ইউক্রেন যুদ্ধে কৌশল বদলাচ্ছে রাশিয়া!

নতুনধারা
  ২৭ মার্চ ২০২২, ০৯:৩৮
আপডেট  : ২৮ মার্চ ২০২২, ১২:১১

ইউক্রেনে রুশ সামরিক আগ্রাসন এক মাস পেরিয়ে গেছে। আপাতদৃষ্টিতে এখনো বড় ধরনের সাফল্য পায়নি রাশিয়া। পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেনে ধারণার চেয়ে অনেক বেশি প্রতিরোধের মুখে পড়েছে রুশ বাহিনী। এ অবস্থায় রাশিয়ার পক্ষ থেকে যুদ্ধের লক্ষ্য ও কৌশল পরিবর্তনের কথা জানানো হয়েছে।

শুক্রবার রাশিয়ার সেনাবাহিনীর অপারেশন বিভাগের প্রধান সের্গেই রুদস্কই বলেন, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের ডনবাস অঞ্চলের ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ নিশ্চিত করাই হবে এখন থেকে রুশ সেনাদের প্রধান লক্ষ্য। ২০১৪ সালে রুশ সমর্থিত বিদ্রোহীরা ডনবাসের বেশ কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়, যার পর থেকে ঐ অঞ্চলে বিদ্রোহী এবং ইউক্রেনিয়ান সৈন্যদের মধ্যে লড়াইতে কম-বেশি ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।


রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ দুটো ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য ছিল— একটি পুরো ইউক্রেন এবং অন্যটি শুধু ডনবাস। রুশ সেনাবাহিনীর অপারেশনস বিভাগের প্রধানকে উদ্ধৃত করে রুশ সরকারি বার্তা সংস্থায় প্রচারিত খবর অনুযায়ী— রাশিয়া হয়তো ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে তাদের লক্ষ্য হাসিলের মাত্রা কমিয়েছে। কারণ হয়তো দেশের উত্তরে এবং রাজধানী কিয়েভে রুশ সৈন্যরা শক্ত প্রতিরোধের মুখে পড়ছে। সের্গেই রুদস্কই বলেছেন, লুহানস্ক ওব্লাস্ট অঞ্চলের ৯৩ শতাংশ এবং দোনেত্স্ক ওব্লাস্ট অঞ্চলের ৫৪ শতাংশ এখন রুশ সেনাদের দখলে। তিনি বলেন, গত এক মাসের যুদ্ধে রাশিয়া ইউক্রেনের বিমান বাহিনী এবং নৌবাহিনীর সিংহভাগ ধ্বংস করে যুদ্ধের প্রথম ধাপটি সাফল্যের সঙ্গে শেষ হয়েছে। এখন থেকে ইউক্রেনের পূর্বাংশের নিয়ন্ত্রণ দখলই রাশিয়ার প্রধান লক্ষ্য হবে।

হয়তো ইউক্রেন নিয়ে মস্কোর যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল, সেখানে কাটছাঁট করতে হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সেটা এখনো পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে বলার সময় আসেনি। কিন্তু সেখানে কর্মকাণ্ডে একটা পরিবর্তন যে ঘটছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে। ডনবাস অঞ্চলের স্বাধীনতা নিশ্চিতের ওপরই এখন জোর দিচ্ছে। সেখানে তারা কিছুটা সাফল্যও পেয়েছে। ইউক্রেনের অন্যান্য এলাকায় রাশিয়ান বাহিনীর গতি স্হবির হয়ে পড়েছে। কিয়েভের চারদিকের অবস্হানগুলো থেকে হটিয়ে দেওয়া হয়েছে রাশিয়ান বাহিনীকে। সেখানে তারা ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে অথবা প্রতিরক্ষামূলক অবস্হান তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে।


ব্রিটিশ গোয়েন্দা বিষয়ক পরামর্শক সংস্হা সিবিলাইনের প্রধান নির্বাহী এবং সাবেক ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা জাস্টিন ক্রাম্প বিবিসিকে বলেন, রাশিয়া গত এক মাসে তাদের যুদ্ধে তেমন সাফল্য পায়নি এবং তার প্রধান কারণ তারা একসঙ্গে অনেকগুলো ফ্রন্টে লড়াই করছে। একজন পশ্চিমা কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়া বুঝতে শুরু করেছে যে, একই সঙ্গে অনেক দিকে চালানো তাদের এই অভিযান সফল হবে না। রাশিয়ায় ১০টির মতো নতুন কৌশলগত ব্যাটেলিয়ন গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। সেগুলো এখন ডনবাসের পথে রয়েছে।

দোনেত্স্ক এবং লুহানস্কের যেসব এলাকায় দখল বাকি রয়েছে, সেখানে হয়তো রুশ সেনাদের নতুন করে অভিযান চালাতে দেখা যাবে। যার ফলে তারা খারকিভ এবং ইজিয়ামের দিকে থাকা বাহিনীগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্হাপন করতে পারবে। রাশিয়া যদি শেষ পর্যন্ত আযভ সমুদ্রের পাশে মারিওপোলের সমুদ্রবন্দর দখল করে নিতে পারে, তাহলে তাদের অন্য বাহিনীগুলো সহজে উত্তরের দিকে অগ্রসর হতে পারবে। তখন হয়তো তারা ইউক্রেনের বাহিনীগুলোকে ঘিরে ফেলতে পারবে। তবে তাদের এই লক্ষ্যগুলোর অনেকগুলো এখন আর পূরণ করা সম্ভব নয় বলে মনে হচ্ছে। খবর বিবিসি, আলজাজিরার।