যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘শক্তিশালী’ বলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। আশা প্রকাশ করে জেলেনস্কি বলেছেন, ট্রাম্প রাশিয়াকে শান্তি আলোচনায় বসতে বাধ্য করতে এবং ইউক্রেনে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারবেন।
মার্কিন পডকাস্টার লেক্স ফ্রিডম্যানের সঙ্গে তিন ঘণ্টার আলাপচারিতায় জেলেনস্কি বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর সমর্থনে আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের পথ উন্মুক্ত করে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন ট্রাম্প।
নববর্ষ উপলক্ষে কিয়েভে দেওয়া সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘ট্রাম্প ও আমি একটি চুক্তিতে আসব এবং...ইউরোপের সঙ্গে একত্রে শক্তিশালী নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেব। এরপর আমরা রুশদের সঙ্গে কথা বলতে পারি।’
এদিকে ট্রাম্প প্রায়ই জেলেনস্কিকে ‘বিক্রেতা’ বলে উপহাস করেছেন। অথচ খুব কমই রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা করেছেন। এমনকি রুশ এই নেতার প্রশংসা করেও কথা বলেছেন তিনি।
নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় যাওয়ার পরপরই ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। যদিও সেটি কীভাবে করবেন, তা বলেননি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের অধীন ইউক্রেনকে দেওয়া ব্যাপক সামরিক সহায়তার তীব্র সমালোচনাও করেছেন ট্রাম্প। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা অব্যাহত রাখার বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি।
তবে জেলেনস্কি ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টা ইলন মাস্কের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, প্রতিবেশী রাশিয়ার আক্রমণকে অন্তত স্থগিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা আছে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের।
জেলেনস্কি বলেন, ‘আমার মনে হয়, ট্রাম্পের শুধু ইচ্ছাই নয়, বরং সব ধরনের সম্ভাবনাও আছে, আর এটি শুধু কথা বলার মাধ্যমে নয়। আমি তাঁর ওপর ভরসা রাখতে পারি। আর আমার মনে হয়, আমাদের জনগণ সত্যি তাঁর ওপর ভরসা করে। পুতিনকে চাপ দেওয়ার জন্য তাঁর পর্যাপ্ত ক্ষমতা আছে।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ট্রাম্প কী চান, সেটা দেখার অপেক্ষায় আছেন ইউরোপের নেতারা।
যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হওয়ার জন্য ইউক্রেন কী চায়, এমন প্রশ্নের জবাবে জেলেনস্কি বলেন, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিশেষত ন্যাটোর মধ্যে।
জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল এখনো দখল হয়ে যায়নি, সেগুলোকে ন্যূনতম নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া প্রয়োজন পশ্চিমা দেশগুলোর। এ ছাড়া অস্ত্রের চালান অব্যাহত রাখা উচিত এবং রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি রাখার মাধ্যমে দেশটিকে অব্যাহত শাস্তি দেওয়া দরকার।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা যদি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পাই, তাহলে পুতিন আবারও আসবেন।’
ন্যাটোর প্রতি মার্কিন প্রতিশ্রুতি কিংবা জোটটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে আসার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন জেলেনস্কি। জোটটি থেকে বের হয়ে আসার ব্যাপারে বারবার ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি দাবি করেছেন, দীর্ঘ সময়ের এই জোট ওয়াশিংটনের সুবিধা নিচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলেনস্কি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো থেকে বের হয়ে গেলে জোটটির মৃত্যু হবে।
২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন কি না, এ প্রশ্নের জবাবে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘তিনি আমাকে আমন্ত্রণ জানালে আমি যাব।’