মার্কিন ভিসানীতির ভিকটিম ছিলেন নরেন্দ্র মোদিও

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৪০
২০১৫ সালে দিল্লিতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদি

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষার নামে যেমন জনাকয়েক ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে শুরু করছে যুক্তরাষ্ট্র, ঠিক সেভাবেই প্রায় এক দশক ধরে ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার একটি আইনকে ব্যবহার করে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপরও মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ছিল। যার ফলে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর মতো পদে থেকেও ২০০৫ থেকে ২০১৪–এই পুরো সময়কাল তিনি আমেরিকায় যেতে পারেননি। অবশেষে ২০১৪ সালের মে মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মাস চারেক পরে সেপ্টেম্বরে তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে যান।
যে বারাক ওবামা প্রশাসন নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, তারাই আবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর নিজে থেকেই সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ফলে গত এক দশকে তিনি বহুবার আমেরিকা সফর করেছেন এবং এই সময়কালে বারাক ওবামা, ডোনাল্ড ট্রাম্প বা জো বাইডেনের মতো সব মার্কিন প্রেসিডেন্টই ভারত সফরে এসেছেন। তাদের সবার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ আলিঙ্গনের ছবিও সারা দুনিয়া দেখেছে এবং ভারত ও আমেরিকার স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্কও নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে।
নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে আমেরিকার এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণ ছিল ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গায় তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ। পরে অবশ্য ভারতের শীর্ষ আদালত তাকে দাঙ্গা-সংক্রান্ত সব অভিযোগ থেকেই নিঃশর্ত অব্যাহতি দিয়েছে । তবে একটা দীর্ঘ সময় ধরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফল ভুগতে হয়েছে তাকে।
বিষয়টিতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদির নাম জড়িত বলে ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির শীর্ষ নেতারাও এই প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চান না। তবে দিল্লিতে দলের একাধিক প্রথম সারির নেতা ওই ঘটনার দৃষ্টান্ত দিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারেরও খুব একটা বিচলিত হওয়ার কোনও কারণ আছে বলে তারা মনে করেন না।
বরং তাদের ধারণা, সে দেশের আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার আবার জিতে ক্ষমতায় এলে এই ধরনের ভিসানীতি খুব শিগগিরই ‘ইতিহাস’ হয়ে যাবে।
‘বাংলাদেশের মতো একটি উদীয়মান অর্থনীতির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলতেই হবে, সে দেশের বিরাট বাজারকেও তারা চট করে উপেক্ষা করতে পারবে না বলেই আমার ধারণা’, বলছিলেন দিল্লিতে বিজেপির ফরেন পলিসি সেলের সঙ্গে যুক্ত একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা। 
সম্প্রতি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে যেসব বৈঠক হয়েছে তাতেও ভারতের পক্ষ থেকে একই ধরনের বার্তা দেওয়া হয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে। 
যার মূল কথাটা হলো, মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। বরং আমেরিকার নিজের স্বার্থে আঘাত লাগলে তারা নিজে থেকেই সন্তর্পণে এই নীতি তুলে নেবে বলেই ভারতের বিশ্বাস।
প্রসঙ্গত, প্রায় পুরো একটা দশকজুড়ে নরেন্দ্র মোদির ওপর যখন মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিল, তখন তিনি নিজে কিন্তু একবারও সেই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি। উল্টো তিনি একটা ‘ডিফায়ান্ট’ ভঙ্গি বজায় রেখে চলেছিলেন। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আমেরিকা ছাড়া পৃথিবীর আরও বহু দেশে সফর করেছিলেন, যার মধ্যে চীনও ছিল।