ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ

রেলের চাকা আমদানি বন্ধ, সংকটে বাংলাদেশ রেলওয়ে

রাজশাহী সংবাদদাতা
  ২৮ নভেম্বর ২০২২, ১৩:১৬

যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন থেকে চাকা আমদানি করতে না পারায় সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। চাকার জোগান না থাকায় যাত্রীবাহী ট্রেন থেকে ছেঁটে ফেলা হচ্ছে কোচ। বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অধীনে চলাচলকারী প্রায় সকল মেইল ট্রেনের বহরের কোচসংখ্যা (বগি) কমিয়ে আনা হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, কোচ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংশোধিত বাজেটে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু এই খাতে এখনো কোনো টাকা ছাড় হয়নি। যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রলম্বিত হলে সংকট আরও বাড়তে পারে। যদিও পরিস্থিতি সামাল দিতে আপাতত ইন্দোনেশিয়া ও ভারত থেকে জরুরি
রেলওয়ে সূত্র জানাচ্ছে, পশ্চিমাঞ্চলের (রাজশাহী) অধীনে বিভিন্ন রুটে যাত্রীবাহী ৬১টি মেইল ট্রেন চলাচল করে। এসব ট্রেনের কোনোটিতেই নেই ফার্স্টক্লাস মানের কোচ। তবে যেগুলো এখন চলাচল করছে, সেগুলোর বেশির ভাগেরই ইকোনমিক লাইফটাইম শেষ। সাধারণত কোচের লাইফটাইম ধরা হয় ৩৫ বছর। কিন্তু চলাচলকারী কোচগুলোর বয়স ৫০-৫৫ বছর। ফলে ঝুঁকি নিয়েই এগুলো চালাতে হচ্ছে।
পশ্চিমাঞ্চলে বিভিন্ন ট্রেনের জন্য মোট কোচ রয়েছে ৭০৭টি। এর মধ্যে ব্রডগেজ লাইনের ৪৬৭টি ও ২৪০টি মিটারগেজের। তবে ৭০৭টি কোচের মধ্যে জোড়াতালি দিয়ে সচল রাখা হয়েছে ৫৩১টি। আর ১৭৬টি পুরোপুরি অচল। অচলগুলোর মধ্যে ১২২টি কোচ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় মেরামতের জন্য গেছে। আর বাকি ৫৪টি কোচ কারাখানায় পাঠানোর অপেক্ষায় পড়ে আছে।
এদিকে, কোচ না থাকায় রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর বনলতা এক্সপ্রেসেও কোচসংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। একই কারণে মেইল ট্রেনগুলোতেও কোচের সংখ্যা কমিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রাজশাহী-খুলনা রুটের কপোতাক্ষ, রাজশাহী-ভাঙ্গা রুটের মধুমতি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-খুলনা রুটের মহানন্দা, রাজশাহী-পার্বতীপুর রুটের উত্তরা, রাজশাহী-ঈশ^রদী রুটের রাজশাহী এক্সপ্রেস, চিলাহাটি-খুলনা রুটের রূপসা এবং রাজশাহী-চিলাহাটি রুটের বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে একটি কোচ ছেঁটে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও রাজশাহী-খুলনা রুটের সাগরদাড়ি ও রাজশাহী-বাংলাবান্ধা রুটের বাংলাবান্ধা মেইলে তিনটি করে কোচ কম চলছে।
একই কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী রুটের শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। করোনার অজুহাতে ট্রেনটি বন্ধ করা হলেও এখন কোচের সংকটে আর চালু করা যাচ্ছে না। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর আন্দোলনের মুখে বিকল্প উপায়ে শাটল ট্রেন আবার চালুর কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য পশ্চিমাঞ্চল রেলের যাত্রীবাহী কোচ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ১৫ কোটি টাকা এবং যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয় খাতে আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত এ দুটি খাতে কোনো টাকাই ছাড় করা হয়নি। তবে মালবাহী কোচ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে দুই কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দের বিপরীতে পাওয়া গেছে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ কুদরত-ই খুদা আমাদের সময়কে বলেন, ‘রেলের বেশির ভাগ চাকাই আমদানি করা হয় ইউক্রেন থেকে। কিন্তু যুদ্ধের কারণে আদমানি করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ইন্দোনেশিয়া থেকে ৫০০টি চাকা আমদানির জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। আর ভারত থেকে ৪৫০টি চাকা আনার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। দরপত্র খোলা হয়েছে। এটিও অচিরেই চূড়ান্ত করা হবে।’
এদিকে, কোচ সংকটে টালমাটাল অবস্থার মধ্যেও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হওয়ায় বিপাকে পড়েছে কর্তৃপক্ষ। চাহিদা মেটাতে এরই মধ্যে এক হাজার ৬৪০টি কোচের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে গত ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালককে (অপারেশন) চিঠি দিয়েছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট আহসানউল্লাহ ভূঁইয়া। এ ছাড়াও ক্রমবর্ধমান ট্রেন পরিচালনার জন্য আগামী ৫ বছরে নতুন (বিজি/এমজি) ১২৪টি ইঞ্জিন সংগ্রহের চাহিদা পাঠানো হয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়, পদ্মা সেতুতে রেল যোগাযোগ চালুর পর খুলনা, যশোরসহ বৃহত্তর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রামের জন্য নতুন ট্রেন চালু ও যাত্রী বৃদ্ধি পাবে। যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেল সেতু নির্মাণের পর নতুন নতুন সেকশন বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে নতুন ট্রেন চালু ও যাত্রীসংখ্যা বাড়বে। তাই কোচ ও ইঞ্জিন সংগ্রহ করতে হবে।
কোচ সংকটের বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘যে দেশের কোম্পানির তৈরি কোচগুলো, সেখান থেকেই চাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট খাতে টাকা এখনো আসেনি। আর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আইবাস জটিলতার কারণে আমরা এক খাতের টাকা অন্য খাতে কাজে লাগাতেও পারছি না। এ কারণে যন্ত্রাংশ কেনাকাটায় সমস্যা হচ্ছে। তা ছাড়া সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় ৭৬ শতাংশ লোকবল সংকট। এজন্য কারখানায় কোনো কোচ মেরামতে দীর্ঘ সময় লাগছে। কারখানায় কোচ গেলে সহজে আর তা বের করা যাচ্ছে না।’