টানা তৃতীয় মেয়াদে চীনের রাষ্ট্রনায়ক হলেন শি জিনপিং

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ১১ মার্চ ২০২৩, ১৩:০৩

সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী। গণতান্ত্রিক ও সভ্য এবং সৌহার্দপূর্ণ ও মহান আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ। এই অভিধাগুলো কি চীন দেশের সঙ্গে মানানসই হয়? এ নিয়ে পূর্ব ও পশ্চিমে মতের অনৈক্য অস্বাভাবিক নয়, তা সহজেই অনুমেয়। তবে পুনর্নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সামনে পাঁচ বছরে চীনকে এমন দেশ হিসেবেই গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তিনি গতকাল টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় বলেছেন, ‘চীনকে একটি সমৃদ্ধ, শক্তিশালী, গণতান্ত্রিক, সভ্য, সৌহার্দপূর্ণ ও মহান আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বিনির্মাণ করব।’
চীন প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মাও সেতুং-পরবর্তী নেতাদের মধ্যে শি জিনপিং সবচেয়ে বেশি মেয়াদে দায়িত্ব পাওয়া নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। চীন দেশের প্রায় পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও প্রভাববিস্তারী নেতা। তিনি এমন এক উচ্চতায় আসীন হয়েছেন, এমনকি শির রাষ্ট্রনীতি নামে স্বতন্ত্র ধারণার বিকাশ ঘটেছে গত এক দশকে।
চীনের সংসদ সর্বসম্মতভাবে শিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে গতকাল। তবে গত বছরের অক্টোবরেই এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, তিনি তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন। ওই সময় দেশটির ক্ষমতাসীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) প্রধান হন শি। পাঁচ বছরের জন্য দলটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। ওই সময় আমাদের সময়কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চীনের রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানী য়ু টাও বলেছিলেন, শির নেতৃত্বে ‘আরও সমৃদ্ধ, শক্তিশালী ও কঠোর হবে চীন’।
শির নেতৃত্বে চীন কি আরও শক্তিশালী নাকি দুর্বল হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ড. য়ু টাও ইমেইলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই লেখককে বলেছিলেন, ‘চীনের অনেক মানুষই সম্ভবত বিশ্বাস করেন, শির নেতৃত্বে তাদের দেশ আরও শক্তিশালী হচ্ছে। শির নেতৃত্বে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া অনেকের জীবনমান বেড়েছে। চীনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের যে শত্রুতা, অনেক চীনা মনে করেন, এর মূলে রয়েছে চীনের উত্থানে মার্কিনিদের ঈর্ষা ও নিরাপত্তাহীনতার ভয়।’
তবে ড. টাও আরও বলেন, ‘অনেক বিদেশি ভাষ্যকার অবশ্য মনে করেন, একজন ব্যক্তির ওপর ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা চীনের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে এমন ভুল হয়ে যেতে পারে, যা শোধরানোর সক্ষমতা চীনের নাও থাকতে পারে।’
কিন্তু ড. টাও জোর দিয়ে বলেন, “প্রায় নিশ্চিত করে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের তথাকথিত ‘নিয়মতান্ত্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা’র প্রেসক্রিপশন চীন কিছুতেই মেনে নেবে না।”
শি জিনপিং যে বৈশ্বিক নেতা হিসেবে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন, কতগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তার সাফল্য সে কথাই প্রতীয়মান করে। কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলা, করোনা ভাইরাসের উৎস বিতর্ক, বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগর, তাইওয়ান দ্বন্দ্ব, ইউক্রেন যুদ্ধ, ইরান-সৌদি সম্পর্ক মেরামত এসব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শক্ত, বলা ভালো, ‘উঁচু শির’ হিসেবে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন শি জিনপিং।