তিব্বতের পূর্ব সীমান্তে বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ নির্মাণের এক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়েছে চীন। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ভাটিতে থাকা ভারত ও বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের ওপর তার প্রভাব পড়তে পারে। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই খবর জানা গেছে।
পাওয়ার কন্সট্রাকশন কর্প অব চায়নার ২০২০ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ইয়ারলুং ঝাংবো নদীর নিম্নাঞ্চলে এই বাঁধটি নির্মিত হবে। এই প্রকল্প থেকে বছরে ৩০০ বিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধটিও চীনে অবস্থিত। দেশটির মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত থ্রি গোর্গেস ড্যামের বার্ষিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৮৮ দশমিক ২ বিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা। অর্থাৎ, নতুন প্রকল্পের ক্ষমতা হতে পারে এর প্রায় সাড়ে তিন গুণ বেশি।
থ্রি গোর্গেস ড্যামের চেয়ে এই প্রকল্পের ব্যয়ও অনেক বেশি। কারিগরি খরচসহ সব মিলিয়ে এই প্রকল্পের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রায় ১৪ লাখ লোককে পুনর্বাসন ব্যয়ও এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বুধবার চীনের বার্তাসংস্থা জিনহুয়া জানিয়েছে, কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে চীনের লক্ষ্য পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এই প্রকল্প। এটি বাস্তবায়ন হলে প্রকৌশলের মতো বাঁধ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাত ও তিব্বতে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
প্রাকৃতিক কারণে ইয়ারলুং ঝাংবো নদী নতুন প্রকল্পের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। বাঁধ নির্মাণের জন্য যে স্থানটি নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে মাত্র ৫০ কিলোমিটার গতিপথের মধ্যে ২০০০ মিটারের বেশি গভীরতায় নদীটির পানি পতিত হয়। ফলে এখানকার স্থিতিশক্তিকে বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তরের বিপুল সম্ভাবনার পাশাপাশি অসংখ্য কারিগরি চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
এই প্রকল্পের কারণে ঘর ছাড়তে বাধ্য হওয়া মানুষের সম্ভাব্য সংখ্যা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া, বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ বাস্তুসংস্থান এই তিব্বত উপত্যকায় প্রস্তাবিত বাঁধের পরিবেশগত প্রভাব নিয়েও তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
অবশ্য চীনা কর্মকর্তাদের দাবি, প্রস্তাবিত প্রকল্পে পরিবেশ বা ভাটির পানি প্রবাহে মারাত্মক কোনও প্রভাব পড়বে না।
আঞ্চলিক বাস্তুসংস্থানের নকশা পালটে দেওয়া ও ভাটির দিকে নদীর গতিপথ বদলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলেও, বাংলাদেশ ও ভারতের দিক থেকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়নি।
তিব্বতের সীমানার বাইরে এই ইয়ারলুং ঝাংবো নদীটি ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত। এটি ভারতের অরুণাচল ও আসাম প্রদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তারপর বাংলাদেশে প্রবেশ করে।