যুক্তরাষ্ট্রে গ্যালিয়াম, জার্মেনিয়াম ও অ্যান্টিমনির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দ্রব্য রফতানি নিষিদ্ধ করেছে চীন। এসব দ্রব্য সামরিক খাতে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। চীনা বৈদ্যুতিক চিপের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার জবাবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
জাতীয় নিরাপত্তায় ঝুঁকি থাকতে পারে এমন দ্বৈত-ব্যবহারযোগ্য (সামরিক ও বেসামরিক) পণ্যের ওপর চীনের এই নির্দেশনা কার্যকর হয়েছে। এই নির্দেশনায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রেরিত গ্রাফাইট সামগ্রীর ব্যবহার আরও কঠোরভাবে পর্যালোচনা করার কথাও বলা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গ্যালিয়াম, জার্মেনিয়াম, অ্যান্টিমনি ও 'সুপারহার্ড' উপকরণ যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করা যাবে না।
গত বছর থেকেই গুরুত্বপূর্ণ খনিজের রফতানি সীমিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে চীন। এটি তারই সম্প্রসারণ। তবে নতুন এই নিষেধাজ্ঞা শুধু যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বিশ্বের বৃহত্তম দুটি অর্থনীতির মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধকে আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চীনা কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে গ্যালিয়াম বা জার্মেনিয়ামের প্রক্রিয়াজাত পণ্যের কোনও চালান পাঠানো হয়নি। যদিও গত বছর এই খনিজের জন্য যথাক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম বৃহত্তম বাজার ছিল যুক্তরাষ্ট্র।
গ্যালিয়াম ও জার্মেনিয়াম সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া, ইনফ্রারেড প্রযুক্তি, ফাইবার অপটিক ক্যাবল ও সৌর কোষের মতো খাতেও জার্মেনিয়াম গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, অ্যান্টিমনি পণ্যের রফতানি সীমিত করার পর চীনের অক্টোবর মাসের চালান সেপ্টেম্বরের তুলনায় ৯৭ শতাংশ হ্রাস পায়। অ্যান্টিমনি ব্যবহৃত হয় গোলাবারুদ, ইনফ্রারেড মিসাইল, পারমাণবিক অস্ত্র, নাইটভিশন গগলস, ব্যাটারি ও সৌর প্যানেল তৈরিতে।
২০২৩ সালে, বিশ্বব্যাপী পরিশোধিত গ্যালিয়ামের ৯৮ দশমিক ৮ শতাংশ ও পরিশোধিত জার্মেনিয়ামের ৫৯ দশমিক ২ শতাংশ চীনে উৎপাদিত হয়।
সাপ্লাই চেইন নিয়ে কাজ করা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রজেক্ট ব্লু-এর সহ প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক বেডার বলেছেন, চীনের পদক্ষেপে পশ্চিমা দেশগুলোতে কাঁচামালের সংকট আরও ঘনীভূত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের রটারডামে অ্যান্টিমনি ট্রাইঅক্সাইডের দাম চলতি বছর ২২৮ শতাংশ বেড়ে নভেম্বরের শেষে টনপ্রতি ৩৯ হাজার ডলার হয়েছে।
চীনের সেমিকন্ডাক্টর খাতের ওপর তিন বছরে তৃতীয় দফায় মার্কিন বিধিনিষেধ আরোপের পর এই পদক্ষেপ নিলো চীন।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে চীনের সঙ্গে তীব্র বাণিজ্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনি প্রচারণায়ও চীনের ওপর নিজের আগ্রাসী মনোভাব ব্যক্ত করতে পিছপা হননি তিনি। চীনা পণ্যে ১০ শতাংশ ও চীনা আমদানি পণ্যে ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন তিনি।