শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে গাজীপুরে ক্রমাগত শ্রমিক অসন্তোষ লেগেই আছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, দাবি আদায়ে নিত্যনতুন ইস্যু তৈরি করে মালিক পক্ষকে চাপ দিচ্ছেন শ্রমিকরা। শ্রমিকদের অভিযোগ, মালিকরা সরকারের পক্ষাবলম্বন করে শ্রমিকদের অধিকার বঞ্চিত করে আসছে বছরের পর বছর। এখন বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে তারাও তাদের দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। তাদের এসব দাবি অনেক পুরোনা। এখন নতুন করে দাবি সামনে আনা হয়েছে।
অনেকে শিল্পখাত অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে বলেও শিল্প মালিকরা অভিযোগ করেন। নানান কারণে এসব অসন্তোষ থামাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হতে পারছে না বলেও জানিয়েছেন তারা।
নিয়োগে সমঅধিকার চান পুরুষ শ্রমিকরা
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়াসহ বিভিন্ন স্থানে কারখানায় পুরুষ শ্রমিক নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেন পুরুষ শ্রমিকরা। তাদের দাবি, বিভিন্ন কারখানায় কেবল নারী শ্রমিকদের চাকরি দেওয়া হয়। পুরুষ শ্রমিকদের চাকরি দেওয়া হয় না। তারা সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নারীদের পাশাপাশি পুরুষ শ্রমিকদেরও চাকরি দেওয়ার দাবি জানান।
চাকরিচ্যুত শ্রমিক আবুল বাশার বলেন, তিনিসহ আরও বেশ কয়েকজন একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। তুচ্ছ ঘটনায় সাতজনের চাকরি চলে যায়। পরে জানতে পারেন ওই সাতজন পুরুষের স্থানে সাতজন নারী শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এমন নানান অজুহাতে পুরুষ শ্রমিকদের বাদ দিয়ে নারী শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এতে পুরুষ শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্যের সৃষ্টি করা হচ্ছে।
নিত্য নতুন ইস্যু নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ, নিষ্ক্রিয় পুলিশ
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারখানা মালিক অভিযোগ করেন, নানান অজুহাতে কিছু সংখ্যক শ্রমিক কারখানাগুলোতে পরিকল্পিতভাবে অসন্তোষ সৃষ্টি করছে। অযৌক্তিক দাবি নিয়ে মালিকদের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। আমরা পুলিশ ডেকেও যথা সময়ে পাচ্ছি না। বিশৃঙ্খলার কারণে আমাদের উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। সঠিক সময়ে পণ্যের অর্ডার সরবরাহ করাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তিনি এ অবস্থার দ্রুত অবসান চান।
বিএনপি সমর্থক এক শিল্প মালিক বলেন, ১৫ বছর ধরে যেসব দাবি আমরা শুনিনি এখন সেসব দাবি করা হচ্ছে। আমার কারখানায় আমি পুরুষ শ্রমিক নেব না নারী শ্রমিক নেব সেটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। এখন এখানেও বৈষম্যের কথা বলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে পরাজিত অপশক্তির ইন্ধনে একটি চক্র এসব অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। এদের প্রতিহত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে হবে। তা না হলে শিল্পে উৎপাদন কমে যাবে।
তবে এসব বিষয়ে শিল্প ও থানা পুলিশ বলছে, কারখানার মালিক ও শ্রমিক পক্ষের দাবি-দাওয়া তাদের দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারে। এখানে শিল্প পুলিশ মধ্যস্থতা করতে পারে। তবে আইনশৃঙ্খলা অবনতি হলে সেটা পুলিশ দেখে। মহাসড়ক অবরোধের ফলে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলেও পরিবর্তিত সময়ে এখন পুলিশ কোনো অ্যাকশনে যেতে পারছে না।
ওষুধ তৈরি কারখানার শ্রমিকদের ২১ দফা দাবি
২১ দফা দাবিতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর এলাকায় স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড নামের ওষুধ তৈরি কারখানার শ্রমিকরা গত বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে টায়ার ও আবর্জনায় আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন।
কারখানার শ্রমিকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে বৈষম্য করে আসছে। এসব বৈষম্যের প্রতিবাদে এবং ২১ দফা দাবিতে তারা আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
