জার্মানির ম্যাগডেবার্গের ব্যস্ত ক্রিসমাস বাজারে গাড়িচাপার ঘটনায় নিহত বেড়ে পাঁচজনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২০০ জন। এ ঘটনায় গাড়িচালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি ৫০ বছর বয়সী সৌদি আরবের নাগরিক ও তিনি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জার্মানিতে স্থায়ীভাবে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে অতীতে একাধিকবার ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে।
জার্মান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তালেব আল-আবদুল মোহসেন নামের ওই চিকিৎসক মার্কিন একটি অ্যাকটিভিস্ট গ্রুপের সদস্য। তিনি কেন এই ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা জানার চেষ্টা করছে। সন্দেহভাজন এই ব্যক্তির অতীতে ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য দেওয়ার ইতিহাস রয়েছে ও দাবি করেছেন- তিনি সৌদি আরবের নাগরিকদের, বিশেষ করে নারীদের দেশ থেকে পালাতে সহায়তা করেছেন।
ম্যাগডেবার্গ পাবলিক প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের প্রধান হর্স্ট ওয়াল্টার নোপেন্স বলেছেন, তার কার্যালয়ের সন্দেহভাজনের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে আরও সময় প্রয়োজন। তবে সম্ভবত তিনি সৌদি শরণার্থীদের প্রতি জার্মানির আচরণে অসন্তুষ্ট ছিলেন। এর আগে, গত শুক্রবার ম্যাগডেবার্গে ক্রিসমাস বাজারে গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। নোপেন্স ইঙ্গিত দিয়েছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাঁচটি হত্যাকাণ্ড ও ২০৫টি হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হতে পারে।
তালেব আল-আবদুল মোহসেন ২০০৬ সালে প্রথম জার্মানিতে আসেন ও দেশটিতে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পান। স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তামারা জিশচাং জানিয়েছেন, এই ব্যক্তি বার্নবুর্গ শহরে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতেন। এই শহর রাজ্যের রাজধানী ম্যাগডেবার্গ থেকে প্রায় ২৫ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স মার্কিন অধিকার গোষ্ঠী আরএআইআর ফাউন্ডেশনের কাছে থেকে নিয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তির একটি ছবি প্রকাশ করেছে। ফাউন্ডেশন এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা গত ১২ ডিসেম্বর তালেব আল-আবদুল মোহসেনের একটি সাক্ষাৎকার নেন। সেখানে তিনি নিজেকে ‘সৌদি আরব থেকে নিপীড়নের শিকার নির্বাসিত শরণার্থীদের সাহায্যকারী’ হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন।
জার্মান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তি একাই কাজ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে ও তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ব্যক্তির বলে ধারণা করা একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য দিয়েছেন ও নিজেকে একজন সৌদি ভিন্নমতাবলম্বী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি প্রকাশ্যে তার ইসলামধর্ম ত্যাগের কথা বলেছেন, জার্মানির কট্টর-ডানপন্থি দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় নোপেন্স বলেন, সৌদি আরব থেকে আসা শরণার্থীদের প্রতি জার্মানির আচরণে ‘অসন্তুষ্টি’ সন্দেহভাজন ব্যক্তির এই ঘটনা ঘটানোর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। তবে তাঁর কার্যালয় বিস্তারিত জানার জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে।
এদিকে, সৌদি কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই এই সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিষয়ে বেশ কয়েকবার জার্মানির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিল বলে সিএনএনকে জানিয়েছে দুটি সূত্র। সৌদি আরব ২০০৭ সালে প্রথম সতর্কবার্তা দিয়েছিল। এ ছাড়া, সৌদি আরব ২০০৭-২০০৮ সালের মধ্যে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণের জন্য জার্মানির কাছে অনুরোধ করেছিল, কিন্তু জার্মান কর্তৃপক্ষ প্রত্যর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। কারণ তারা সন্দেহ করেছিল যে তিনি দেশে ফেরার পর নিরাপত্তাহীনতায় পড়তে পারেন।
জার্মানিতে ক্রিসমাস মার্কেটে গাড়ি হামলায় নিহত ২, সৌদি নাগরিক গ্রেপ্তারজার্মানিতে ক্রিসমাস মার্কেটে গাড়ি হামলায় নিহত ২, সৌদি নাগরিক গ্রেপ্তার
আরেকটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, সৌদিরা এই ব্যক্তির বিষয়ে চারটি আনুষ্ঠানিক নোটিফিকেশন পাঠিয়েছিল। এর মধ্যে তিনটি জার্মান গোয়েন্দা পরিষেবাগুলোকে এবং একটি দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। সূত্রটি বলেছে, সব সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেছে জার্মান কর্তৃপক্ষ।
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজার শনিবার এই ব্যক্তিকে ‘ইসলামবিদ্বেষী’ বলে বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি তার বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি। তিনি উল্লেখ করেছেন, তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে ও নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ হামলার পেছনের প্রেক্ষাপট খতিয়ে দেখছে। এখনো পর্যন্ত হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।