বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কানাডা শাখায় আজগুবি কমিটির ঘোষণায় ক্যাঁচাল বাঁধিয়ে নানা বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন কান্ডজ্ঞানহীন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন ওরফে জুম খোকন। সাম্প্রতি তিনি তথাকথিত প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে কানাডা পশ্চিম ও কানাডা পূর্ব শাখা কমিটির অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে তা অনুমোদন দেন। কানাডার ভৌগলিক সীমাজ্ঞানহীন আনোয়ার হোসেন খোকনের এহেন কর্মকান্ডে হতবাক হয়েছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। তার অনৈতিক কর্মকান্ডে তদন্ত দাবি করে গত ১৪ জুন,দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের কাছে একটি আবেদনও পাঠিয়েছেন কানাডা বিএনপির নেতারা।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বরাবরে পাঠানো উক্ত আবেদনে উল্লেখ করা হয়, কানাডা পশ্চিম ও কানাডা পূর্ব শাখা কমিটি নাম দিয়ে এতটা ছলচাতুরী, অসততা ও চরম হীন কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে যে, কানাডার মত একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের পুরো ভৌগলিক চরিত্রকেই নাক্কারজনক ভাবে বদলে দেওয়া হয়েছে! ভৌগলিক ও ঐতিহাসিকভাবে ভাবে কানাডা পশ্চিম হল আলবার্টা, ব্রিটিশ কলম্বিয়া, সাসকাচুয়ান ও মেনিটোবা এই চারটি প্রভিন্স। অন্যদিকে কানাডা পূর্ব হল অন্টারিও ও ক্যুইবেক এই দুটি প্রভিন্স। অসৎ ও বিশেষ কোন হীন উদ্দেশ্যে অন্টারিও ও ক্যুইবেক এই দুটি প্রভিন্সের অসংখ্য মেধাহীন ও অযোগ্য নেতাদের ঘোষিত দুটি কমিটিতে পুনর্বাসন করতে যেয়ে সাসকাচুয়ান, মেনিটোবা এবং ক্যুইবেক প্রভিন্সকে পূর্ব কানাডা কমিটি নাম দেওয়া হয়েছে যেখানে সাসকাচুয়ান এবং মেনিটোবা প্রভিন্স কখনই ভৌগলিকভাবে পূর্ব কানাডার অংশ নয় বরং সাসকাচুয়ান এবং মেনিটোবা প্রভিন্স হল কানাডা পশ্চিম। আরও লজ্জাজনক বিষয় হল, এই তথাকথিত আংশিক কমিটিতে সাসকাচুয়ান ও মেনিটোবার একজন নেতাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
কানাডা বিএনপির নেতারা উল্লেখ করেন, কানাডা বিএনপির পাঁচটি প্রভিন্সিয়াল কমিটির (আলবার্টা, ব্রিটিশ কলম্বিয়া, সাসকাচুয়ান, মেনিটোবা ও ক্যুইবেক) সভাপতি/আহবায়ক ও সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিব সহ কমিটিগুলোর অন্যান্য সদস্যবৃন্দ এবং সমগ্র কানাডার সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ কানাডা পশ্চিম ও কানাডা পূর্ব শাখা কমিটি গঠনের উল্লেখিত প্রক্রিয়া সম্পর্কিত অসত্য ও ভিত্তিহীন সংবাদে পুরোপুরি হতবাক, বিস্মিত ও মর্মাহত হয়েছি। কানাডার একমাত্র অন্টারিও প্রভিন্স ছাড়া (যেখানে প্রভিন্সিয়াল কমিটি ছিল কিন্তু বর্তমানে কার্যকর কমিটি নেই) অন্য সবগুলো প্রভিন্সে যেখানে বাংলাদেশিরা জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত রেখেছেন সেখানে বিএনপির কার্যকর প্রভিন্সিয়াল কমিটি রয়েছে এবং উক্ত কমিটিগুলোর নেতৃবৃন্দ সদ্য ঘোষিত কানাডা পশ্চিম ও কানাডা পূর্ব শাখা কমিটি সম্পর্কে একেবারেই অবহিত নন। নির্বাচনের মাধ্যমে উক্ত দুটি কমিটি গঠনের যে কথা বলা হয়েছে তা পুরোপুরি অসত্য, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত। বর্তমানে অত্যন্ত সফলভাবে কার্যকর প্রভিন্সিয়াল কমিটিগুলোর সভাপতি/আহবায়ক সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের কারো সাথে কখনই কানাডা বিএনপির শাখা কমিটি গঠনের ব্যাপারে কোন প্রকার যোগাযোগ ও বিন্দুমাত্র আলাপ আলোচনা করা হয়নি, নির্বাচন করা তো যোজন যোজন দুরের কথা!