শ্রমিকদের দাবিগুলো হচ্ছে- অফিস চলাকালীন এবং অফিসে যাতায়াতকালীন যদি কোনো কর্মী দুর্ঘটনার শিকার হয় তাহলে তার সম্পূর্ণ চিকিৎসা খরচ কোম্পানি বহন করবে। সঙ্গে ওই কর্মীকে কোম্পানির এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। কারখানার এইচআরডি এজিএম সুরজিৎ মুখার্জি এবং প্রোডাকশন সিনিয়র ম্যানেজার দিপালক কর্মকার, সিনিয়র ম্যানেজার জাহিদুর রহমান, এইচ আর ডি সাম্মি আক্তার ও রুহুল আমিনকে পদত্যাগ করতে হবে। ছুটির জন্য হয়রানিমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে। নন-ম্যানেজমেন্ট কর্মীদের সঙ্গে সর্বদা সহনশীল সদাচরণ করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের কোনো কর্মীকে পরবর্তীসময়ে কোনো প্রকার হয়রানি বা চাকরিচ্যুত করা যাবে না। কোনো প্রকার বৈষম্যমূলক এবং অপমানজনক শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ করা যাবে না। এছাড়া কর্মীদের সঙ্গে সিকিউরিটি গার্ডদের উত্তম আচরণ করতে হবে। প্রতি দুই বছর পর পর সব পার্মানেন্ট কর্মীদের গ্রেড উন্নয়ন করতে হবে। মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করতে হবে। সঙ্গে ছুটিকালীন সময়ে সম্পূর্ণ বেতন এবং ভাতা প্রদান করাসহ ২১ দফা দাবি জানানো হয়।
কারখানার শ্রমিক সফিকুল ইসলাম বলেন, দাবিগুলো আগে থেকেই ছিল কিন্তু আগে আমরা কথা বলতে পারিনি। এখন সময় এসছে এসব নিয়ে কথা বলার। তাই দাবি আদায়ে রাস্তায় নেমেছি।
ওই কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের এজিএম সুরজিৎ মুখার্জি জানান, শ্রমিকদের দাবি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
একই দিন প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ, বেতন বৃদ্ধি ও চাকরি স্থায়ীকরণসহ ১৬ দফা দাবিতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কারলসুরিচালা এলাকায় জেনারেল ওষুধ তৈরি কারখানায় শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেন। তারা সফিপুর-বড়ইবাড়ি আঞ্চলিক সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন।
কারখানার শ্রমিক ইকবাল হোসেন জানান, উপজেলার কারলসুরিচালা এলাকার জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড কারখানায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে প্রতি মাসেই টালবাহানা করে বিলম্ব করে আসছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের বেতনও বৃদ্ধি করা হচ্ছে না। সবমিলিয়ে ১৬টি দফা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে সকালে শ্রমিকরা কারখানায় কাজে যোগ না দিয়ে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে সফিপুর-বড়ইবাড়ি আঞ্চলিক সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
কারখানা শ্রমিক রহিমা খাতুন বলেন, আমাদের বেতন কোনো মাসেই সঠিক সময়ে দেয় না। বেতন নিয়ে নানা টালবাহানা করে। আমাদের বাসাভাড়া দিতে হয়, দোকানে বাকি পরিশোধ করতে হয়। সেগুলো সময় মতো দিতে না পেরে তাদের কথা শুনতে হয়। আমাদের বেতন বাড়াতে হবে। ছাত্র আন্দোলনের সময় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ছুটির সময়ের বেতন দিচ্ছে না।
কারখানার সহকারী ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, শ্রমিকদের দাবি দাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা হবে।
এ বিষয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক নিতাই চন্দ্র বলেন, শ্রমিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে মালিকদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। কারখানার মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে সমঝোতা করে কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়া চালু রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এলাকার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য শিল্প পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে।
বর্তমান ও চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া
অপরদিকে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে সোমবার বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের কারণে ১১টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন সময়ে ওইসব কারখান থেকে যেসব শ্রমিক চাকরিচ্যুত হন তারা এ ভাঙচুর করেছেন বলে জানিয়েছেন ওইসব কারখানার শ্রমিক ও কর্মকর্তারা।
নিত্য নতুন ইস্যু নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ, নিষ্ক্রিয় পুলিশ
