প্রবাসীদের বলা হয় রেমিট্যান্সযোদ্ধা। পরিবারের সচ্ছলতা ফেরানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন প্রবাসীরা। কিন্তু সেই প্রবাসী মারা গেলে যেন তার থাকে না কোনো মূল্য। হয়ে যান অবহেলার পাত্র। প্রবাসীর মরদেহ দেশে পাঠানোর অর্থাভাবে অনেকের মরদেহ মর্গে পড়ে থাকে মাসের পর মাস।
নয়তো চাঁদা তুলে মরদেহ দেশে পাঠাতে হয়। তবে, ইউরোপের দেশ গ্রিসে মৃত্যুবরণকারী প্রবাসীদের মরদেহ দ্রুত দেশে প্রেরণে দায়িত্ব পালন করছে গ্রিস প্রবাসীদের বৃহত্তর সংগঠন বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিস।
সব খরচ বহন করে গ্রিসে মৃত্যুবরণকারী বাংলাদেশিদের মরদেহ দেশে পাঠাবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এইচ এম জাহিদ ইসলাম। এদিকে, সরকারিভাবে সব খরচ বহন করে মরদেহ দেশে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন কমিউনিটি নেতারা।
কমিউনিটি নেতারা জানান, গ্রিস থেকে মরদেহ দেশে পাঠাতে পরিবহন খরচ ছাড়াই হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার খরচ আসে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা। যা বহন করতে পারেন না অনেক প্রবাসীর স্বজনরা। দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে শুধু পরিবহন খরচ বহন করা হয়। হাসপাতাল মর্গের খরচসহ সব প্রক্রিয়ার খরচ বহন করে বাংলাদেশ কমিউনিটি।
গ্রিস প্রবাসীদের মৃত্যুর পর বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের উদ্যোগে বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন মাঠে নামে মরদেহ পাঠানোর টাকা সংগ্রহের কাজে। তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিভিন্ন দোকানে দোকানে ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলেন। একপর্যায়ে বাংলাদেশ কমিউনিটির সহায়তায় আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে পরিবহন খরচ বহন করে মরদেহ দেশে পাঠায় দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস।
এভাবেই গত ৭ বছরে গ্রিস থেকে মৃত্যুবরণকারী আড়াই শতাধিক প্রবাসীর মরদেহ বাংলাদেশে পাঠানোর অভিজ্ঞতার কথা জানান এই বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সদ্য সাবেক সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ।
তিনি বলেন, যে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এখানে মারা যায় তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ কমিউনিটি ও বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে মরদেহ দেশে পাঠানোর জন্য আকুতি-মিনতি জানানো হয়। কেউ মারা গেলে তাদের পরিবার যোগাযোগ না করলেও আমরা আমাদের দায়িত্ব মনে করে দ্রুত মরদেহটি দেশে পাঠানোর চেষ্টা করি। তবে, আমাদের কোনো ফান্ড না থাকায় টাকা সংগ্রহ করতে কিছু সময় লাগে। কারণ এথেন্সে কেউ মারা গেলে দূতাবাস থেকে টিকিট দেওয়ার পরও বাংলাদেশের টাকা প্রায় এক লাখ থেকে দেড় লাখের মতো খরচ হয়। তবে, কোনো প্রবাসী যদি এথেন্সের বাইরে বা তুরস্ক সীমান্তে মারা যায়, তখন আড়াই লাখ থেকে ৩ লাখ টাকার মতোও প্রয়োজন হয়।
কমিউনিটির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোনো ফান্ড দেওয়া হয়, বা সরকারিভাবে খরচ বহন করে মরদেহটি যদি দেশে নেওয়া হয়, তখন আর এতো ভোগান্তি পোহাতে হবে না।
বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এইচ এম জাহিদ ইসলাম বলেন, এখন আর চাঁদা তুলতে হবে না। বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের উদ্যোগে ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তায় যাবতীয় খরচ বহন করে মরদেহ দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সব খরচ বহন করে বেশ কয়েকটি মরদেহ পাঠানো হয়েছে। তবে, আমাদের দাবি সরকারিভাবে মরদেহ দেশে নিতে উদ্যোগ নেওয়া হোক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেমিট্যান্স যোদ্ধারা সারাজীবন দেশের জন্যই রেমিট্যান্স পাঠান। তাই সরকারের উচিত প্রবাসীদের মরদেহ যেন সরকারি খরচে দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।