যুক্তরাজ্যে কারী শিল্পের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন ( বিসিএ)র উদ্যোগে এনএইচএসের মানসিক স্বাস্থ্য সেবার এওয়ারনেস ক্যাম্পেইন - টকিং থেরাপিস ( Talking Therapies) সার্ভিস সম্পর্কে রেস্টুরেন্ট কর্মীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে।
২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৫টায় পূর্ব লন্ডনের ইম্প্রেশন হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দূত টম হান্ট এমপি, লন্ডনের ডেপুটি মেয়র হাওয়ার্ড ডোভার , নিউহ্যাম কাউন্সিলের চেয়ার কাউন্সিলর রহিমা রহমান, রেডব্রিজ কাউন্সিলের মেয়র কাউন্সিলার জোৎস্না ইসলাম, গিলফের্ড কাউন্সিলের মেয়র কাউন্সিলার মাসুক মিয়া, এনএইচএস-এ কর্মরত থেরাপিস্ট আশনূর নানজি ও মুনালিসা ফেরদৌস, বিসিএর সাবেক প্রেসিডেন্ট পাশা খন্দকার এমবিই, জেষ্ঠ্য সাংবাদিক নাহাস পাশা, বিশিষ্ট কমিউনিটি সংগঠক শাহগীর বখত ফারুখ ও শেখ আলীওর ওবিই।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত কারি শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্নপ্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ, কমিউনিটির বিশিষ্টজন, সাংবাদিক ও বিসিএর সদস্যবৃন্দ।
বিসিএর প্রেসিডেন্ট ওলী খান এমবিই এর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী জেনারেল মিঠু চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিসিএর পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট ওলী খান এমবিই ও এনএইচএস এর পক্ষ থেকে থেরাপিস্ট মুনালিসা ফেরদৌস ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, বিসিএ বিসিএশুধু কারী শিল্পে নয় ডাইভার্স কমিউনিটিতে নানাবিদ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণামূলক কাজ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিসিএ বৃটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস(এনএইচএস) এর মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক নতুন এওয়ারনেস ক্যাম্পেইন 'Talking Therapies' সার্ভিসগুলো বাংলাদেশী রেস্টুরেন্টকর্মীরা যাতে পেতে পারেন সে লক্ষ্যে এনএইচএস এর সাথে কাজ করবে।
এনএইচএস পরিচালিত এক সমীক্ষার তথ্যমতে বৃটেনে দক্ষিণএশিয়ার নাগরিকদের শতকরা ৬৪ ভাগ অর্থাৎ প্রতি ৫জনের মধ্যে তিনজন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। যা শুধু ব্যক্তি, পরিবারের মারাত্নক স্বাস্থ্য ঝুকি ও সমস্যা নয়। এটা গোটা কমিউনিটির জন্য বড় উদ্বেগের।
এনএইচএস সমীক্ষায় বলা হয়েছে , প্রায় দুই তৃতীয়াংশ দক্ষিণএশিয়ার বৃটিশ নাগরিক যারা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার কথা ডাক্তারদের জানিয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন তারা মানসিক সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেয়েছেন। যা সমস্যা উত্তোরণে খুব ইতিবাচক একটি দিক।
বিসিএ মানসিক স্বাস্থ্য আক্রান্ত যেমন দূশ্চিন্তা,অতিরিক্ত উদ্বেগ, সামাজিক উদ্বেগ,পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস বা অবসেশন এন্ড কমপালসারি ইত্যাদি সমস্যার জন্য এনএইচএস কর্তৃক বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা–'টকিং থেরাপিস' এর সাহায্য নেয়ার অনুরোধ করছে। এবং এই বিষয়ে কারী ইন্ড্রাস্ট্রির বিশেষ করে রেষ্টুরেন্ট কর্মীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির করতে এনএইচএস এর সাথে একযোগে কাজ করবে।
এই সার্ভিসগুলো রোগীর সর্বোচ্চ গোপনীয়তা বজায় রেখে অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা সেবা দিয়ে থাকেন । সেবাগুলো ব্যক্তিগতভাবে দেখা করে অথবা অনলাইনে বা ফোন কলের মাধ্যমেও নেয়া সম্ভব।
মানসিক স্বাস্থ্য সেবাটি সহজে অনলাইনে nhs.uk/talk- অথবা সরাসরি স্থানীয় জিপিতে গিয়ে রেফারেলের তথ্য নিয়ে সেবা নিতেপারবেন। যাদের ইংরেজী ভাষায় দুর্বলতা আছে তারা বহুভাষিক থেরাপিস্ট অথবা কনফিডেনশিয়াল থেরাপিস্ট এর মাধ্যমে বাংলা, হিন্দি, পাঞ্জাবি বা উর্দু সহ বিভিন্ন ভাষায় এই চিকিৎসা নিতে পারবেন।
