সামিটের আজিজ খানসহ পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১৪:৩৬

আলোচনায় থাকা ব্যবসায়িক গোষ্ঠী সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ খান এবং তার পরিবারের দশ সদস্যের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তাদের সবার ব্যাংক হিসাব ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখতে রোববার সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছে।
চিঠিতে সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আজিজ খান, তিন মেয়ে আয়েশা আজিজ খান, আদিবা আজিজ খান ও আজিজা আজিজ খান, চার ভাই লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান, ফরিদ খান, লতিফ খান ও জাফর উম্মেদ খান এবং ভাইদের ছেলে ফয়সাল করিম খান ও সালমান খানের নাম ও এনআইডি নম্বর দেওয়া হয়েছে। তারা সবাই সামিট গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালক।
চিঠিতে ব্যাংক হিসাব খোলা থেকে শুরু করে সেগুলোর হালনাগাদ লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়েছে।
এছাড়া চিঠিতে তাদের ব্যক্তিগত ও প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত সব ধরনের সচল হিসাবের তথ্য, চলমান ঋণের তথ্য, আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত তথ্যাদি এবং লকার সংক্রান্ত তথ্য ২ কর্মদিবসের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে।
বিএফআইইউ এর এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, রোববার বিকালে এ চিঠি ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে।
চিঠি পাওয়া একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, নির্দেশনা মত তাদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ থাকবে। অর্থ জমা করার সুযোগ থাকবে। তবে উত্তোলন বা স্থানান্তর করার সুবিধা বন্ধ থাকবে পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত।
ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ থাকা সংক্রান্ত বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়েছে, “আলোচিত ব্যক্তিবর্গ ও তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে আপনাদের ব্যাংকে পরিচালিত সকল ধরনের সচল ব্যক্তিক হিসাবের লেনদেন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ২৩ (১) (গ) ধারার আওতায় ৩০ দিনের স্থগিত করতে আপনাদেরকে নির্দেশ প্রদান করা হল।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বড় ব্যবসায়িক গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে থাকা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।
এর আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) সামিটসহ পাঁচটি বড় শিল্প গ্রুপের মালিক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের লেনদেনের তথ্য চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠায়।
এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ এ মু’মেন সে সময় বলেছিলেন, “বিভিন্ন পন্থায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির বিশেষ অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে সিআইসি। বর্তমান সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ পর্যালোচনা এবং সুনির্দিষ্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সিআইসি সম্ভাব্য কর ফাঁকিবাজদের তালিকা সম্পন্ন করেছে।
“পর্যায়ক্রমে এসকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আয়কর আইন, ২০২৩ ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর অধীনে কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে ফাঁকি দেওয়া কর উদ্ধারের পাশাপাশি শাস্তিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।”
সামিটসহ দেশের বৃহৎ সাত শিল্পগোষ্ঠীর মালিকানা বা শেয়ার হস্তান্তর যাতে স্থগিত রাখা হয়, সেই অনুরোধ জানিয়ে যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরকেও চিঠি দিয়েছে এনবিআর।
সেই চিঠিতে বলা হয়, ২০২৩ সালের আয়কর আইনের ২২৩ ধারার আওতায় এনবিআর কর ফাঁকি রোধে সম্পত্তির অন্তবর্তীকালীন অবরুদ্ধকরণ বা ক্রোকের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।
“চলমান তদন্ত অনুযায়ী, এই কোম্পানি সমূহের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগসহ আর্থিক অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।”
এ কারণ দেখিয়ে ‘জনস্বার্থে’ এসব কোম্পানির শেয়ার স্থানান্তর (কেনা-বেচা ও দান) স্থগিত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে পাঠানো চিঠিতে।