লিবিয়ায় নাটোরের চার যুবক উদ্ধার

 বাংলাদেশে আনন্দে ভাসছে পরিবার 
ডেস্ক রিপোর্ট
  ১০ জুন ২০২৪, ১১:০৭

নাটোরের গুরুদাসপুরের লিবিয়া প্রবাসী চার যুবককে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করেছে ওই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সবাই মুক্ত হওয়ায় এখন অপহৃতদের পরিবার ও গ্রামে চলছে আনন্দের বন্যা। 
এর আগে অমানুষিক নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে তাদের পরিবারের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল। লিবিয়ায় শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন কাজে কর্মরত ছিল তারা। গত ৭ দিন ধরে মুক্তিপণের দাবিতে জিম্মি যুবকদের পরিবারের কাছে শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও পাঠাচ্ছিল অপহরণকারীরা। 
রোববার (৯ জুন) দুপুরে লিবিয়া প্রবাসী সোহান মুক্ত হয়ে পরিবারের কাছে সেই ভিডিও বার্তা পৌঁছে দেন। 
এর আগে সোহানসহ নাটোরের গুরুদাসপুরের বিয়াঘাট চরপাড়া গ্রামের নাজিম, সাগর ও বিদ্যুৎকে নির্যাতন করার ভিডিও তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে মোট ৪০ লাখ টাকা দাবি করেছিল অপহরণকারীরা।
অপহৃত সোহানের মা দুলালী বেগম ও বাবা শাজাহান প্রামাণিক বলেন, দুপুর ১২টার দিকে একটা ভিডিও পাঠাইছে ওই দেশে থেকে। ভিডিওতে ছেলে বলতেছে, আম্মু- আব্বু আমি নিরাপদ আছি, তোমরা চিন্তা কইরো না। তিনি বলেন, ছেলের অপহরণের খবর পাওয়ার পর থেকে দুশ্চিন্তায় আমাদের চোখের ঘুম আসতো না। আল্লাহর কাছে শুধু দোয়া করতাম। আজ আমরা অনেক খুশি।
প্রবাসী বিদ্যুৎ এর মা বিউটি বেগম জানান, তার স্বামী অনেক আগে থেকেই লিবিয়ায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। পরবর্তীতে তার ছেলেসহ প্রতিবেশী আরও তিন যুবক এক সঙ্গে লিবিয়ায় যান শ্রমিক হিসেবে। তার ছেলেও অপহরণের শিকার হয়েছিলেন। অপহরণ হওয়ার পর থেকেই পরিবার ও স্বজনদের আহাজারী থামছিল না। রোববার বেলা সাড়ে এগারোটার সময় তার স্বামী তাকে কল করে জানায় তার ছেলেসহ চারজনকেই লিবিয়ার স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধার করেছে। 
গুরুদাসপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজ্জল হোসেন বলেন, ঘটনাটি জানার পর থেকেই এ বিষয়ে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করি। নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলামের নির্দেশনায় পরিবারগুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছি।
পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান, গত ২ জুন অপহরণের পর ৬ জুন বিষয়টি আমাদেরকে ভূক্তভোগী পরিবারগুলো জানায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজেও পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করেছি, কথা বলেছি। আমরা সার্বক্ষণিক তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। আজকে তারা জানিয়েছে, লিবিয়ার ওই ৪ জন প্রবাসীকে উদ্ধার করেছে সেই দেশের সেনাবাহিনী। এ রকম ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়েছে, আমরাও দেখেছি। 
তিনি বলেন, লিবিয়াতে গুরুদাসপুর এলাকার অনেক প্রবাসী দীর্ঘদিন ধরে থাকেন। ঘটনার পর থেকে তাদের সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি। এ ঘটনায় বাংলাদেশ থেকেও কেউ জড়িত রয়েছে কিনা বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখছি।
প্রসঙ্গত, জীবিকার তাগিদে প্রায় দুই বছর পূর্বে বিয়াঘাট চরপাড়া গ্রামের মো. শাজাহান প্রামাণিকের ছেলে মো. সোহান প্রামাণিক (২০), মো. তয়জাল শেখের ছেলে মো. সাগর হোসেন (২৪) ও ইনামুল ইসলামের ছেলে মো. বিদ্যুৎ হোসেন (২৬) লিবিয়াতে কাজের জন্য যান। আর মৃত শুকুর আলীর ছেলে নাজিম আলী (৩২) লিবিয়ান যান গত দুই মাস আগে। সকলের পরিবার থেকেই জমি বন্ধক, গরু বিক্রি ও ঋণ করে সন্তানদের বিদেশে পাঠয়েছিলেন।
গত ২ জুন লিবিয়া থেকে ওই ৪ প্রবাসীর পরিবারের ‘ইমো’ নম্বরে মোবাইল ফোনে কল আসে। রিসিভ করতেই বলা হয় ৪ জন যুবককে তারা অপহরণ করেছেন। যারা অপহরণ করেছেন তারাও বাঙালি। তবে তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।  ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ না দেওয়া হলে তাদেরকে মেরে ফেলা হবে। এমন খবরে পরিবারের সদস্যরা স্তব্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকেই ‘ইমো’ নম্বরে জিম্মি যুবকদের শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হয়। টাকা দিতে না পারলে নির্যাতনের মাত্রা প্রতিদিন বাড়তে থাকবে বলেও জানায় অপহরণকারীরা।