রাশিয়ার সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি অব্যাহত রাখতে বিকল্প পথে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  ২৬ নভেম্বর ২০২২, ১২:৫৬

গত ১০ মাসে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য কমে গেছে। রাশিয়ার সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি অব্যাহত রাখার বিকল্প উপায় খোঁজা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সরকার একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার কথা বিবেচনা করছে। 
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, পশ্চিম ও তার সহযোগীরা রাশিয়াকে সুইফট পেমেন্ট নেটওয়ার্ক থেকে নিষিদ্ধ করায় রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে রাশিয়া বাংলাদেশকে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বাণিজ্য পুনরায় শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছিল। সে প্রস্তাব বাস্তবায়নে যদিও অনেক দেরি হয়েছে, তবে সরকার এখন রাশিয়ার প্রস্তাবটি নিয়ে নতুন করে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।  
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাশিয়ার অর্থনীতির ওপর পশ্চিমাদের বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও পোশাকসহ বাংলাদেশি পণ্যের সরাসরি চালান নিশ্চিত করতে রুবেল টাকায় রূপান্তরের সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আমরা সহযোগিতা চেয়েছি।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ইতিমধ্যে এই দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও মুদ্রা লেনদেনের সমস্যা কাটিয়ে ওঠার বিষয়ে কাজ করছে।
রাশিয়ান রুবেলকে স্থানীয় মুদ্রা টাকায় রূপান্তর করা এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে লেনদেন করার মতো বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগের অগ্রগতি নিয়ে আন্তঃসরকারি যৌথ কমিশনের বৈঠকে আলোচনা করা হবে বলে তিনি জানান।
বিদ্যমান অবস্থায় দু’দেশের মধ্যে অনলাইন বাণিজ্যের বিষয়ে তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরামর্শের পর অনলাইন ট্রেডিং বাস্তবায়ন করা হবে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা সবাই মনে করে খাদ্য সরবরাহ বাড়ানো গেলে নিত্যপণ্যের দাম কমে আসবে।
তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক এ ধরনের একটি প্ল্যাটফর্ম চালু করার আগে একটি ক্রস বর্ডার বাণিজ্য নীতি তৈরির ওপর জোর দিয়েছে। ইলেকট্রনিক প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা শুরু হলে রাশিয়া থেকে গম, ভুট্টা এবং সূর্যমুখী তেলের আমদানি বাড়বে।
ওই কর্মকর্তা জানান, খাদ্য সরবরাহ বাড়লে নিত্যপণ্যের দাম কমবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে রপ্তানি আয়ও বাড়বে। হিমায়িত খাদ্য, নিটওয়্যার, পাটজাত পণ্য এবং চিংড়িসহ বিভিন্ন পণ্য রাশিয়ায় রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে, সরকার রাশিয়ান ফেডারেশনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত দ্বিপাক্ষিক ‘রোডম্যাপ-২০২২-২০২৫’-এর অধীনে একটি প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করতে চায়। রোডম্যাপের লক্ষ্য ইলেকট্রনিক ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্রেতা বা সরবরাহকারীদের খুঁজে পেতে সম্পর্কিত পরিষেবাগুলো যোগ করা। এই অনলাইন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মগুলো কম্পিউটার সফটওয়্যার গ্রোগ্রামের ওপর নির্ভর করবে।
মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বা সরাসরি অংশগ্রহণকারীদের বা ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন পণ্য লেনদেন করা যেতে পারে। এটি স্টক, বন্ড, মুদ্রা, পণ্য এবং অন্যান্য পণ্য ক্রয় ও বিক্রয় করতে পারবে। ব্যাংক, বাজার এবং স্টক এক্সচেঞ্জগুলো মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করবে। ব্যবহারকারীরা এই প্ল্যাটফর্মের যেকোনো স্থান থেকে অনলাইন চ্যাটিং এবং টেলিফোন ট্রেডিং করতে পারবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে এর আগে স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ-রাশিয়া আন্তঃসরকারি বাণিজ্য কমিশন, অর্থনীতি, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন প্রোটোকলের অধীনে রাশিয়া সরকার এই রোডম্যাপ তৈরি করেছে। এর আগে, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার জন্য ২৯টি সেক্টর চিহ্নিত করে একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছিল।
সূত্র জানায়, রোডম্যাপ অনুসারে ইলেকট্রনিক ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম এবং ব্যবসায়িক সরবরাহকারীদের সন্ধানের জন্য ব্যবহৃত বিশেষ অংশীদার পরিষেবাগুলোর মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের জন্য একটি প্রোগ্রাম তৈরি করা হবে। কারণ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সরাসরি ব্যাংকিং লেনদেনে নানা জটিলতার কারণে রপ্তানি কাঙ্খিত মাত্রায় বাড়ছে না।
রাশিয়ার ওপর সুইফটসহ একাধিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে, মস্কো বকেয়া আমদানি-রপ্তানি বিল পরিশোধের জন্য একটি বিকল্প ব্যবস্থা খোঁজার চেষ্টা করছে। কারণ একটি অবাধ ও নিরাপদ বাণিজ্য ব্যবস্থা না থাকলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ক্ষতিপ্রস্থ হয়।
বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রাশিয়ায় ৬৬৫.৩ মিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। একই সময়ে সেখান থেকে ৪৬৬.৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছিল। আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছে গম, ভুট্টা, সূর্যমুখী তেল এবং অন্যান্য খাদ্যশস্য।