জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ও সরকারি ব্রজমোহন কলেজের (বিএম) শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৮৪ জনকে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) ভর্তি করা হয়।
সংঘর্ষ চলাকালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএম কলেজের চারটি বাস ভাঙচুর করে উভয় গ্রুপ। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী মো. ধলু বলেন, ‘মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২টার দিকে নগরীর বটতলা এলাকায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে আটকে চাঁদাবাজ দাবি করে বেদম মারধর করা হয়। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুটি বাস ভরে ঘটনাস্থলে আসেন। সেখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগে থেকে ওত পেতে থাকা বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাস ভাঙচুর করে। এ সময় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়তে চাইলে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে বটতলা, মুন্সি গ্যারেজ ও বিএম কলেজের সম্মুখ সড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।’
সে সময় বিএম কলেজের গাড়ির গ্যারেজে অবস্থানরত হেলপার মো. রেজাউল বলেন, ‘হঠাৎ করে গাড়ির ওপর ইটের আঘাতের আওয়াজ পাই। এরপর সেখান থেকে ডাক-চিৎকার দিয়ে বের হই। তখন সামনে দেখতে পাই অসংখ্য তরুণ বয়সী ছেলেরা গ্যারেজের গেট ভাঙছে। একই সঙ্গে গ্যারেজের সামনে ট্রাকভর্তি ইট থেকে গাড়ির ওপর নিক্ষেপ করছে। নিজের জীবন বাঁচাতে দ্রুত সেখান থেকে সটকে পড়ি এবং রুমের খাটের নিচে অবস্থান নিই। এরপর অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে শিক্ষক এবং গাড়িসংশ্লিস্ট সকলকে মোবাইল করে বিষয়টি জানাই।’
ভাঙচুর করা হয় দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চারটি বাস (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন)
ঘটনাস্থলে থাকা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চার্লস শোভন বাড়ৈ জানান, তাদের দুই শিক্ষার্থীকে বটতলা এলাকায় আটকে রাখার খবর পেয়ে তারা দুটি বাসযোগে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা ইট নিক্ষেপ করে গাড়ি ভাঙচুর চালায়। এরপর লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় তাদের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। প্রতিরোধ গড়তে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে।
শোভন আরও জানান, সংঘর্ষ চলাকালে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে। এরপর তাদের ছাড়িয়ে আনতে শিক্ষকদের শরণাপন্ন হন। পরে উভয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা একত্রিত হয়ে ওই শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে আনেন এবং শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে বিষয়টি সমাধানের লিখিত প্রতিশ্রুতিতে প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা স্বাক্ষর করেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডীন ড. মোহাম্মদ শফিঊল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে আমাদের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহতদের মঙ্গলবার রাতেই শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার সমাধানের ব্যাপারে উভয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানগণ লিখিত আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন। শিক্ষার্থীরা সুস্থ হওয়ার পর তাদের কাছ থেকে বিষয়টি ভালোভাবে জেনে এরপর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সরকারি বিএম কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. আমিনুল হক বলেন, ‘দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আটকে পড়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থীকে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের হাতে সুস্থ অবস্থায় তুলে দেওয়া হয়।’ একই সঙ্গে তিনি গাড়ি ভাঙচুরসহ বিএম কলেজের আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয়ভার বহনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। শিক্ষার্থীরা সুস্থ হওয়ার পর তাদের নিয়ে একটি বৈঠক করে সকল বিষয়ে সমাধান করা হবে বলে জানান তিনি।
কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে বিএম কলেজ সমন্বয়ক মোস্তাফিজুর রহমান রাফিকে মারধর করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে রাত ১১টার দিকে বটতলা এলাকায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হামলা ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। কোনও পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি।’
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে নগরীর ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসনুভা চৌধুরী জোয়ার পরিবারের বাড়ি দখল করতে হামলা চালায় বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় জোয়ার মাকে হেনস্তা করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন করেন। এর জের ধরেই রাতে ঘটে সংঘর্ষের ঘটনা।