বাংলাদেশি স্টুডেন্ট এন্ড এলামনাই এসোসিয়েশনের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র আন্দোলনে যারা নিহত বা আহত হয়েছেন তাদের পরিবারের পুনর্বাসন, আর্থিক সহায়তা ও উন্নত চিকিৎসার দাবী জানানো হয়েছে। একই সাথে গনহত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দ্রত বিচার দাবি করা হয়। ২২ সেপ্টম্বর রোববার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের ইটজি পার্টি হলে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে করেন ছাত্রদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইউসুফ আলি। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শারমিন আক্তার, নুমায়ের হোসেন, অবনী শরীফ, মুজাফ্ফর আহমেদ, বাইজিদ কামাল প্রমুখ। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ছাত্র উপদেষ্টা আল আমিন রাসেল। সম্মেলনে প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয় পত্র আমেরিকা থেকে ইস্যু করার দাবি জানানো হয় । একই সাথে যারা বাংলাদেশী ইউএস নাগরিক আছেন তাদের যদি জাতীয় পরিচয় পত্র থাকে তাদেরকে দেশের অভ্যন্তরে অফিসিয়াল সার্বিক কাজ সম্পাদন করার সুযোগ দিতে হবে বলে তারা দাবী জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসকে অভিবাদন এবং অভিনন্দন জানাই। সেই সাথে শুভেচ্ছা জানাই উপদেষ্টা পরিষদের সকল সদস্যমন্ডলীদের। দেশের প্রতি একনিষ্ঠতার সাথে আপনারা দায়িত্ব পালন করে দেশকে একটা অবকাঠামোগত সংস্কারের সূচনা আপনাদের হাত ধরে আসবে এইটা দেশের সকল মানুষের প্রত্যাশা।
তারা বলেন, এক ছাদের নীচে আমরা সবাই বাংলাদেশি। আদর্শিক বা মূলচিন্তাধারা সকলের এক না হলেও, আমরা সবাই জানি দীর্ঘমেয়াদি সরকারব্যবস্থা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে একনায়কতন্ত্র কায়েম করছিলো। উন্নয়নের বুলি দিয়ে ক্ষুন্ন করা হয়েছে মানুষের মৌলিক অধিকার এবং মানবাধিকারকে। আমরা যে বাংলাদেশকে ছোট থেকে অসাম্প্রদায়িক বলে জেনে এসেছি, সেই দেশে ডিভাইড এন্ড রুল জারি করে ধীরে ধীরে বাইনারি রাজনীতি কায়েম করা হয়েছে। এবং এই বাইনারি রাজনীতির প্রধান হাতিয়ার করা হয়েছিলো মুক্তিযুদ্ধকে। একটা রাজনৈতিক দল ধীরে ধীরে মুক্তিযুদ্ধের মতোন মহান অর্জনকে নিজের দলের স্বার্থে ব্যবহার করে দেশের সাধারণ মানুষকে ঠেলে দিতো একটা চরমপন্থী পরিচয়ের দিকে। এবং গনতান্ত্রিক সরকারের ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার প্রথম ধাপ ছিলো এটা। আমরা চাই বাংলাদেশে এমন বাইনারি রাজনীতি আর থাকবে না। আমরা বিএনপি বনাম আওয়ামিলীগ, হিন্দু বনাম মুসলিম, জামাতি বনাম বামাতি, প্রগতিশীল বনাম প্রতিক্রিয়াশীল দেখতে চাইনা। পরবর্তী সরকার কেবিনেটে আমরা চাই একটা মিশ্র পার্লামেন্ট যেখানে সবাই যুক্তিতর্কের মাধ্যমে দেশের প্রয়োজনীয় উন্নয়ন এবং অগ্রগতিতে কাজ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, একটা জাতিকে আপনি যদি সারাজীবনের জন্য পঙ্গু করে দিতে চান তবে তাদেরকে মূর্খ করে রাখুন। আমার এই একটা লাইন আপনাদেরকে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বিগত কয়েক বছর বা কয়েক দশকের ফ্ল্যাশব্যাকে নিয়ে যাবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় যে