২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো অত্যাচার করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, তারা (বিএনপি) ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে কত মেয়েকে নির্যাতন করেছে? দেশের এমন কোনো জায়গা নেই তারা অত্যাচার করেনি। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো অত্যাচার করেছিল।
মহিলা আওয়ামী লীগের ৬ষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা একথা বলেন। শনিবার বিকালে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপি ক্ষমতায় এসে কী করে সেই প্রশ্ন তুলে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগই একমাত্র ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়ন করে। আমরাই দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করি।’
বিএনপিকে হুঁশিয়ার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা আন্দোলন সংগ্রাম করেন, মিছিল মিটিং করেন। কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু কোনো মানুষকে পুড়িয়ে মারার বা বোমা মারার বা গ্রেনেড মারার বা এ ধরনের অত্যাচার হলে একটাকেও ছাড়ব না। এটা হলো বাস্তব কথা।’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ওপর যে আঘাত দেওয়া হয়েছে আমরা তা ভুলিনি। আমরা সহ্য করছি, সহ্য করাটা আমাদের দুর্বলতা ভাবার কারণ নেই। দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে। আমাদের সঙ্গে আছে। খুনিদের সঙ্গে নেই।’
বিএনপির আন্দোলনে সরকার বাধা দিচ্ছে না দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু যেভাবে তারা ওই অত্যাচারগুলো করেছিল আমরা ভুলব কীভাবে? সাধারণ মানুষ ভুলবে কীভাবে? তার ওপর তাদের অগ্নিসন্ত্রাস, এটা কোনো মানুষের কাজ? জীবন্ত মানুষগুলোকে আগুন দিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে মারা, এটাই নাকি বিএনপির আন্দোলন’
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচারের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা মেয়েদের ধরে নিয়ে ক্যাম্পে নির্যাতন করেছে। তখন জাতির পিতা সুইজারল্যান্ড থেকে নার্স এনে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। জাতির পিতা সবসময় নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন।’
যেকোনো অর্জনে নারীদের অবদান থাকতে হবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সমাজের অর্ধেক নারী। তারা অচল থাকলে সমাজ এগিয়ে যাবে না। নারী-পুরুষকে সমানতালে এগিয়ে যেতে হবে।’
‘আমি নারীদের বিচারপতি, সচিব, ডিসি, এসপি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পথ সুগম করি। আজকে আমাদের দেশের মেয়েরা প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে।’
ধর্ম হিসেবে ইসলামই একমাত্র নারীদের সমান অধিকার দিয়েছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘ইসলাম একমাত্র ধর্ম, যেখানে নারীদের সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। স্বামী ও বাবার সম্পদে নারীর অধিকার দিয়েছে ইসলাম। অথচ যারা ধর্মের নামে নারীদের ঘরে রেখে দিতে চায়, তারা জানে না।’
তার সরকারের দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরেও নারী ও পুরুষকে সমান ভাগ দিচ্ছি। কেউ বউকে ছেড়ে দিলে ওই বাড়ি হবে নারীর, পুরুষের নয়। যাতে নতুন ঘর পেয়ে কেউ নতুন বউ না নিয়ে আসে।’
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সবসময় বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেছেন, অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। কঠিন দৃঢ়তা ও সাহস নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতি করতে সহযোগিতা করেছেন।
বঙ্গমাতার এই ত্যাগের বিষয়টি উল্লেখ করে কন্যা শেখ হাসিনা নারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘মেয়েরা স্বামীদের কাছে কত কিছু দাবি করে। আমার মাকে দেখিনি কোনো দিন কিছু দাবি করতে। বরং তিনি বাবাকে বলতেন, তুমি তোমার কাজ করে যাও। সংসারসহ সব কিছু আমি দেখব। ঘাতকের দল যখন আমার বাবাকে হত্যা করে, তখন আমার মা বলেছিলেন, আমার স্বামীকে হত্যা করেছ, আমাকেও হত্যা করো।’
মহিলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী সভাপতি সাফিয়া খাতুনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে সংগঠনের সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ক্রিক স্বাগত বক্তব্য দেন। সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলন শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার অনুমতিক্রমে ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করেন। মেহের আফরোজ চুমকি সভাপতি এবং শবনম জাহান শিলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।