আওয়ামী লীগ রিজার্ভের টাকা গিলে খেয়েছে

ফরিদপুর বিভাগীয় গণসমাবেশে মির্জা ফখরুল
ফরিদপুর সংবাদদাতা
  ১৩ নভেম্বর ২০২২, ১১:২৮

আওয়ামী লীগ সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা গিলে খেয়েছে। তারা এমন কোনো খাত নেই, যেখান থেকে লুটপাট করেনি।Ñ ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে গতকাল শনিবার এমন অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি আরও বলেছেন, আমরা এমন বাংলাদেশ দেখতে চাইনি। আমরা চাইনি আমাদের ছেলেরা পড়াশোনা শেষ করে হকারি করবে, মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করবে, ভালো চাকরির ব্যবস্থা তাদের হবে না। 
ফরিদপুরের কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউট মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। অবিলম্বে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। নইলে আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো হবে। বিএনপি মহাসচিব জোর দিয়ে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না; হতে দেওয়া হবেও না।
বিকাল সাড়ে চারটায় শুরু হয় বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য। প্রায় আধা ঘণ্টা ব্যাপ্তির এ বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, সারা দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে এখন আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। 
ক্ষমতাসীন দলের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা সংবিধানের দোহাই দিয়ে বলেনÑ সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। এমন দোহাই দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন বন্ধ করা যাবে না। আমাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ওবায়দুল কাদের বলেন যে, আওয়ামী লীগ নাকি গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছে। তার কথা শুনে ঘোড়াও হাসে। এটা ভূতের মুখে রাম নাম। প্রশ্ন করি, আপনাদের কাছে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কী? আপনাদের গণতন্ত্র মানে কি এই যে, অন্য কাউকে কিছু বলতে দেব না? তিনি যোগ করেন, আওয়ামী লীগ দেশের আলেম-ওলামাদের পর্যন্ত হয়রানি করছে। তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে ঢোকাচ্ছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে চার বছর ধরে জেলে রেখেছে। জোর করে, খুন করে, গুম করে ক্ষমতায় থাকা যাবে না। আওয়ামী লীগ মনে করেÑ এ দেশ তাদের বাবার দেশ, দেশের আর সবাই চাকরবাকর। 
রাজবাড়ী মহিলা দলের নেত্রী সোনিয়া আখতার স্মৃতিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তার অপরাধ কী? তিনি একটা পোস্ট শেয়ার করেছিলেন। রাত ২টার সময় তার দুই শিশুকে অসহায় অবস্থায় রেখে পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে গেছে। সে নাকি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে কটুবাক্য বলেছে। 
আবার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল। বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে আপনারা (আওয়ামী লীগ) হত্যা করা শুরু করেছেন। আমরা আর সহ্য করব না, রুখে দাঁড়াব। গণসমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তরুণদের জেগে উঠতে হবে, সব মানুষকে জেগে উঠতে হবে, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের এক দফা এক দাবিÑ এ সরকারের পদত্যাগ। এ ফয়সালা হবে রাজপথে।
ফরিদপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এএফএম কাইয়ুম জঙ্গীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বিভাগীয় (সাংগঠনিক বিভাগ) গণসমাবেশের প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ফরিদপুরের মাটিতে আজকের এ গণজোয়ার দেখে ভালো লাগছে। গণজোয়ার দেখে ক্ষমতাসীন দল এতটাই ভয় পেয়েছে যে, তারা আকাশপথ, স্থলপথ ও জলপথ বন্ধ রেখেছে। ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে। যানবাহনের ধর্মঘট ডেকেছে। তারা জোরপূর্বক দোকানপাটও বন্ধ করে দিয়েছে। তাতে কোনো লাভ হয় নাই। এই দেশের মানুষ বিএনপিকে ভালোবাসে। এত বাধাবিপত্তি সৃষ্টি করেও বিএনপির নেতাকর্মীদের দমানো যায়নি।
ফরিদপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজ ও জেলার সদস্য সচিব একেএম কিবরিয়া স্বপনের পরিচালনায় গণসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল হক শাহজাদা, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সারোয়ার, ডা. রফিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁঁইয়া, সেলিমুজ্জামান সেলিম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মো. আবু জাফর, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছা, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এসএম জিলানী, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার আলী, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, চৌধুরী নায়াব ইউসুফ, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, জাসাস নেতা হেলাল খান, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন, সাইফুল ইসলাম পটু প্রমুখ।
বেলা ১১টায় কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে এ গণসমাবেশ শুরু হয়। বেলা ২টার দিকে সভাবেশস্থলে উপস্থিত হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। সমাবেশ শুরুর অনেক আগেই আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউটের মাঠ ছাড়িয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের উভয়পাশে তিন কিলোমিটার দূর পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। সমাবেশ মঞ্চে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্মানে দুটি চেয়ার রাখা হয়। ফাঁকা এ দুটি চেয়ারে রাখা হয় তাদের দুজনের ছবি।