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকালে নিজ নিজ কারখানায় কাজে যোগ দেন টঙ্গীর বিসিক এলাকার সব পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চাকরিচ্যুত কয়েকশ শ্রমিক কয়েক ধাপে ১১টি পোশাক কারখানার গেটে অবস্থান নেন। কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিতে আহ্বান জানান তারা। এ সময় কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা তাদের ডাকে সাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা ওই ১১টি কারখানায় ভাঙচুর চালান। নিজ কারখানায় ভাঙচুর ঠেকাতে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। পরে ভাঙচুর এড়াতে ওই কারখানাগুলোতে ছুটি ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ সময় চাকরিচ্যুত অন্তত দুজন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
ছুটি ঘোষণা করা কারখানাগুলো হলো- টঙ্গীর বিসিক এলাকার লিমিটেড টসি নিট ফেব্রিক্স লিমিটেড, ন্যাশনাল কম্পোজিট লিমিটেড, পেট্রিয়ট ইকো অ্যাপারেল লিমিটেড, বেলিসিমা অ্যাপারেল্স লিমিটেড, জিন্স এন্ড পোলো লিমিটেড, টেঙ্গন গার্মেন্টস লিমিটেড, রেডিসন গার্মেন্টস লিমিটেড, সুমি অ্যাপারেলস লিমিটেড, আরবিএস গার্মেন্টস লিমিটেড, গার্ডেন টেক্সটাইল লিমিটেড ও তাজকিয়া অ্যাপারেলস লিমিটেড।
দুপুর ২টার দিকে কারখানাগুলোতে ছুটি ঘোষণা করলে চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা টঙ্গীর বিসিক এলাকার পানির ট্যাঙ্কি এলাকার শাখা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। বিকেল ৩টা পর্যন্ত চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা সেখানে অবস্থান করেন। এতে ওই সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
চাকরিচ্যুত শ্রমিক মো. রমজান হোসেন বলেন, কারখানাগুলোতে চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। বিভিন্ন কারখানার চাকরিতে থাকা শ্রমিকদের আমাদের আন্দোলনের যোগ দেওয়ার আহ্বান জানালেও আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়নি। আমরা সড়কে বসে অবস্থান করছি। দাবি না মেনে নিলে কোনো গার্মেন্টসে শ্রমিকদের ঢুকতে দেওয়া হবে না।
তাজকিয়া অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (মানবসম্পদ) হেমায়েত উদ্দিন বলেন, সকালে বহিরাগতরা কারখানার সামনে জড়ো হয়ে কারখানার প্রধান ফটকে ভাঙচুর চালায়। ভাঙচুর ও ক্ষতি এড়াতে কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছি।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোশারফ হোসেন বলেন, চাকরিতে বৈষম্য ও পুরুষ শ্রমিকদের নিয়োগে অগ্রাধিকারের দাবি জানিয়ে কয়েকশ চাকরিচ্যুত শ্রমিক ১১টি কারখানায় ভাঙচুর চালায়। বিক্ষুব্ধরা টঙ্গীর বিসিকের একটি সড়কে অবস্থান নেন।
তিনি বলেন, গাজীপুরে বেতন-ভাতা দিতে দেরি হওয়াসহ নানা অভিযোগে কারখানার শ্রমিকরা সড়কে নেমে আসেন। তাদের আমরা বুঝিয়ে শুনিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিই। মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে সমন্বয়ের চেষ্টা করি। এখন নতুন নতুন অনেক ইস্যু নিয়ে শ্রমিকরা আন্দোলন করছে।
লাঠি হাতে চাকরি দাবি, ষড়যন্ত্র বলছেন শ্রমিক নেতারা
৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা। সাভারের ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকার (ডিইপিজেড) পুরোনো জোনের প্রধান ফটকের সামনে দেখা যায় বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের জটলা। এগিয়ে যেতেই শোনা যায় চাকরির দাবিতে বিক্ষোভ করছেন তারা। মোবাইল বের করতেই বাধা আসে। মোবাইল পকেটে রাখার নির্দেশ আশে বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে। সঙ্গে উচ্চারিত হয় তাদের কঠোর হুঁশিয়ারি। পরিস্থিতি বুঝে কিছুটা নিরাপদ স্থানে যাওয়া।
দূর থেকে দেখা যায়, কেউ কেউ ডিইপিজেডের ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে কঠোর অবস্থানে নিরাপত্তাকর্মীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
আন্দোলকারী একজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে নাম-পরিচয় জিজ্ঞেস করতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উশৃঙ্খল আচরণ শুরু করেন। তার সঙ্গে যোগ দেন আরও কয়েকজন। ততক্ষণে আন্দোলনকারীরা নবীনগর-চন্দ্রা সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ শুরু করেন। সংবাদকর্মী পরিচয় পেয়ে দু-তিনজন ওই স্থান ত্যাগ করেন। যাদের বয়স অনুমান ১৪ থেকে ১৭।
