সুদানের চলমান সংকট নিয়ে বিশ্বনেতাদের সতর্ক করে দিয়ে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লাহ হামদক বলেছেন, সুদানের অবস্থা সিরিয়া এবং লিবিয়ার চেয়েও খারাপ হতে পারে। বলেছেন, ‘‘যদি লড়াই অব্যাহত থাকে তবে তা বিশ্বের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে।”
মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া এবং ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য সুদানে গত কয়েকদিন ধরে যুদ্ধবিরতি চলছে। কিন্তু যুদ্ধবিরতির মধ্যেও রাজধানী খার্তুমে লড়াই অব্যাহত আছে।
আতঙ্কে কাটছে প্রতিমুহূর্ত : সুদানের রাজধানী খার্তুমে তুর্কি নাগরিকের মালিকানাধীন ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করেন সিরাজগঞ্জের আবু বক্কর সিদ্দিক। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এখন আশ্রয় নিয়েছেন হোটেলে, রয়েছেন উদ্ধারের অপেক্ষায়। খার্তুমের একটি টেইলার্সের দোকানে কাজ করেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের ছেলে মো. রাসেল। একটু পর পর মর্টাল শেল, মেশিনগানের গুলির শব্দে দিন-রাত পার করছেন তিনি। ক্ষমতা দখল করতে মরিয়া দুই সশস্ত্র বাহিনীর সংঘাতে টালমাটাল আফ্রিকার দেশ সুদান। চলতি মাসের শুরুর দিকে সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে এই সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। যুদ্ধের ভয়াবহতার পাশাপাশি সেখানে লুটপাটের শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশিরা। সব কিছু হারিয়ে তারা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। উৎকণ্ঠায় থাকা এসব মানুষ এখন দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন।
আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, এখন সবচেয়ে বড় ভয় সন্ত্রাসীদের হামলা। যারা শহরের একটু পাশে আছেন, মিল-ফ্যাক্টরিতে আছেন, তাদের বাসায় প্রবেশ করে লুটপাট চলছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ নেই, খাবার পানি, ব্যবহারের মতো কোনো পানি নেই।
অন্যান্য দেশের নাগরিকরা খার্তুম ছেড়ে চলে গেছে বলে জানান আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘আমাদের দূতাবাস আমাদের নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। বর্তমানে খার্তুমে একমাত্র বাংলাদেশিরাই পড়ে আছে।’বর্তমানে খার্তুমের আল সালাম রোদানা এলাকায় থাকছেন এই বাংলাদেশি। তিনি বলেন, আমি আমার জন্য না, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য দূতাবাসকে অনেক অনুরোধ করেছি। তারা এখন আমার ফোন রিসিভ করে না। এ বিষয়গুলো খুব কষ্ট লাগে।
নারায়ণগঞ্জের ছেলে মো. রাসেল জানান, বিভিন্ন গণমাধ্যমে খার্তুমে যুদ্ধ কমে যাওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবতা আলাদা। তিনি বলেন, অস্ত্রবিরতির কথা বলা হলেও কার্যত তা মানা হচ্ছে না। গোলাগুলি আগের চেয়ে কমলেও ভয়াবহতা একটুও কমেনি। ফলে অর্থ, খাবার, পানি আর বিদ্যুতের সংকটসহ সব মিলিয়ে অনেকের মতো আমরাও চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।’
পানির সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানান রাসেল। তিনি বলেন, শুরুর দিকে এক বোতল পানির খোঁজে তিন-চার কিলোমিটার পথও পাড়ি দিতে হয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে ঠিকমতো যোগাযোগ করতে পারছেন না বলেও জানান তিনি।
আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, বাংলাদেশিদের সরিয়ে নিতে ইতোমধ্যে একটি বাস ঠিক করেছে দূতাবাস। সেখানকার দায়িত্বরত কর্মকর্তা তারেক আহমেদ বাসটি একটি খোলা জায়গায় রাখার কথা বলেছিলেন। পরে চেষ্টা করে রোদানা এলাকায় রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।