সিরিয়া আবারও মুক্ত হবে: ক্ষমতাচ্যুত আসাদের বিবৃতি  

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:১৬

সিরিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীর অভিযানের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন বাশার আল-আসাদ। বর্তমানে তিনি রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। সোমবার টেলিগ্রাম চ্যানেলে এক বিবৃতি প্রকাশ করেছেন এই ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি সিরিয়ায় ছিলেন এবং ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি সিরিয়া ছেড়ে যাননি।
মস্কো থেকে আসাদের জারি করা ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিরিয়াজুড়ে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর তাহরির আল-শামের নেতৃত্বে সশস্ত্র দলটি যখন গত ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দামেস্কে পৌঁছায় তখন প্রেসিডেন্টের ভাগ্য এবং অবস্থান সম্পর্কে নানা গুজব প্রকাশ হতে থাকে। এসব ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি এবং বানানো গল্প সত্য থেকে সম্পূর্ণ দূরে ছিল। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদকে সিরিয়ার মুক্তির বিপ্লবী আন্দোলন হিসাবে উপস্থাপন করাই এর প্রধান লক্ষ্য ছিল।
দেশের ইতিহাসের এই সংকটময় মুহুর্তে যখন সত্যকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত তখন এসব বিকৃতি এবং গুজবগুলোর উত্তর দেওয়া প্রয়োজন মনে করেছেন বলেই বিবৃতিতে উল্লেখ করেন তিনি।
আসাদ বলেন, সিরিয়া থেকে আমার প্রস্থান পরিকল্পিত ছিল না যেমনটি যুদ্ধের শেষ সময় কেউ কেউ দাবি করেছেন। ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমি দামেস্কেই ছিলাম এবং সে সময় পর্যন্ত আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। সন্ত্রাসী বাহিনী দামেস্কে অনুপ্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে আমাকে লাতাকিয়াতে (হামিমিম ঘাঁটি) স্থানান্তর করা হয় যেন আমাদের রুশ মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে যুদ্ধ কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করা যায়।
সেদিন সকালে হামিমি বিমান ঘাঁটিতে পৌঁছে এটা পরিষ্কার হয়ে গেল যে আমাদের বাহিনী যুদ্ধের সব ফ্রন্ট থেকে নিজেদের পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নিয়েছে এবং শেষ সেনা অবস্থানগুলো ভেঙে পড়েছে। মাঠের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার সাথে সাথেই রাশিয়ান সামরিক ঘাঁটি নিজেই ভারী ড্রোন হামলার মুখে পড়ে।
সে সময় ঘাঁটি থেকে বেরিয়ে আসার কোনো উপায় ছিল না। তাই মস্কো অনুরোধ করেছিল যে, বেস কমান্ড ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাশিয়ায় অবিলম্বে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। দামেস্কের পতনের একদিন পর এবং সামরিক অবস্থানের চূড়ান্ত পতন এবং অবশিষ্ট সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের অচলাবস্থার পর এটাই ঘটেছিল।
এসব ঘটনার কোনো পর্যায়েই আমি পদত্যাগ বা উদ্বাস্তু হওয়ার কথা ভাবিনি এবং কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এমন কোনো প্রস্তাবও করা হয়নি। একমাত্র সম্ভাব্য পদক্ষেপ ছিল সন্ত্রাসী আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া।
আমি জোর দিয়ে বলছি, যে ব্যক্তি যুদ্ধের প্রথম দিন থেকে তার ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য, তার দেশের পরিত্রাণের জন্য দর কষাকষি করতে অস্বীকার করেছে এবং তার জনগণকে অসংখ্য প্রস্তাব এবং প্রলোভনের বিরুদ্ধে ঝুঁকি নিতে অস্বীকার করেছে। এই ব্যক্তি সেই একই ব্যক্তি যিনি সন্ত্রাসীদের থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে সবচেয়ে বিপজ্জনক ও তীব্র যুদ্ধক্ষেত্রে সামনের সারিতে থাকা সেনা কর্মকর্তা ও সৈন্যদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
আসাদ বলেন, আমি সেই ব্যক্তি যে যুদ্ধের অন্ধকারতম বছরগুলোতেও দেশ ত্যাগ করিনি, পরিবার এবং আমার জনগণের সাথে থেকেছি এবং ১৪ বছরের যুদ্ধে রাজধানীতে সন্ত্রাসীদের বোমা হামলা এবং বারবার হুমকির পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসবাদকে প্রতিহত করেছি। যে ব্যক্তি ফিলিস্তিন ও লেবাননের প্রতিরোধকে কখনোই পরিত্যাগ করেনি এবং তার পাশে দাঁড়ানো মিত্রদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি সে তার জনগণকে পরিত্যাগ করতে পারে না।
আসাদ আরও বলেন, আমি কখনো ব্যক্তিগত লাভের জন্য পদ চাইনি। আমি সর্বদা নিজেকে সিরিয়ার জনগণের বিশ্বাস দ্বারা সমর্থিত একজন জাতীয় অভিভাবক হিসাবে বিবেচনা করেছি।
তিনি বলেন, জনগণের ইচ্ছাশক্তি ও রাষ্ট্রকে রক্ষা করার, প্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্ষা করার এবং তাদের পছন্দগুলোকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বহাল রাখার জন্য অটুট প্রত্যয় আমার রয়েছে। রাষ্ট্র যখন সন্ত্রাসবাদের হাতে পড়ে এবং অর্থবহ অবদান রাখার ক্ষমতা হারিয়ে যায় তখন যে কোনো অবস্থানই উদ্দেশ্যহীন হয়ে পড়ে আর দখলদারিত্বকে অর্থহীন করে তোলে। এটি কোনোভাবেই সিরিয়া ও জনগণের প্রতি আমার গভীর অনুভূতিকে কমিয়ে আনবে না। সিরিয়া আবারও মুক্ত ও স্বাধীন হবে বলেও বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করা হয়।

সূত্র: পার্স ট্যুডে