সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে মার্কিন কূটনীতিকরা সিরিয়ার নতুন শাসক গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) এই বৈঠকের মাধ্যমে ওয়াশিংটন প্রথমবারের মতো সরাসরি এই গোষ্ঠীর পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইবে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা শক্তি বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনে সন্তুষ্ট হলেও, এইচটিএস ভবিষ্যতে কঠোর ইসলামি শাসন আরোপ করবে নাকি গণতন্ত্রমুখী নমনীয় নীতি গ্রহণ করবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র জানান, বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা এইচটিএস প্রতিনিধিদের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি ও সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার বিষয়ে আলোচনা করবেন। আলোচনার বিষয়বস্তুতে সিরিয়ার রাজনৈতিক রূপান্তর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে রয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক শীর্ষ কূটনীতিক বারবারা লিফ, প্রেসিডেন্টের বন্দি বিষয়ক দূত রজার কারস্টেন্স এবং সিরিয়া সংশ্লিষ্ট সিনিয়র উপদেষ্টা ড্যানিয়েল রুবিনস্টেইন। আসাদ সরকারের পতনের পর এটিই প্রথম কোনও মার্কিন প্রতিনিধিদলের দামেস্ক সফর।
লিফের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে পরিকল্পিত এক সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়েছে। বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
পশ্চিমা সরকারগুলো ধীরে ধীরে এইচটিএস এবং এর নেতা আহমেদ আল-শারা’র সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করছে। এদিকে, এই গোষ্ঠীর সন্ত্রাসী তকমা সরিয়ে নেওয়া হবে কিনা তা নিয়েও আলোচনা চলছে। মার্কিন প্রতিনিধিদের সফরটি সম্প্রতি ফ্রান্স ও ব্রিটেনের সঙ্গে হওয়া যোগাযোগের ধারাবাহিকতা।
মার্কিন প্রতিনিধিরা ২০১২ সালে সিরিয়ায় নিখোঁজ সাংবাদিক অস্টিন টাইস এবং আসাদের শাসনামলে নিখোঁজ অন্যান্য মার্কিন নাগরিকদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে সচেষ্ট থাকবেন।
বৃহস্পতিবার দামেস্কের কেন্দ্রীয় উমাইয়া স্কয়ারে কয়েকশো সিরিয়ান গণতান্ত্রিক ও নারীদের সমান অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। বাশার আল-আসাদের পতনের পর এটাই প্রথম এ ধরনের জমায়েত।
সিরিয়ার নতুন প্রশাসনের সম্ভাব্য কঠোর ইসলামি শাসন নিয়ে জনগণের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। এরই মধ্যে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের মুখপাত্র ওবাইদা আরনাউত বলেছেন, জৈবিক ও শারীরবৃত্তীয় গঠনের কারণে সরকারি কাজে নারীদের সক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের মুখপাত্র থামিন আল-খিতান জানিয়েছেন, আসাদের পতনের পর প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ মানবাধিকার কর্মকর্তাদের একটি ছোট দল আগামী সপ্তাহে সিরিয়া সফর করবে।
২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর বিদ্রোহীরা দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নেয়। দীর্ঘ ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধ শেষে আসাদকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে তারা। এই বিদ্রোহে আসাদের কয়েক দশকের শাসনের অবসান ঘটে।
বিদ্রোহীরা কারাগার ও সরকারি অফিস খুলে দেওয়ায় যুদ্ধকালীন অপরাধের জন্য বিচার নিশ্চিতের আশা সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিদ্রোহের পরবর্তী সরকার সুশৃঙ্খল রূপান্তর নিশ্চিত করতে পারবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেছে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা উদ্বেগ জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে আইএস আবার সক্রিয় হতে পারে। এছাড়া তুরস্ক-সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত কুর্দি মিলিশিয়াদের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।