বিসিএর প্রেসিডেন্ট ওলী খান এমবিই বলেন, বাংলাদেশী কারি ইন্ড্রাস্ট্রিতে বিশেষ করে রেস্টুরেন্টে কাজের ধরণ হলো-দীর্ঘ কর্মঘন্টায় প্রতিদিন কাজ করতে হয়। এবং কাজগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সেবায় নিশ্চিত করতে হয়। এটা অস্বীকারে সুযোগ নেই যে, রেস্টুরেন্টে কাজের সময় ও ব্যস্ততায় অনেকে পরিবার ও সামাজিকতায় যথাযথ সময় দিতে পারেন না। ফলে স্বাভাবিকভাবে পরিবারের সদস্যদের সাথে তাদের দূরত্ব ও সম্পর্কে অবমূল্যায়ন বাড়ছে।
তিনি বলেন, এটা খুবই দূ:খজনক যে, আমাদের অসাবধানতা ও অবহেলার কারণে পরিবারে মারাত্নকভাবে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়ছে। যা সরাসরি পরিবার তথা কমিউনিটিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বিসিএ এনএইচএস পরিচালিত মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার বিষয়টিকে সর্ব্বোচ গুরুত্ব দিয়ে এওয়ারনেস ক্যাম্পেইন 'Talking Therapies' সার্ভিসকে সহযোগিতা করবে।
বিসিএ রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদেরকে তাদের স্টাফদের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে কার্যকরি প্রদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে কাজ করে।
বিসিএর সেক্রেটারী জেনারেল মিঠু চৌধুরী বলেন, আমরা বিশ্বাসকরি রেস্টুরেন্ট কর্মীদের মাঝে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত বিষয়ে তাদের আরও সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরী।যাতে রেস্টুরেন্ট কর্মীরা স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে কাজ করতে পারে । এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে মানসিক কোন সমস্যার কারণ না হয়।
বিসিএর পক্ষ থেকে সকল সদস্যদের এনএইচএস এর 'টকিংথেরাপিস' সার্ভিসগুলোর এওয়ারনেস ক্যাস্পেইনে অংশগ্রহনের অনুরোধ জানিয়ে সেক্রেটারী মিঠু চৌধুরী বলেন, আমাদের বিশ্বাস সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কমিউনিটির বহুজাতিক মানুষের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি হবে এবং সকলে সুখি ও শান্তিময় জীবন উপভোগ করতে পারবো।
অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ তাদের বক্তব্যে এনএইচএস এর সাথে বিসিএর এওয়ারনেস ক্যাম্পেইন- টকিং থেরাপিস এর উদ্যোগটিকে অত্যন্ত সময় উপযোগি ও কমিউনিটি সেবাবান্ধব উল্লেখ করে বলেন, বৈশ্বিক নানা বিপর্যয় এবং তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সমাজ ব্যবস্থায় মানসিক স্বাস্হ্য সমস্যা দিন দিন বাড়ছে।
ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস কমিউনিটির এই স্বাস্হ্য কনসার্র্নকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। বিসিএর মতো প্রতিষ্ঠান কারী ইন্ড্রাস্ট্রিরকর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বিষয়ক সচেতনতা ও সমস্যাগ্রস্থদেরএ থেকে উত্তোরণে এনএইচএস এর বিনামূল্যে সেবাগুলো পাওয়ার দিকগুলো তুলে ধরার উদ্যোগ কমিউনিটিতে সরাসরি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
অতিথিবৃন্দ বিসিএর এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য হতে পারে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ইফতার ও দোয়া মাহফিলে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত, রমজানের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা ও দোয়া পরিচালনা করেন মৌলানা হাফিজ ওয়াহিদ সিরাজী।
বিসিএর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জামাল উদ্দিন মকদ্দস। বিসিএর অরর্গারাইজিং সেক্রেটারী ফরহাদ হোসেন টিপু সমাপনী বক্তব্যে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েবলেন- বিসিএ মনে করে সকলের সহযোগিতায় অতীতের মতো 'টকিং থেরাপিস' সার্ভিস ক্যাস্পেইনের মাধ্যমে কমিউনিটিতে একটি আলোর বার্তা পৌছাতে সক্ষম হবো।