আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং এর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন আইসিসির প্রধান কৌশুলি করিম খান। আইসিসির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদ বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়। এ বিষয়ে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের মুখপাত্রের পক্ষ থেকে এখনো কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সংঘটিত অপরাধ তদন্ত করে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে আইসিসি বলছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং অপরাধমূলক দায় বহন করে।
এ বিষয়ে করিম খান বলেন, এটি মিয়ানমার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইসিসির প্রথম গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন। আগামীতে আরও আবেদন করা হবে। তিনি আরও জানান, আইসিসির স্বাধীন বিচারক প্যানেল পরোয়ানা জারি করলে তা বাস্তবায়নে আদালতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করা হবে।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর দমন পীড়নের মুখে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। সরকারি হিসেবে সব মিলে বর্তমানে সে সংখ্যা ১২ লাখের বেশি। যেটা জাতিসংঘ জাতিগত নিধনের উদাহারণ হিসেবে পাঠ্যপস্তুকে লিপিবদ্ধ করার কথা জানায়।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের সভাপতি ডা. জুবায়ের বলেন, নিরাপরাধ রোহিঙ্গা বিরুদ্ধে গণহত্যার জন্য দায়ি সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। তার নির্দেশেই মিয়ানমার সেনাবাহিনী হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা ও কিশোরী-নারীদের নৃশংস নির্যাতন চালায়।
জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ে তদন্ত বিভাগের প্রধান নিকোলাস কোমজিয়ান বলেন, মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং এর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন অন্যান্যদের জন্য একটি বার্তা বহন করে যে কোনো ব্যক্তিই আইনের উর্ধ্বে নয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের তিন বিচারকের একটি প্যানেল মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং এর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন। তবে, এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে তেমন ধরা বাধা সময় নেই। কিন্তু গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে সাধারণত তিন মাসের মতো সময় লাগতে পারে।
সর্বশেষ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও দেশটির সাবেক প্রতিরক্ষা প্রধান ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা নিয়ে ওয়াশিংটন থেকে তীব্র রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছে আইসিসি। এর মধ্যেই মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নিলেন আইসিসির প্রধান কৌশুলি।