বাংলাদেশ সেমেট্রি ও ফিউনারেল হোমের ফান্ড রেইজিং

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০১ মে ২০২৪, ২০:৪৪

 নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বৃহত্তর নোয়াখালী সমিতি ইউএসএর উদ্যোগে নিউইয়র্কে নিজস্ব বাংলাদেশ সেমেট্রি ও ফিউনারেল হোম প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনটি পর্যায়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। নিউইয়র্ক সিটি থেকে প্রকল্পটির দূরত্ব ৬০-৭০ মাইল। ১২৬ একরের বিশাল এই জায়গায় ১ লাখ ১৬ হাজার কবরের জায়গা থাকবে। কবরস্থানের পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে এই প্রকল্পে মসজিদ, মাদরাসা ও কবর জিয়ারতকারীদের জন্য থাকার ব্যবস্থাও করা হবে। এ উপলক্ষে গত ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় গুলশান ট্যারেসে বাংলাদেশ সেমেট্রির ফান্ড রেইজিং অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি কমিউনিটির সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বহু বছর পর একটি সংগঠনের আয়োজনে নিউইয়র্কে এমন একটি অনুষ্ঠান হলো, যেখানে সবাই এক লক্ষ্যে সমবেত হয়েছিলেন। তারা প্রকল্পটির সাফল্য কামনা করেন। সেই সঙ্গে নেতারা এর পাশে থাকারও প্রতিশ্রুতি দেন। সভায় ভিডিও এবং স্লাইড শোর মাধ্যমে প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। সভায় জানানো হয়, নিউইয়র্ক রাজ্যের আপস্টেটের মিডল টাউনে এই সেমেট্রি ও ফিউনারেল হোম অর্থাৎ কবরস্থান প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক কাজ সমাপ্ত হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
উদ্যোক্তারা জানান, প্রথম পর্যায়ে ২৩ হাজার কবরের মধ্যে ১৫ হাজার কবর বিক্রি করা হবে। এখনো কবরের মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। মূল্য নির্ধারণ নিয়ে অতিথিদের কেউ কেউ ভিন্ন ভিন্ন মতামত দিলেও অন্য কোনো বিষয়ে কারও দ্বিমত ছিল না। সর্বস্তরের নেতারা নোয়াখালী সোসাইটির এই প্রকল্পকে সমর্থন দিয়েছেন। ফান্ড রেইজিংয়ের দিনে এক দিনেই এই প্রকেল্পে বিক্রি হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কবর। প্রথম পর্যায়ে তারা ১৫ হাজার কবর আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই কবর বিক্রির অর্থ দিয়েই প্রথম ফেইসের প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করা হবে। সেখানে কবরের স্থান নির্ধারিত করার পাশাপাশি মরদেহ দাফন করার জন্য যা যা প্রয়োজন, তার সব বাস্তবায়ন করা হবে।
উদ্যোক্তারা আরও জানান, এই প্রকল্পে দুই ধরনের কবর কেনার সুবিধা রয়েছে, এক হলো কেউ চাইলে ব্যক্তিগতভাবেও কিনতে পারবেন তার নিজের জন্য বা পরিবারের জন্য, আবার কেউ চাইলে তার এলাকার  কিংবা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনসহ নন-প্রফিট অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে কবর কিনতে পারবেন। ফান্ড রেইজিং অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সোসাইটি একাই কিনে নিয়েছে ৫ হাজার কবর। সংগঠনটির পক্ষ থেকে ৫ হাজার কবর কেনার ঘোষণা দেছেন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী। এ ছাড়া বগুড়া সোসাইটি থেকে এক হাজার কবর নেওয়া হয়েছে। গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারের কর্ণধার শাহনেওয়াজ ২০০ কবর কিনেছেন। পাশাপাশি কমিউনিটির যেকোনো মানুষের জন্য কবরের দরকার হলে তিনি তা ক্রয় করে দেবেন বা কবরের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে ঘোষণা দেন। শাহ গ্রুপের পক্ষ থেকে শাহ জে চৌধুরী সাংবাদিকদের জন্য ১০০ কবর কেনার ঘোষণা দেন। এ ছাড়া তিনি তার পরিবার ও তার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে কবর কেনেন আরও ১০০। এএমসির পক্ষ থেকে হাফেজ রফিকুল ইসলাম ১০০০, এমএমসির পক্ষ থেকে মাওলানা রফিকুল ইসলাম  ৫০০, এবিসিডি ফাউন্ডেশন ৫০০, বদরুল খান ৫০০, রোকন হাকিম ৫০০, অ্যাডভোকেট এম এম আলম ১৪টিসহ সব মিলিয়ে এই প্রকল্পের ফান্ড রেইজিং অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কবর বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি আরও অনেক সংগঠন ও ব্যক্তি কবর কেনার আশাবাদ করেন। অনুষ্ঠানে ২৫টি মসজিদের ইমাম ও খতিবরা যোগ দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ নন-প্রফিট অর্গানাইজেশনের নেতারা যোগ দেন।
সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে পুরো প্রকল্পের একাধিক ভিডিওচিত্র তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ সোসাইটির নেতা রিজু মোহাম্মদের তৈরি একটি ভিডিওচিত্রে সেখানকার পুরো পরিকল্পনা তুলে ধরেন সেমেট্রি প্রকল্পের সমন্বয়কারী জাহিদ মিন্টু। অনুষ্ঠানে এই প্রকল্প সফল করার সঙ্গে সম্পৃক্ত নোয়াখালী সোসাইটির সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেন জাহিদ মিন্টু। অনুষ্ঠানে নোয়াখালী সমিতির সভাপতি, সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা জুনায়েদ। দোয়া পরিচালনা করেন জেএমসির প্রধান খতিব মাওলানা মীর্জা আবু জাফর বেগ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সভাপতি নাজমুল হাসান মানিক। পরিচালনা করেন সেক্রেটারি ইউসুফ জসিম। প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন জাহিদ মিন্টু। বাংলাদেশ সেমেট্রি ও ফিউনারেল হোম প্রকল্পের আহ্বায়ক মো. আব্দুর রব মিয়া বলেন, আপস্টেট নিউইয়র্কের অরেঞ্জ কাউন্টির মিডল টাউন এলাকায় ১২৬ একরজুড়ে বাংলাদেশ সেমেট্রিতে এক লাখের বেশি কবর সংকুলান হবে। আশা করছি আপনারা সবাই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবেন।
