এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নিয়েই প্রতিযোগিতা শুরু হয়। কাক্সিক্ষত কলেজে ভর্তির জন্য নির্ঘুম রাত কাটান শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ভর্তি নিয়ে হৈহুল্লোড়ের পর দেখা যায় অনেক কলেজে শিক্ষার্থী শূন্যতা। কোথাও-কোথাও অনুমোদিত আসনের বিপরীতে অর্ধেক শিক্ষার্থীই ভর্তি হয় না। শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। ভালো কলেজগুলোয় বাড়বে প্রতিযোগিতা, আর অপেক্ষাকৃত মানহীন কলেজে শিক্ষার্থী শূন্যতায় থাকবে ফাঁকা আসন। গত সোমবার এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে, অন্যবারের মতো এবারও পুরো ভর্তিপ্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন হবে।
এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন। অন্যদিকে একাদশ শ্রেণিতে আসন রয়েছে ২৪ লাখ ৪০ হাজার ২৪৯টি। সেই হিসাবে ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৬৩০টি আসন খালি থেকে যাবে। তবে নামিদামি কলেজগুলোয় বরাবরের মতো এবারও ভর্তি লড়াই হবে। একাদশে ভর্তির ক্ষেত্রে আসন সংকট প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এসএসসির ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তিতে আসন সংকট হবে না। মাধ্যমিকে যে পরিমাণ পাস করে, তার চেয়ে আমাদের আসন সংখ্যা বেশি রয়েছে। তাই মাধ্যমিকে পাস করা সব শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার পরও আসন খালি থাকবে।’
ব্যানবেইসের হিসাবে দেখা গেছে, সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৮ হাজার ৮৬৪টি। এর মধ্যে মানসম্মত কলেজের সংখ্যা মাত্র দেড় থেকে দুইশ। এসব কলেজে আসন সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজারের মতো।
এ কারণে জিপিএ-৫ পেয়েও কাক্সিক্ষত ভালো কলেজগুলোয় ভর্তি হতে পারবে না অন্তত ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ শিক্ষার্থী। ভালো ফলে উত্তীর্ণরা চাইলেও সবাই পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে না। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা ঢাকাসহ বিভাগীয় বড় কলেজে ভিড় জমায়। শুধু জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদেরই সুযোগ করে দেওয়ার মতো প্রতিষ্ঠান ঢাকা ও দেশের বড় শহরগুলোতে নেই।
ব্যানবেইসের হিসাবে, ঢাকা বিভাগে ৭০টি, রংপুর বিভাগে ২৯টি, বরিশাল বিভাগে ১২টি, রাজশাহী বিভাগে পাঁচটি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭টি, খুলনা বিভাগে ১১টি এবং সিলেট বিভাগে ২২টি মোটামুটি মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কলেজে নিজ নিজ বিভাগের জিপিএ-৫ পাওয়ারাও ভিড় করলে সবার আসন সংস্থান হবে না। সে ক্ষেত্রে বাকিরা পড়বে বিপদে। আবার রাজধানীতে মোট ১৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণি রয়েছে। এসব কলেজে মোট আসন আছে ৪৩ হাজার ৫১৯টি। এর মধ্যে ভালোমানের কলেজ আছে ২০ থেকে ২২টি, যেখানে আসন সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার।
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, বাহারি নামের কলেজগুলো নানাবিধ কৌশলে আগে শিক্ষার্থী ভর্তি করত। এখন অনলাইন ভর্তি নেওয়ায় এ ধরনের কলেজগুলোয় আগ্রহ নেই শিক্ষার্থীদের। লেখাপড়ার মান ভালো না থাকায় এবং অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়ার কারণে ইমেজ সংকটে পড়েবে অসংখ্য কলেজ। ভর্তিযুদ্ধ হবে কেবল মন্দের ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোয়।
প্রশ্ন উঠেছে শহরের অলিগলিতে গড়ে ওঠা নামসর্বস্ব কলেজের অনুমোদন নিয়ে। একই পাড়া-মহল্লায় একাধিক কলেজের অনুমোদন নিয়ে ঝুলানো হয়েছে কলেজের সাইনবোর্ড।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, একে তো অনলাইন ভর্তি। আরেক হলো- এখন কেউ আর নাম দেখে ভর্তি হয় না কলেজে। ভর্তির আগে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ওই প্রতিষ্ঠানেরন বিগত ফল বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেন। আরেকটি কারণ হলো- এখন বাসায়-বাসায় গিয়ে মার্কেটিং করে কলেজগুলো শিক্ষার্থী টানতে পারছে না। ভর্তিপদ্ধতি শিক্ষার্থীদের অনলাইনেই কলেজ পছন্দের সুযোগ করে দিয়েছে। একই মহল্লায় একাধিক কলেজ কেন থাকবে- বলেও প্রশ্ন রাখেন এ শিক্ষাবিদ। তিনি বলেন, এখন টাকা হলেই একটি স্কুল-কলেজ খোলা যায়। ওটা প্রস্তাবিত এলাকায় দরকার আছে কি নেই; সেটা যাচাই করার চেয়ে দেখা হয় এটা কোন এমপি-মন্ত্রীর দাবি ইত্যাদি।
এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, সরকার নামসর্বস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে কঠোর। আসনের চেয়ে কম শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়া অনেক প্রতিষ্ঠানের আসন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থী কম ভর্তি হলে আসন কমিয়ে দেওয়া, বন্ধ করে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্তও আমরা নেব।
এদিকে জানা গেছে, ভর্তির নিয়মাবলি, কোটা ও শর্তাবলি চূড়ান্ত করে শিগগিরই ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণির ভর্তি নীতিমালা জারি করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।