রাজধানী ঢাকায় গণসমাবেশ সফল করতে আগামী ১০ ডিসেম্বরের আগেই নেতাকর্মীদের ঢাকায় আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলেন, বিভাগীয় গণসমাবেশ আয়োজনের ধারাবাহিকতায় ঢাকার বাইরে আজ শনিবার রাজশাহীতে সর্বশেষ গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। তারা মনে করেন, বড় ধরনের জমায়েত ঠেকাতে বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোর একদিন আগে গণপরিবহন ধর্মঘট, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা, বাড়ি বাড়ি অভিযান, গ্রেপ্তার, পথে হামলা ইত্যাদি নানা ধরনের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে দলীয় নেতাকর্মীদের। কিন্তু সব বাধা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা ‘বিভেদ ভুলে’ প্রতিটি গণসমাবেশ সফল করেছেন। নয়টি বিভাগীয় গণসমাবেশের পর রাজধানী ঢাকার গণসমাবেশ তাদের রাজনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন নেতারা।
বিএনপি নেতারা বলেন, ঢাকার গণসমাবেশ সফল করতে সবচেয়ে বেশি বাধা মোকাবিলা করতে হবে। ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা শুরু হয়েছে। তাদের আশঙ্কা, গণপরিবহন ধর্মঘটও ডাকা হবে। এ ছাড়াও পথে পথে নেতাকর্মীদের ওপর নানা হামলারও শঙ্কা রয়েছে। এসব কারণে রাজধানী ঢাকার গণসমাবেশ সফল করা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মনে করছে বিএনপি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে যে আন্দোলন হয়েছিল, সেখানে বিএনপি কাক্সিক্ষত ফল না পাওয়ার জন্য তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখনো ঢাকার নেতাদের দায়ী করেন। ‘সেবার চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচির স্থানও ছিল নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক। আগামী ১০ ডিসেম্বরও একই স্থানে গণসমাবেশ করার জন্য গত ১৩ নভেম্বর ও ২০ নভেম্বর দুই দফা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে (ডিএমপি) চিঠি দেয় বিএনপি। কিন্তু গত মঙ্গলবার ২৬ শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। কিন্তু আগামী ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে গণসমাবেশ করতে অনড় অবস্থানের কথা জানায় বিএনপি। বরং ঢাকার গণসমাবেশের স্থান নির্বাচন নিয়ে সরকার দুরভিসন্ধিমূলক তৎপরতা চালাচ্ছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। এই গণসমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণার পাশাপাশি নিজেদের জনসমর্থন দেশে-বিদেশে সব মহলের কাছে প্রদর্শন করতে চাইছে দলটি।
দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের স্থান হিসেবে নয়াপল্টনকে টার্গেট করেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ব্যাপক লোকসমাগমের লক্ষ্যে ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত ১১ সাংগঠনিক জেলার নেতাদের সঙ্গে স্কাইপিতে বৈঠক করেছে দলটির শীর্ষ নেতারা। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নিয়েও প্রতিদিনই ধারাবাহিক বৈঠক করছেন। এসব বৈঠকে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এড়িয়ে ‘কৌশলে’ চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে কোনো মশাল মিছিল না করাসহ বিশৃঙ্খলা এড়াতে সতর্ক থাকতে ঢাকাসহ সব সাংগঠনিক জেলাকে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির ঢাকা বিভাগে ১১টি সাংগঠনিক জেলা হচ্ছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা জেলা, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর, গাজীপুর জেলা ও মহানগর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদী। গণসমাবেশ সফলে জেলাগুলোতে প্রতিদিনই চলছে প্রস্তুতি সভা, মতবিনিময় ও ঘরোয়া বৈঠক। ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, ‘ঢাকা জেলার ১০টি সাংগঠনিক ইউনিট রয়েছে। ঢাকা বিভাগের গণসমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে সবগুলো ইউনিটের সাথে আমরা বৈঠক করেছি। জেলার বিভিন্ন স্থানে লিফলেট বিরতণসহ নেতাকর্মীরা গণসংযোগ করছেন।’
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহ ধরে গুলশান কার্যালয়ে বিভাগীয় সব জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। প্রতিটি বৈঠকেও স্কাইপিতে ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ব্যবস্থাপনা, অভ্যর্থনা, প্রচারসহ গঠিত সাতটি উপকমিটির নেতারাও দফায় দফায় বৈঠক করছেন।
এদিকে, ঢাকার গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা ও তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ১০ ডিসেম্বরের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে পুলিশ বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। বিএনপির জনসমাবেশে জনতার বিপুল পরিমাণ সমাগম দেখে আওয়ামী সরকার তেলেসমাতি শুরু করেছে। ঢাকা বিভাগসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে। পরিকল্পিত নাশকতার ঘটনা সৃষ্টি করে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা ও গণগ্রেপ্তার করতে কা-জ্ঞানহীন ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামী সরকার। আগুনসন্ত্রাসের মতো অপরাধ করে উল্টো বিএনপির ওপর দায় চাপানোর এক নোংরা রাজনৈতিক সংস্কৃতি দীর্ঘদিন চালু করেছে আওয়ামী লীগ। ওরা আগুন ছড়ানোর গভীর চক্রান্তে মেতে উঠেছে। পুরনো হাতিয়ার শান দিয়ে নতুন করে সেটির ব্যবহার করছে। এরা আগুনসন্ত্রাসের মডেল পুনরায় ব্যবহার করছে। যার নমুনা দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে। এক্ষেত্রে পুলিশ-যুবলীগ-ছাত্রলীগ হাত মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে। সারাদেশের হামলা মামলা গ্রেপ্তারের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, গত দুই দিনে ৫৩৬ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।