সেখানেই কথা হয় একজনের সঙ্গে। নাম-পরিচয় জানতেই কিছু সময় নীরব থেকে বলেন, আলমাস।
দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরুষ মানুষের চাকরি নেই পোশাক কারখানাগুলোতে। নারীদের শুধু চাকরি হয়। আজ তারা চাকরির জন্য আন্দোলন করছেন।
চাকরি নিতে হলে সিভি কিংবা বেশ কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। এসব এনেছেন কি না এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, কাগজপত্র বাসায় আছে। লাগলে এনে দেওয়া যাবে। পরে ব্যস্ততা দেখিয়ে তিনি সটকে পড়েন।
প্রশ্ন জাগে আসলেই কি ন্যায্য দাবি আদায়ে নেমেছেন তারা, নাকি অন্য কোনো কিছু? উত্তর খুঁজতে জাগো নিউজ কথা বলে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে। তাদের দাবি, অন্য সময় শ্রমিক আন্দোলনে যে আচরণ দেখা যায়, এবার একটু ভিন্ন। সবাই খুবই মারমুখী।
খবর পাওয়া যায় জামগড়া, জিরাবোসহ আশপাশের পোশাক কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। নাশকতার আতংকে ছুটি ঘোষণা করা হয় শিল্পাঞ্চলের অন্তত ৩০টি পোশাক কারখানা। এ সময় আন্দোলনকারীদের লাঠিসোঁটা বহন করারও খবর পাওয়া যায়৷
কেন এমন আন্দোলন আর কারা করছেন এমন পোশাক খাতে বিশৃঙ্খলা। তা জানতে কথা হয় শ্রমিক নেতা অরবিন্দ ব্যাপারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, যারা আন্দোলন করছে তারা শ্রমিক না। তাদের আচার-আচরণে মনে হচ্ছে তারা কোনো একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছে। বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই এমন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তারা।
তিনি আরও বলেন, চাকরি নিতে এলে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। তারা কোনো নিয়মের ধার ধারছে না। কথায় কথায় চালাচ্ছে বিক্ষোভ, কোথাও কোথাও করছে ভাঙচুর। যাতে পুরো শিল্পাঞ্চলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।
‘যারা আন্দোলন করছে তারা শ্রমিক না। তাদের আচার-আচরণে মনে হচ্ছে তারা কোনো একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছে। বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই এমন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তারা’
আরেক শ্রমিক নেতা খায়রুল মামুন মিন্টুর বক্তব্যও প্রায় একই। তিনিও মনে করেন, একটি গোষ্ঠী পোশাক খাত নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। কোথাও কোথাও ঝুট ব্যবসায়ী, কারখানার মালিক কর্তৃপক্ষও জড়িত। তিনি খাতটিকে বাঁচাতে এখনই কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন সরকারকে।
আসলেই কি ডিইপিজেডে নারী-পুরুষ শ্রমিক নিয়োগে বৈষম্য আছে? তা জানতে বেপজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সূত্র জানায়, ঢাকা ইপিজেডে মোট ৭৯ হাজার ৫৮৮ জন শ্রমিক কাজ করেন। যার মধ্যে নারী শ্রমিক ৪০ হাজার ৮১৮ জন ও পুরুষ শ্রমিক ৩৮ হাজার ৭৭০ জন। যার শতকরা হারে নারী ৫১ শতাংশ ও পুরুষ ৪৯ শতাংশ।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বেপজার নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) আনোয়ার পারভেজের সঙ্গে। তিনি জানান, বিক্ষোভ প্রদর্শনকারী কথিত চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে বেপজার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা, সহনশীলতা ও সহানুভূতির সঙ্গে সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে কিছু গ্রুপের সঙ্গে যখন কথা বলা হচ্ছে পেছনেই আরেকটা গ্রুপ আগেই মানি না বলে স্লোগান দিচ্ছে। একেক গ্রুপ একেক সময় একেক বক্তব্য উপস্থাপন করছে। শুধু তাই নয়, চাকরিপ্রার্থী বিক্ষোভকারীদের অনেকের কাছেই সিভি চাইলে দেখা যাচ্ছে তারা সিভি না দিয়ে পেছনে চলে যাচ্ছে।
‘ঝুট ব্যবসায়ী, কারখানার মালিক কর্তৃপক্ষও জড়িত রয়েছে। পোশাক খাতটি বাঁচাতে এখনই কঠোর হতে হবে সরকারকে’
বর্তমানে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যখন দেশে সবক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে তখনই চাকরিপ্রত্যাশীদের এই আন্দোলন ইপিজেডের স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ ব্যাহত করছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
বিষয়টি নিয়ে আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারওয়ার আলম বলেন, চাকরির দাবিতে বিক্ষোভের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।