জরুরি বিভাগে ভাঙচুর ও চিকিৎসকদের মারধর

এবার সারা দেশে চিকিৎসকদের ‌‌‌‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা

ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ 
ডেস্ক রিপোর্ট
  ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৪৯
আপডেট  : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩:৩৬

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে ডাক্তারদের ওপর হামলার ঘটনায় নিরাপদ কর্মস্থলের দাবিতে আজ দুপুর দুইটা থেকে সারা দেশে ডাক্তাররা কর্মবিরতি তথা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করেছে।  
রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক গেটে ডা. আবদুল আহাদ এই ঘোষণা দেন।
এ সময় তিনি জানান, দুপুর ২টায় বাগান গেটে নিজেদের দাবি নিয়ে ব্রিফ করবেন তারা। এ সময় সেখানে গণজমায়েত ডাকা হয়েছে বলেও জানান ডা. আবদুল আহাদ। তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন নার্সরাও।
ডাক্তারদের দাবির মধ্যে রয়েছে- অপরাধীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ঢামেকসহ সারা দেশের হাসপাতালে আর্মিসহ সিকিউরিটি ফোর্স নিযুক্তকরণ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে স্বাস্থ্য পুলিশ নিয়োগ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
তারা বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল অপারেশনসহ সব চিকিৎসকদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’। এর দায়ভার চিকিৎসকদের ওপর না, প্রশাসনের ওপর বর্তাবে। কারণ তারা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন এবং কাজে ফিরলেও প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে পারেনি।

ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ 
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। গতকাল শনিবার জরুরি বিভাগে ভাঙচুর ও চিকিৎসকদের মারধরের ঘটনায় সেবা বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
আজ রোববার সকাল থেকেই নিরাপত্তাহীনতায় কারণে জরুরি বিভাগের চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেন তাঁরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আব্দুর রহমান আজ বেলা ১১টার দিকে প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।  
মোহাম্মদ আব্দুর রহমান বলেন, আজ সকাল থেকে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা নিরাপত্তাহীনতার কারণে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রেখেছেন। গতকাল একদল বহিরাগত এসে সমস্যা সৃষ্টি করে। তাঁরা অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে চিকিৎসকদের বের করে নিয়ে এসে মারপিট করে।  
গতকাল শনিবার নিউরো সার্জারি বিভাগের তিন চিকিৎসককে মারপিটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চিকিৎসকেরা দোষীদের সিসি টিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দেন। অন্যথায় ২৪ ঘণ্টা পর তারা কর্মবিরতিতে যাবেন বলে ঘোষণা দেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল হট্টগোল হয়। মৃত শিক্ষার্থীর নাম আহসানুল ইসলাম (২৫)। আহসানুল বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে ঢামেকের এক চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঢামেকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, বিইউবিটির শিক্ষার্থী আহসানুল ইসলাম শুক্রবার রাত ১০টার দিকে মোটরসাইকেলে করে তাঁর এক বন্ধুকে বিমানবন্দরে নামিয়ে দিয়ে মিরপুরে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন। আশপাশের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। গতকাল সকালে তিনি মারা যান।
পুলিশ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া গতকাল রাতে  বলেন, বিইউবিটির শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর জানার পর তাঁর সহপাঠী ও আত্মীয়স্বজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। পরে চিকিৎসকদের অবহেলায় ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ তোলেন। এ নিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হট্টগোল শুরু হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে চিকিৎসক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈঠক হয়।
জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান গত রাতে বলেন, বিইউবিটির শিক্ষার্থী আহসানুল ইসলাম গুরুতর জখম হয়েছিলেন। তাঁর চিকিৎসায় কোনো অবহেলা ছিল না। তবে শিক্ষার্থী এবং চিকিৎসকদের মধ্যে হট্টগোল হয়। পরে শিক্ষার্থী এবং চিকিৎসকদের নিয়ে তিনি বৈঠক করেছেন।
আজ সকালে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি নিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।