পরিমান অযৌক্তিক পরিবর্তন আমরা প্রতিবছর দেখি, স্কুল পর্যায়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেওয়ার খুবই সুক্ষ্ম পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে আসছে। সিলেবাস, বই, পরিক্ষা, কিংবা ক্লাস কারিকুলাম হাতের মোয়া না যে আমরা প্রত্যেক বছর ইচ্ছা হলেই পরিবর্তন করে নতুন নতুন এক্সপেরিমেন্ট করবো। আজকে শর্ট সিলেবাস কালচার, আর অনুকরনীয় শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আমাদেরকে স্কুল এবং কলেজের কারিকুলামে যৌক্তিক বিষয়ের উপর পাঠদান নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সবাই হয়তো নেপোলিয়ন বোনাপার্টকে চিনি, "তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো"! আইরোনিক্যালি বাবা মা যদি পড়াশুনা না জানেন তাও একটা সন্তান কিন্তু অনেক দূর যেতে পারে শিক্ষাদিক্ষা নিয়ে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের মাঝে আজকে উপস্থিতিদের মধ্যে খুঁজলেই এমন পেয়ে যাবো। কিন্তু সমস্যাটা কোথায় জানেন? যারা আমাদেরকে শিক্ষা দিবে তাদের মাঝে। আমরা ইউনিভার্সিটির শিক্ষক নিয়োগে রাজনৈতিক মদদ দেখেছি। একটা ফ্যাসিস্ট সরকার পরিবর্তনের পর যত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিজে থেকে পদত্যাগ করেছেন, এমন লজ্জার নজির অন্য কোনো দেশে আছে কি না আমরা জানিনা। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শিক্ষক ভাইস চ্যান্সেলর হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন উনার রেসুম্যি ৬৫ পৃষ্ঠার। অথচ এর আগে নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসি শুধু আওয়ামিলীগ করলেই হইতো। রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে তো ভিসি লবিং এর মাধ্যমে নিজের মেয়ে জামাইকে লেকচারার পদে আসীন করেছিলেন। আমরা চাই এসব বন্ধ হোক। ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানিরা বুদ্ধিজীবী নিধন করে গেছিলো যেনো একটা জাতি মেধাশুন্য হয়ে যায়। সেই প্রক্রিয়া আমরা রাজনৈতিক দলের কর্মীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার মাধ্যমে দ্বিতীয়বার জাতিকে মেধাশুন্য করার উদ্দেশ্য হিসেবে ধরে নিতেই পারি। দেশের সর্বচ্চো বিদ্যাপিঠে আমরা চাই যোগ্য শিক্ষক, যারা রাজনীতি নয় বরং রিসার্চ এবং ইনোভেশন নিয়ে কথা বলবে।
ছাত্রনেতারা বলেন, এই দুর্নীতি মনোপলি থেকে বের হতে চাইলে আমাদের প্রয়োজন বেকারত্ব দূর করা। কলেজ এবং ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন প্রয়োজন পার্ট টাইম কাজের সূযোগ করে দেওয়া। বিভিন্ন কোম্পানির আন্ডারে যোগ্যতা অনুযায়ী ইন্টার্নির সূযোগ দেওয়া, বা সরকারি কাজে সহায়তার সূ্যোগ করে দেওয়া। এতে ছাত্রসমাজ, যুবসমাজ কোনো ভাইয়ের তাবেদারি করবে না। শিক্ষাজীবন শেষে কর্ম ক্ষেত্রে যাওয়ার সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের থাকবে কাজের অভিজ্ঞতা এবং সরকারি চাকরির প্রতি কমবে চাহিদা। কারিগরি শিক্ষা সবার জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে। আমরা ছাত্রসমাজকে যতো বেশি ক্রিয়েটিভ রাখবো, আমাদের দেশের মানবসম্পদ ততো বেশি ডাইভার্সড এবং শক্ত হবে।