প্রকল্পের সদস্যসচিব মো. জাহিদ মিন্টু এই প্রকল্প শুরুর পর থেকে এই যাবৎ গৃহীত সব কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের পুরো কার্যক্রম শুরু হবে এ সামারেই। ৪০ হাজার কবর প্রাথমিকভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রবাসীদের অন্য কোনো সেমেট্রিতে সমাধি করতে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে যেতে হবে না। সম্পূর্ণভাবে ইসলামি নিয়মকানুন মেনে এই সেমেট্রি পরিচালিত হবে। নোয়াখালী সোসাইটির নামে এর যাত্রা শুরু হলেও বাংলাদেশিদের যেকোনো সংগঠন ও ব্যক্তি এখানে কবর কিনতে পারবেন। মানবিক প্রকল্পটি কেনা ও দেখাশোনার জন্য একটি আহ্বায়ক কমিটি কাজ করছে।
এই প্রকল্পের সঙ্গে রয়েছেন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি ও নোয়াখালী সোসাইটির সাবেক সভাপতি মো. আব্দুর রব মিয়া-আহ্বায়ক, মো. জাহিদ মিন্টু-সদস্যসচিব এবং খোকন মোশাররফ ও তাজু মিয়া সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করছেন। সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছেন সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসান মানিক ও সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ জসিম।
বাংলাদেশ সেমেট্রি ও ফিউনারেল হোম প্রকল্প নিয়ে কথা বলেন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়া, সেক্রেটারি রুহুল আমিন সিদ্দিকী, সাপ্তাহিক আজকাল সম্পাদক শাহ নেওয়াজ, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সহসভাপতি গিয়াস আহমেদ, মুনার নির্বাহী পরিচালক আরমান চৌধুরী, বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম এ আজিজ, সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদ, বাংলাদেশ সোসাইটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল আহমেদ জনি, মিজানুর রহমান, কাজী আজম, সোসাইটির ক্রীড়া সম্পাদক মাইনুল উদ্দিন মাহবুব, বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির উপদেষ্টা নজির হোসেন, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান, ট্রাস্টি খোকন মোশারফ, সহসভাপতি তাজু মিয়া, সাবেক সেক্রেটারি বেলাল হোসেন, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল হোসেন খান, বিয়ানীবাজার সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান, জ্যামাইকা ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, কোম্পানীগঞ্জ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মোশাররফ হোসেন সবুজ, আসালের প্রেসিডেন্ট মাফ মিসবাহ উদ্দিন, মাকসুদুল হক চৌধুুরী, ড্রামের কাজী ফৌজিয়া, বগুড়া সোসাইটির সভাপতি মহব্বত আলী আকন্দ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আবু জাফর মাহমুদ, অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, ফখরুল আলম, আতাউর রহমান সেলিম, ফিরোজ আলম, মাসুদ রানা তপন, এস উদ্দীন পিন্টু, মোহাম্মদ আলী, আমিন মেহেদি, আজিমুর রহমান বুরহান, লিটন চৌধুরী, রানো নেওয়াজ, রোকন হাকিম, নওশেদ হোসেন, সাদি মিন্টু, রিজু মোহাম্মদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। জাহিদ মিন্টু এর জবাব দেন। যারা কবর কিনেছেন, তারা এখনো জানেন না কবরের দাম কত। জাহিদ মিন্টু জানিয়েছেন, এখনো তারা তা ঠিক করতে পারেননি। আগামীতে তারা ঠিক করে জানাবেন। তবে কবরের দাম ৮০০ ডলার হতে পারে এমনটি শোনা গেলেও কোনো কোনো নেতা বলেছেন, ১০ মিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য ১৫ হাজার কবর বিক্রি করেই অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব। সেই সঙ্গে উন্নয়নকাজের জন্য প্রয়োজন হলে পরেও অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। এটি নন-প্রফিট প্রকল্প। সেবামূলক প্রকল্প। এই খাত থেকে অর্থ আয় করা হবে না। তবে কবর বিক্রি থেকে অর্থ উঠিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। গিয়াস আহমেদ কবরের দাম আরও কমানোর প্রস্তাব করেন। একজন অবশ্য প্রতিটি কবরের দাম ৩০০ ডলার নির্ধারণ করার আহ্বান জানান।
এই সুবিশাল মানবিক প্রকল্পে প্রবাসী বিভিন্ন আঞ্চলিক ও সামাজিক সংগঠন, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছেন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির নেতারা। বাংলাদেশ সেমেট্রি ও ফিউনারেল হোমের ফান্ড রেইজিং অনুষ্ঠানে এই ধরনের একটি উদ্যোগের প্রশংসা করেন সবাই।