প্রবাসে বিএনপির ছয়টি কমিটি অনুমোদন পেয়েছে। গত ১ মে এসব কমিটির অনুমোদন দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অনুমোদন পাওয়া কমিটিগুলো হলো নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপি, নিউইয়র্ক মহানগর দক্ষিণ ও নিউইয়র্ক মহানগর উত্তর বিএনপি, যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া স্টেট বিএনপি, কানাডা পশ্চিম শাখা বিএনপি এবং কানাডা পূর্ব শাখা বিএনপি। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির কাউন্সিলে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে একে পাতানো নির্বাচন বলছেন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মো. মোতাহার হোসেন। তিনি এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে তিনি ফলাফল প্রত্যাখ্যান করলেও অন্যরা সবাই ফলাফল মেনে নিয়েছেন।
গত ২১ এপ্রিল নিউইয়র্ক স্টেট এবং মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নির্বাচনের পর নির্বাচিত নেতাদের নাম পাঠানো হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে। এগুলো কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে অনুমোদন হয়ে আসে। তিনটি কমিটিতে পাঁচজন করে মোট ১৫ জন নেতা নির্বাচিত হলেও এখনো তিনটিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়নি। শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে বলে জানা গেছে।
সূূত্র জানায়, তিনটি পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ৪১ জন করে মোট ১২৩ জন নেতা ঠাঁই পেতে পারেন। আবার প্রতিটি কমিটি ১০১ সদস্যবিশিষ্টও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তিন কমিটিতে মোট ৩০৩ জন নেতা ঠাঁই পেতে পারেন। কত সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে এবং কারা কারা কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন, তা এখনো এখানকার নির্বাচিত নেতারা পুরোপুরি জানেন না। নির্বাচন কমিশনও জানে না। এ জন্য কমিটিতে পদ পেতে আগ্রহী নেতারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
নিউইয়র্ক সিটি উত্তরের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ডা. নুরুল আমিন মিয়া পলাশ জানান, আমরা নিউইয়র্কের তিনটি নির্বাচনের পর নিজ নিজ কমিশনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদনের জন্য নাম পাঠিয়েছিলাম। সেগুলো অনুমোদন দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি ১ মে তিনটি কমিটির নেতাদের নাম অনুমোদন দেন। আমরা তা ৩ মে পেয়েছি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার স্বাক্ষরের পাশাপাশি লিখে দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় অনুমোদনের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। ফলে কমিটিগুলো মহাসচিব ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সম্মতিতে হয়েছে। এ নিয়ে কারও কোনো কিছু বলার সুযোগ নেই। আমরা আশা করছি, আগামী এক মাসের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে।
সূত্র জানায়, তিনটি কমিটির নির্বাচিত নেতারাই পূর্ণাঙ্গ কমিটির নেতাদের নাম ঠিক করবেন। পরে নির্বাচিত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন পূর্ণাঙ্গ কমিটি চূড়ান্ত করবেন। মূলত আনোয়ার হোসেন খোকনকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেট ও সিটির কমিটি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি এর পুরো সমন্বয় করছেন। তার কাছে সব স্টেট ও সিটির নেতাকর্মীদের নাম রয়েছে। তিনি সবার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে এর আগে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছিলেন। এবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনেও তিনি বিশেষ অবদান রাখবেন।
গত ২১ এপ্রিল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে নিউইয়র্ক স্টেট এবং নিউইয়র্ক মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নির্বাচন সম্পন্ন হয়। ভোট গণনা শেষে নির্বাচন কমিশনাররা ফলাফল ঘোষণা করেন। স্টেট বিএনপিতে নির্বাচিত পাঁচ নেতা হলেন সভাপতি মো. অলিউল্লাহ আতিকুর রহমান, সিনিয়র সহসভাপতি জসিম উদ্দিন ভিপি, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান সাঈদ, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মো. আরিফুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রইচ উদ্দিন। মহানগর উত্তরে নির্বাচিত পাঁচজন হলেন সভাপতি আহবাব হোসেন চৌধুরী খোকন, সিনিয়র সহসভাপতি কাজী আমিনুল ইসলাম স্বপন, সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার জাহিদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ শাহীন চৌধুরী। মহানগর দক্ষিণে নির্বাচিত পাঁচজন হলেন সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা, সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. বদিউল আলম, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান হোসাইন ও সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হোসেন মৃধা।
নির্বাচনের পর তিনটি নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচিতদের নাম কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়। নির্বাচিত ১৫ নেতার নাম লন্ডনে আনোয়ার হোসেন খোকনের কাছেও রয়েছে। তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন। জানা গেছে, যেসব প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হয়েছেন, তারাও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঠাঁই পেতে পারেন। ওই নির্বাচনে পাঁচটি পদে ৩৩ জন প্রার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে ১৫ জন নির্বাচিত হন আর বাকি ১৮ জন পরাজিত হন।
এদিকে প্রায় ছয় মাস আগে ভার্জিনিয়া স্টেট বিএনপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে ঝুলে ছিল কেন্দ্রীয় কমিটির চূড়ান্ত অনুমোদন। ১ মে অনুমোদন পায় এই কমিটি। ভার্জিনিয়া বিএনপির কাউন্সিলে নির্বাচিতরা হলেন সভাপতি জহির খান (৩০ ভোট), সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ (৩৫ ভোট), সহসভাপতি নিজাম আহমেদ (৩৪ ভোট), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম মানিক (৩২ ভোট) ও সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির আলম জসিম (৩৪ ভোট)।
অন্যদিকে গত ১ মে কানাডা পশ্চিম এবং কানাডা পূর্ব শাখা বিএনপির অনুমোদনও দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কানাডা পশ্চিম শাখা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবদুল আহাদ, সিনিয়র সহসভাপতি মাহবুবুর রব চৌধুরী, সহসভাপতি তপন মাহমুদ, অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান ও এজাজ খান, সাধারণ সম্পাদক মুজিবর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী (অটোয়া) এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল আলম মিশন (আলবার্টা)।
কানাডা পূর্ব শাখা বিএনপির সভাপতি এজাজ আক্তার তৌফিক, সিনিয়র সহসভাপতি মারিফুর রহমান মারিফ, সহসভাপতি আনসার আহমেদ ও ফারুক হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক নবি হুসাইন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম মিজি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহিম আহমেদ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জামিল।