গ্যাভির প্রতিবেদন

টিকা গ্রহণেই করোনা প্রতিরোধে সাফল্য বাংলাদেশে

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:২৪

টানা দুবছর করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও বিভীষিকাময় সময় পার করেছে। তবে করোনা প্রতিরোধী টিকা সংগ্রহ সরকারের ত্বরিত উদ্যোগ ও ব্যাপক টিকাদান কর্মসূচির ফলে বর্তমানে দেশে করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে বর্তমানে দেশে করোনা শনাক্তের হার এক শতাংশেরও নিচে রয়েছে। এ ছাড়া এখন প্রায় সময়ই বাংলাদেশ করোনায় মৃত্যুহীন দিন পার করছে। বাংলাদেশের এ সাফল্যের পেছনে শিশুসহ সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে ব্যাপক টিকাদানের অবদান রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন টিকা নিয়ে কাজ করা জোট গ্যাভির নিজস্ব সাইটে গত বৃহস্পতিবার এ নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। 
প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারীকালের মারাত্মক ব্যাঘাত সত্ত্বেও বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আবার শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসছে। যার লক্ষণ বলছে করোনা মাহামারী সত্যিকার অর্থে কিছু বাংলাদেশিকে টিকাদানের মূল্য বুঝতে সাহায্য করেছে। পাবনা জেলার কাজীপুর গ্রামের গৃহবধূ সুমি খাতুন বলেন, কিছু কুসংস্কারের কারণে আগে আমি যে কোনো টিকা নিতেই ভয় পেতাম। কিন্তু কোভিড ১৯-এর কারণে বহু মানুষ যখন মারা যেতে শুরু করল, তখন আমিও টিকা নিতে বাধ্য হয়েছি। কোভিডের টিকা নেওয়ার পর আমি রোগ প্রতিরোধে টিকার তাৎপর্য বুঝতে পেরেছি। আমি আমার শিশু সন্তানকেও সময় মতো টিকা দিতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। তাকে আমি সব ইপিআই টিকা দিয়েছি।
শুধু কোভিড নয়, গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ বিভিন্ন রোগের টিকাদানের তুলনামূলকভাবে উচ্চহার বজায় রেখেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফের তথ্য বলছে, ২০০৫ সাল থেকে প্রতি বছর বাংলাদেশে ডিপথেরিয়া, পের্টুসিস এবং টিটেনাস টিকা (ডিটিপি৩) প্রদানের হার সাধারণভাবে ৯৯ থেকে ৯৮ শতাংশের মধ্যে ছিল। তবে ২০২০ সালে কোডিভ ১৯-এর প্রকোপ শুরু হলে লকডাউন, অর্থনৈতিক ব্যাঘাত এবং সংক্রমণ উদ্বেগের মধ্যে দেশের টিকাদান কর্মসূচি পরীক্ষার মধ্যে পড়ে। পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী মোহাম্মদ সাহিকুল ইসলাম বলেন, করোনার সময় রুটিন ইপিআই টিকা নেওয়ার জন্যও আমি আমার বাড়িতে কাউকে ঢুকতে দিতাম না। মহামারীকালে এভাবে বহু শিশু টিকাবঞ্চিত হয়েছে। তবে পরে আমরা তা পুষিয়ে দিয়েছি।
শুধু বাংলাদেশ নয়, মহামারীকালে বিশ্বজুড়ে টিকাদান কর্মসূচির গল্পগুলো একই রকমের। ফলে ইপিআই টিকাদান হারের ব্যাপক পতন ঘটে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ইপিআই টিকাদানের পয়েন্ট পাঁচ শতাংশ কমেছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে এক ডোজ ইপিআই টিকা না নেওয়া শিশুদের সংখ্যা ১৩ থেকে ১৮ মিলিয়নে পৌঁছেছে। কিন্তু এর মধ্যেই বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচি এগিয়ে চলেছে। ডিরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসের (ডিজিএইচএস) প্রোগ্রাম ম্যানেজার (ইপিআই) ডা. এসএম আবদুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, কোভিড মহামারীর শুরুতে দেশব্যাপী লকডাউন এবং সংক্রমণ নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্কের কারণে গ্রাম ও শহর উভয় ক্ষেত্রেই রুটিন টিকাদান চালিয়ে যাওয়া কঠিন ছিল।
বাংলাদেশের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে প্রতিবছর প্রায় ৪০ লাখ শিশুকে টিকাদানের লক্ষ্য ঠিক করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিএইচআইএস২-তে রেকর্ড করা তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের এপ্রিল ও মে মাসে ২ লাখ ৮৪ হাজারের বেশি শিশু ডিপথেরিয়া, টিটেনাস, পার্টুসিস, হিমোফিলিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি এবং হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ থেকে রক্ষার সমবেত টিকা বা পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন পায়নি। তবে গল্প শেখানেই শেষ হয়ে যায়নি। ডা. মুরাদ জানান, টিকাদানে ড্রপআউটের হার উদ্বেগজনক ছিল। ফলে এখন প্রাক কোভিড সময়ের মতো ইপিআই টিকাদানের হার বাড়াতে জোরাল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সাধারণভাবে যে শিশুরা ২০২০ এবং ২০২১ সালে মহামারীর কারণে নিয়মিত ইপিআই টিকাদান থেকে বাদ পড়েছিল, তাদের চিহ্নিত করা হয়। পরে ২০২১ এবং ২০২২ সালে তাদের দেওয়া হয় প্রয়োজনীয় টিকা। এভাবে আমরা রুটিন টিকাদানের পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছি। মূলত কোভিড মহামারী আমাদের শিখিয়েছে, কীভাবে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য পরিষেবা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সক্ষমতা বাড়াতে হয়।