প্রবাসী বাংলাদেশি ফোরামের ১৩ দাবি

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:৩৫

জীবন-জীবিকাসহ নানা কারণ আর প্রয়োজনে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন। দেশত্যাগ আসলে রক্তক্ষরণের বিষয়। তারপরও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং দায়বদ্ধতার কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছেন। স্বাধীনতার পর প্রতিটি সরকারই প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বার্থরক্ষার কথা বলেন, নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি তারা প্রবাসীদের কোনো স্বার্থই রক্ষা করেননি। প্রবাসী ফোরামের পক্ষ থেকে প্রতিটি সরকারকে আমাদের প্রাণের ১৩ দফা দাবি নানা সময়ে উপস্থাপন করেছি।
বর্তমানে দেশে আন্তর্র্বতীকালীন সরকার। কোনো দলীয় সরকার নয়। ছাত্র-জনতার প্রত্যাশিত রাষ্ট্র সংস্কারের সরকার। যে সরকার প্রতিষ্ঠায় প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও বিরাট ভূমিকা ছিল। তাই আশাবাদী এ সরকার আমাদের দাবিসমূহ পূরণ করবেন। আমরা আমাদের দাবিসমূহ তাদের কাছে উপস্থাপন এবং প্রেরণ করতে চাই। সেই লক্ষ্যেই গত ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে প্রবাসী ফোরামের পক্ষ থেকে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রবাসী ফোরামের আহ্বায়ক ফখরুল আলম। আশরাফুল হাসান বুলবুল এবং শামীম আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক খালেদ মহিউদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আশা হোম কেয়ারের প্রেসিডেন্ট আকাশ রহমান, অ্যাটর্নি শেখ সেলিম, কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার এন মজুমদার, মূলধারার রাজনীতিবিদ মাফ মিসবাহউদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী, ড. মহসীন আর পাটোয়ারি এবং ডা. ওয়াদুদ ভুইয়া। অনুষ্ঠানে ফখরুল আলমের স্বাগত বক্তব্য এবং প্রেক্ষাপট বর্ণনার পর ১৩টি দাবি উপস্থাপন করেন কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার আহসান হাবিব।
১৩টি দাবি হচ্ছে- নিউইয়র্ক-ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বিমানের সরাসরি ফ্লাইট চালু। নিউইয়র্কসহ-সারা বিশ্বের বাংলাদেশ কনস্যুলেট ও দূতাবাসের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র (ন্যাশনাল আইডি কার্ড) চালু করা, যা ইতিমধ্যেই ব্রিটেনে চালু হয়েছে। নিউইয়র্কসহ সারা বিশ্বের বাংলাদেশ কনস্যুলেট ও দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদেও ভোট প্রদান করার ব্যবস্থা করা। দেশের ভূমিদস্যুদের হাত থেকে প্রবাসীদের রক্ষা। বিশেষ করে চুক্তি মোতাবেক ক্রয় করা জমি, প্লট, অ্যাপার্টমেন্ট সহজে সংশ্লিষ্ট প্রবাসীর কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দপ্রেবাসীদের হয়রানি বন্ধ করা।
দ্বৈত নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধ করা। বাংলাদেশের অফিস-আদালতে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বন্ধ করা ও প্রবাসীদের জন্য ঢাকায় চালু করা ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ কার্যকর করা। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের অর্থে গড়ে ওঠা অর্থনীতির লক্ষ-কোটি টাকা বিদেশে পাচার বন্ধ করাসহ পাচারকারীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। প্রিয় জন্মভূমি সফরকালে প্রবাসীদের জানমালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশে প্রবাসীদের ঘরবাড়ি ও স্থাবর- অস্থাবর সম্পত্তি রক্ষার ব্যবস্থা করা। কনস্যুলেট সেবা বৃদ্ধি করে প্রবাসীদেও পাসপোর্ট নবায়ন, জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, দেশের সম্পত্তি হস্তান্তরে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রদানের মতো কাজগুলো সহজ করা এবং যে কোনো প্রবাসী বাংলাদেশির মরদেহ বিনা খরচে দেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
এ দাবিগুলোর ওপর বক্তব্য রাখেন ৮৫ বছর বয়সী সালেহা কাদির। তিনি প্রবাসীদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমি এখন এদেশে থাকি। আমার সন্তানরাও এখানে থাকে। তারপরেও তারা দেশে জমি ক্রয় করে, পুলিশ হয়রানি বরে। তা নিয়ে সমস্যার মধ্যে পড়ে। বাংলাদেশে দুর্নীতি চলে, অনেকে প্লাট বা ফ্লাট ক্রয় করে ২০/২৫ বছরে পায় না।
অথচ দেশ চলে এই প্রবাসীদের অর্থে। কিন্তু দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী, এমপি এবং সন্ত্রাসীদের বিচার হয় না। তিনি বলেন, এসব দাবি আদায় করতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট আবু নাসের, এনামুল হায়দার, কাজী আজহারুল হক মিলন, শাহজাহান শেখ, হানিফ মজুমদার, খুরশীদ চৌধুরী, ডা. নাফিজ, মোহাম্মদ আবুল কাশেম, আব্দুর রহিম হাওলাদার, আমিন খান জাকির, সোলায়মান ভূঁইয়া, হাজী আব্দুর রহমান, কামরুজ্জামান বাচ্চু, ইঞ্জিনিয়ার আলতাফ চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন লিটন, বদরুল হক, হাকিকুল ইসলাম খোকন, অ্যাডভোকেট মজিবউর রহমান প্রমুখ।অনুষ্ঠানে অধিকাংশ বক্তা দাবিগুলোর সঙ্গে একমাত পোষণ করেন। আবার কেউ কেউ এটাকে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে পরিণত করেছেন। প্রধান অতিথিও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের নোবেল পুরস্কার নিয়ে একধরনের তিরস্কার করেছেন। অনুষ্ঠানকে সফল ও সার্থক করার জন্য ফখরুল আলম সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।