যুক্তরাষ্টের নিউইয়র্কে বিএনপির ব্যানারে আলোচনা সভা ও ঈদ পুনমিলনীর আয়োজন ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে তুমুল বিতর্ক। এ ঈদ পুনর্মিলনিও আলোচনা সভা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজন বলে প্রচার চালানো হলেও এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে অবগত নন নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপি, উত্তর সিটি ও দক্ষিন সিটির সদ্য নির্বাচিত নেতৃবৃন্দও। এছাড়াও অনুষ্ঠানটিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য গিয়াস আহমেদ, বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ সম্রাটের মতো সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সম্পৃক্ততা না থাকায় অনুষ্ঠানটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
যুক্তরাষ্ট বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা মনে করছেন, আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কাউন্সিল ঘিরে কোন বিশেষ ব্যক্তিকে হাইলাইট করার জন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মূলধারার নেতাদের বাদ দিয়ে এ ধরণের আয়োজন করা হয়েছে। সদ্য নির্বাচিত নেতৃবৃন্দদের ছাড়া এ ধরনের আয়োজনের জন্য কড়া সমালোচনা করেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা।
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হলে ২৯ এপ্রিল সোমবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এ ঈদ পুনর্মিলনী ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন। এছাড়াও প্রধান বক্তা, গেস্ট অব অনার, বিশেষ অতিথি হিসেবেও নির্বাচিত ৩ কমিটির কোন নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি দেখা যায়নি। কমিটির নেতৃবৃন্দের বাইরে গিয়ে এ ধরনের আয়োজনকে দলীয় কোন্দল সৃষ্টির অপচেষ্টা বলে ব্যক্ত করেন অনেকেই।
এ বিষয়ে নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির নব নির্বাচিত সভাপতি মো. অলিউল্লাহ আতিকুর রহমান বলেন, এই আয়োজন সম্পর্কে আমি ও আমার কমিটি অবগত নই। নব নির্বাচিত কমিটি হিসাবে তারা আমাদের বিষয়টি জানাতে পারতো। কিন্তু তারা তা করেনি।
দলীয় অনুষ্ঠানে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে গঠিত বিএনপির বৈধ কমিটি থাকতে নিউইয়র্কে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নাম দিয়ে অনুষ্ঠান করাকে দলীয় কোন্দল মনে করেন কিনা এমন প্রশ্ন করলে বিষয়টি এডিয়ে যান নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির নবনির্বাচিত এ সভাপতি।
নিউইয়র্ক মহানগর দক্ষিনের নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মো. বদিউল আলম বলেন, বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নামে এসব অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়টি আমরা আমাদের উর্ধতন নেতৃবৃন্দকে জানিয়েছি। তারাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন।
অনুষ্ঠানের গেষ্ট অব অনার সাবেক বিএনপি নেতা এডভোকেট জামাল আহমেদ জনি বলেন, এখানে কোন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি নেই। তাই বিএনপির নামেই অনুষ্ঠানটি করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকৃত আরো ৩ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বাস করেন নিউইয়র্কে। তারা অনুষ্ঠানের কথা না জানার কারণ প্রসঙ্গে বলেন, এখানে বিএনপির একজন নেতা উপস্থিত ছিলেন বাকি ৩ জনকে অনুষ্ঠানে কে সিনিয়র আর কে জুনিয়র হবেন এই ভেবে দাওয়াত দেয়া হয়নি। ভবিষ্যতে তাদের জন্যও অনুষ্ঠান করা হবে। একই সাথে অনুষ্ঠানে বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করা হয় বলে উল্লেখ করেন এবং সরকার বিরোধী প্রচারণা হয়েছে বলে দাবী করেন।
সদ্য নির্বাচিত মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরি বলেন, বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করার সময় মূল বিএনপি নেতারা এই অনুষ্ঠানে আসেনি। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিতে দ্বিধাবিভক্তির জন্যই এই অনুষ্ঠান করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২১ এপ্রিল দলীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন হোটেলে নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপি, মহানগর উত্তর ও মহানগর দক্ষিণ বিএনপির কমিটি গঠিত হয়। বিএনপির এই ৩ শাখার নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার পরই বিজয়ীরা জড়ো হন জ্যাকসন হাইটসে। এসময় নব নির্বাচিত নেতৃবৃন্দদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। বিএনপির এই চাঙ্গা অবস্থানের সময় অনুষ্ঠানটি কোন্দলের সূত্রপাত ঘটান বলে মন্তব্য করেন একাধিক বিএনপি নেতা।