কানাডা বিএনপির নেতৃবৃন্দরা বলেন, শুধুমাত্র কানাডার প্রভিন্সিয়াল কমিটিগুলোর নেতৃবৃন্দ নয়, কানাডা বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দ যারা বিগত অনেকগুলো বছর ধরে তাদের মেধাবী নেতৃত্ব দিয়ে কানাডা বিএনপিকে সংগঠিত করেছেন তাদের প্রায় কারো সাথেই শাখা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগাযোগ ও আলোচনা করা হয়নি। বিগত অনেকগুলো বছর ধরে যেসব নেতৃবৃন্দ কানাডা বিএনপিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন, তাদের মেধার সর্বচ্চ ব্যাবহার করেছেন এবং কানাডার সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দকে সংগঠিত করার চেষ্টা করেছেন দু-একজন বাদে তাদের কাউকেই উক্ত দুটি কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সেসব নেতৃবৃন্দের যোগ্যতা, মেধা, শ্রম ও দলের প্রতি তাদের আস্থা ও নিষ্ঠাকে একেবারেই বিবেচনায় নেওয়া হয়নি বরং তাদের প্রতি অন্যায় ও অবিচার করা হয়েছে এবং কানাডা বিএনপিতে তাদের দীর্ঘদিনের অবদান ও আত্মত্যাগকে অস্বীকার, অবমূল্যায়ন ও অপমান করা হয়েছে।
অন্যদিকে আলবার্টা, ব্রিটিশ কলম্বিয়া এবং অন্টারিও প্রভিন্সকে পশ্চিম কানাডা কমিটি নাম দেওয়া হয়েছে যেখানে অন্টারিও প্রভিন্স কখনই ভৌগলিকভাবে পশ্চিম কানাডার অংশ নয়। কানাডা পশ্চিম ও কানাডা পূর্ব শাখা কমিটি নাম দিয়ে যা করা হয়েছে তা যেন 'কাল্পনিক' ঢাকা উত্তর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়েছে প্রায় শতভাগ ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির নেতাদের দিয়ে আর ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়েছে শতভাগ ঢাকা উত্তর বিএনপির নেতাদের নিয়ে! এ লজ্জা আমরা কোথায় রাখব!
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতি আত্মনিবেদিত এক ঝাঁক মেধাবী নেতৃবৃন্দ যারা সারা কানাডার প্রায় সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতৃবৃন্দকে একত্রিত ও সমন্বিত করে কানাডা সরকার ও বিরোধী দলের এমপিদের মাধ্যমে কানাডার হাউস অব কমন্সে অনেকগুলো পিটিশন এনেছেন, পার্লামেন্টারি কমিটিগুলোর সাথে বছরের পর বছর ধরে বৈঠক করে চলেছেন, বাংলাদেশের বিগত নির্বাচনের আগে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পিটিশন দাখিল করেছেন এবং প্রতিনিয়ত কানাডার সিটি, প্রভিন্স ও ফেডারেল আইন প্রণেতাদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের জনগণের হারানো ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্যে এবং সর্বোপরি আপনার 'টেকব্যাক বাংলাদেশ' আন্দোলনকে বেগবান করতে সর্বদা আত্মনিবেদিত থেকে নিজেদেরকে উৎসর্গ করে চলেছেন তাদের প্রায় কাউকেই সদ্যঘোষিত কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের কর্ম ও মেধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি বরং তাদের সবাইকেই কানাডা বিএনপিতে অসম্মান ও হেয় করা হয়েছে। আমাদের আশংকা এইসব মেধাবী ও ত্যাগী নেতৃবৃন্দ ভবিষ্যতে বিএনপির হয়ে কানাডাতে কাজ করার সব উৎসাহ ও উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলবেন!
দীর্ঘদিন কানাডা বিএনপির কোন কমিটি না থাকলেও এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতৃবৃন্দ বছরের পর বছর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে এসেছেন যার অতি সাম্প্রতিক অসংখ্য উদাহরনও রয়েছে। কিন্তু দুটি অগণতান্ত্রিক পকেট কমিটি গঠনের ফলে ইতোমধ্যেই নেতাদের মধ্যকার পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক, বিশ্বাস ও আস্থায় বাপক ফাটল তৈরি হয়েছে এবং তার ফলে অতিদ্রুতই ঐতিহ্যবাহী কানাডা বিএনপিতে ব্যাপক বিভক্তি দেখা দিবে ও এর অবশ্যম্ভাবী বিপর্যয় দৃশ্যমান হবে বলে আমরা আশংকা করছি!
