রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইগর কিরিলভ হত্যার ঘটনায় দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে অনুষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক টকশোর উপস্থাপক এ হত্যার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, এই হামলার মাধ্যমে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তাঁর নিজের মৃত্যুদণ্ডে সই করেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় এক বিস্ফোরণে ইগর কিরিলভ নিহত হন। এই গুপ্তহত্যার দায় স্বীকার করেছে ইউক্রেন। এর মধ্য দিয়ে প্রায় তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার ভূখণ্ডে দেশটির সবচেয়ে উচ্চপর্যায়ের কোনো সামরিক কর্মকর্তা ইউক্রেনের হামলায় প্রাণ হারালেন। ইগর কিরিলভ রাশিয়ার ‘নিউক্লিয়ার, বায়োলজিক্যাল অ্যান্ড কেমিক্যাল প্রোটেকশন ট্রুপস’ নামে একটি বাহিনীর প্রধান ছিলেন।
ইগর কিরিলভ নিহত হওয়ার পর মস্কোর পরিস্থিতি এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন বিবিসি রাশিয়ার সম্পাদক স্টিভ রোজেনবার্গ।
মস্কোয় বাহ্যিকতা ও বাস্তবতা—এই দুইয়ের মধ্যে একটি বিরামহীন লড়াই চলছে।
প্রায় তিন বছর ধরে ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। তা সত্ত্বেও মস্কোর জনজীবন খুব স্বাভাবিক বলে মনে হতে পারে। মেট্রোতে যাত্রীদের ভিড় থাকছে। পানশালা ও ক্লাবগুলো জমজমাট থাকছে মস্কোর তরুণদের পদচারণে।
তারপর, হঠাৎ করে, মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য কিছু ঘটে। আর তা বলে, আজকের রাশিয়ায় কিছুই স্বাভাবিক নেই।
এই ‘কিছু’ হতে পারে একটি ইউক্রেনীয় ড্রোন, যা মস্কোর আকাশ প্রতিরক্ষায় অনুপ্রবেশ করছে।
অথবা আরও নাটকীয় কিছু। যেমনটা ঘটেছে গতকাল মঙ্গলবার সকালে। এদিন মস্কোর একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় শীর্ষস্থানীয় জ্যেষ্ঠ রুশ জেনারেলকে (ইগর কিরিলভ) নিশানা করে হত্যা করা হয়েছে।
একটি বৈদ্যুতিক স্কুটারে লুকিয়ে রাখা বোমার বিস্ফোরণে ইগর কিরিলভ ও তাঁর সহকারী ইলিয়া পোলিকারপভ নিহত হন।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের যে বাস্তবতা, তা এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ঘরে বসে বসে টের পেল মস্কোবাসী।
অন্তত বিস্ফোরণস্থলের কাছে যাঁদের বসবাস, তাঁরা টের পেয়েছেন।
মস্কোর বিস্ফোরণস্থলের কাছের একটি ভবনে থাকেন লিজা। তিনি বিবিসির এই প্রতিবেদককে বলেন, ঘটনাটি সম্পর্কে খবরের কাগজে পড়াটা একটা ব্যাপার। তখন এটিকে অনেক দূরের ঘটনা মনে হয়। কিন্তু যখন তা পাশে ঘটে, তখন তা সম্পূর্ণ ভিন্ন ও ভীতিকর একটা ব্যাপার।
লিজা বলেন, এত দিন পর্যন্ত যুদ্ধকে মনে হচ্ছিল, তা যেন অনেক দূরে ঘটছে। এখন এখানে কেউ মারা গেছেন। ফলে যুদ্ধের পরিণতি এখন এখানে বসেই অনুভব করা যায়।
উদ্বেগ অনেক বেড়ে গেছে জানিয়ে লিজা বলেন, তাঁর শোনা প্রতিটি শব্দই তাঁকে বিচলিত করে। চমকে উঠে তাঁর মনে হয়, এটি ড্রোন নাকি কোনো নির্মাণকাজের শব্দ।
মস্কোর ইউক্রেন যুদ্ধ দূরের কিছু—রুশদের এমন ভাবনার কথা বিবিসির এই প্রতিবেদক রাশিয়ায় প্রায়ই শুনেছেন।