসান। তিনি বলেন, রুবেলের মরদেহ শনিবার দেড়টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আনা হয়। আমরা পরীক্ষা করে দেখি তার মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে সরকার আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঢাকাসহ সব বিভাগীয় সদর, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, শিল্পাঞ্চল, জেলা সদর এবং উপজেলা সদরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে একথা জানানো হয়।