কানাডা বিএনপির নেতারা জানান, কানাডা বিএনপির সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ মনে করি যে, নেতা কর্মীদের সাথে পারস্পরিক আলাপ আলোচনা, নির্বাচন ও সম্মেলন ছাড়া এ ধরনের দুটি অনাকাঙ্ক্ষিত শাখা কমিটি কানাডার সর্বস্তরের বিএনপির নেতৃবৃন্দ, কর্মী ও সমর্থক এবং শুভানুধ্যায়ীর উপর স্রেফ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং আমরা নিশ্চিত যে, সম্পূর্ণ অগতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এ ধরনের কমিটি গঠনে কানাডা বিএনপির সম্ভবনাময় অগ্রযাত্রা আগামী দিনগুলোতে ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে। শুধু তাই নয়, অতীতে কানাডা বিএনপি যে গৌরদীপ্ত ভূমিকা পালন করেছে সেটির ভবিষ্যৎ সম্ভবনা অত্যন্ত ক্ষীণ ও ম্রিয়মাণ হয়ে দেখা দিতে পারে। ঘোষিত কমিটি দুটির অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ আগামী দিনগুলোতে কানাডা বিএনপিতে কোন কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবেন বলে আমরা কখনই বিশ্বাস করিনা।
সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অসৎ ও হীন উদ্দেশ্যে যে কমিটিগুলো সম্প্রতি ঘোষণা করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত কিংবা প্রত্যাহার করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মেধা ও যোগ্যতা সম্পন্ন নেতৃবৃন্দকে দিয়ে কার্যকর ও শক্তিশালী কানাডা বিএনপির কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন কানাডা বিএনপির নেতারা।
উক্ত আবেদনে স্বাক্ষর করেন যথাক্রমে-সাসকাচুয়ান বিএনপি আহবায়ক এবং বাংলাদেশের গত নির্বাচনের পূর্বে কানাডার হাউজ অব কমন্সে বেশ কয়েকটি পিটিশন উত্থাপনে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রালয় ও বৈদেশিক সংসদীয় কমিটির সঙ্গে বিগত অনেকগুলো বছর ধরে মিটিং এবং সমন্বয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী প্রফেসর ডঃ বজলুর রহমান, সদ্য ঘোষিত কানাডা পূর্ব শাখা কমিটির সহ-সভাপতি কামরুল হাসান ফারুক হাওলাদার, ক্যুইবেক বিএনপি সভাপতি আব্দুল মান্নান, অন্যতম সংগঠক, কানাডা বিএনপি এবং বাংলাদেশের গত নির্বাচনের পূর্বে কানাডার হাউজ অব কমন্সে বেশ কয়েকটি পিটিশন উত্থাপনে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রালয় ও বৈদেশিক সংসদীয় কমিটির সঙ্গে বিগত অনেকগুলো বছর ধরে মিটিং এবং সমন্বয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী এ কে এম মাহমুদুন নবী, মেনিটোবা বিএনপির সভাপতি, ড. মোঃ ইফতেখার হোসেন, আলবার্টা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মুকিতুর রহমান চৌধুরী, ক্যুইবেক বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, সাসকাচুয়ান বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম শোভন, মেনিটোবা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান, অটোয়া বিএনপির কো-সমন্বয়কারী ইঞ্জিনিয়ার এম হাফিজুর রহমান, কানাডা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ খাঁন নান্টু, কানাডা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, আরমান মিয়া মাষ্টার,কাজী দেলোয়ার হোসেন জনি, অটোয়া বিএনপির কনভেনিং কমিটির সদস্য সৈয়দ মোবাশ্বির আলী, ক্যুইবেক বিএনপির সহ-সভাপতি, মোঃ নওশাদ উল্লাহ, ক্যুইবেক বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহজাহান শামীম, টরেন্টো বিএনপির অন্যতম সংগঠক আখলাক হোসেন, কানাডা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাকারিয়া চৌধুরী, অন্টারিও বিএনপির সাবেক সহসভাপতি রোকেয়া পারভীন, সাসকাচুয়ান বিএনপি সহ-সভাপতি গোলাম মওলা খান, কানাডা বিএনপির সুবর্ণ জয়ন্তী কমিটির অন্যতম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ ভুঁইয়া, ক্যুইবেক বিএনপির সংগঠক আব্দুল আজিজ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাসিম উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক তোফায়েল মোর্শেদ সোয়েব ও
সাসকাচুয়ান বিএনপির অন্যতম সংগঠক ড. মাসুদুর রহমান প্রমুখ।