বিএনপির সাম্প্রতিক আন্দোলনকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানবিক কারণে সাজা স্থগিত রেখে সরকার খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকার অনুমতি দিয়েছে। তবে বিএনপি যদি বাড়াবাড়ি করে, তা হলে তাকে আবার জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে এক আলোচনাসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ এ সভার আয়োজন করে। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, মোফাজ্জল হোসেন মায়া বীরবিক্রম, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য পারভীন জাহান কল্পনা, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি ও ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলু রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ ও আওয়ামী লীগের উপপ্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ, বয়োবৃদ্ধ। তার বোন, ভাই, বোনের জামাই আমার কাছে এসেছে। আবেদন করেছে।
আমরা তার সাজা স্থগিত করে বাড়িতে থাকার সুযোগটা দিয়েছি। মানবিক কারণেই দিয়েছি। কিন্তু বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে আবার জেলে পাঠিয়ে দেব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দলের জন্ম সেনা শাসকের পকেট থেকে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের দ্বারা যাদের জন্ম, তারা আবার গণতন্ত্র উদ্ধারটা কী করবে? সেটাই আমার প্রশ্ন। বিএনপির গণতন্ত্রের কথা শুনে কিছু লোক তাদের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, এদের জ্ঞান-বুদ্ধি কোথায় থাকে? তারা কি বাস্তবতা বুঝতে পারেন না? আর নেতৃত্ব কোথায়? বিএনপি লাফালাফি করছে, তাদের নেতা কই?
এক/এগারোর সময়ে তারেক জিয়া রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে বিদেশে চলে যায় বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেই যে বিদেশে গেছে, বিদেশেই। তিনি বলেন, বিএনপি এত লম্ফঝম্প করে। তাদের দুই নেতা সাজাপ্রাপ্ত আসামি। দলটি সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে আরেক সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে চেয়ারম্যান বানিয়েছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিএনপি দলের মাথা কোথায়?
নিজের দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা তাদের জিজ্ঞেস করতে পারেন। তোমরা যে এত লাফাচ্ছ, তোমাদের মাথা কই? সবই তো দুর্নীতিগ্রস্ত ও পলাতক আসামি। সাজাপ্রাপ্ত আসামি, দুর্নীতিবাজরা নেতৃত্বে এলে দেশের কী হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে লাশের পর লাশ পড়ে থাকত। টিকা তো দূরের কথা, ওই টিকা কিনতে গিয়ে কত টাকা হাওয়া ভবনে হাওয়া হয়ে যেত, তার ঠিকও নাই। মানুষ না খেয়ে মারা যেত। এমন কোনো শ্রেণি-পেশা নাই, যাদের আমি আর্থিক সহায়তা দিইনি।’
২০১৩, ’১৪ ও ’১৫ সালে বিএনপির হামলার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭০টা সরকারি অফিস জ্বালিয়ে দিয়েছে। ছয়টা ভূমি অফিস পুড়িয়ে দিয়েছে। যখন ভূমি অফিস জ্বালাল, আমি নির্দেশ দিলাম, যেখানে অফিস জ্বালিয়েছে, সেখানে বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে তাদের ভূমির পর্চা না দেওয়ার জন্য। ওই ভূমি সব সরকারি খাতে চলে যাবে। তারপর তারা থেমেছে। যেমন কুকুর, তেমন মুগুর না হলে সোজা হয় না।’
বিএনপি আমলের অত্যাচার ও নির্যাতনের কথা মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন তিনি। একই সঙ্গে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-গুলো তুলে ধরার জন্য বলেন।