মিয়ানমারে শুক্রবারের (২৮ মার্চ) ৭ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর অন্তত ১৪টি আফটারশক অনুভূত হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)।
ইউএসজিএস-এর ইন্টারঅ্যাক্টিভ মানচিত্র অনুসারে, অধিকাংশ কম্পনের মাত্রা ছিল ৩ থেকে ৫ এর মধ্যে। সবচেয়ে শক্তিশালী আফটারশকটি ছিল ৬ দশমিক ৭ মাত্রার, যা প্রথম ভূমিকম্পের মাত্র ১০ মিনিট পর আঘাত হানে।
ভূমিকম্পের পরবর্তী কম্পনগুলোর মধ্যে ৪ দশমিক ৯ এবং ৬ দশমিক ৭ মাত্রার দুটি কম্পন মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের প্রায় ২০ মাইল দূরে আঘাত হানে। মান্দালয় শহরটি এই ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যান্য আফটারশক উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ছড়িয়ে পড়ে, যা মূল ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের একটি রেখা গঠন করে।
মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯৪ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ৬৭০ জন। শনিবার (২৯ মার্চ) দেশটির জান্তা সরকার এ তথ্য জানিয়েছে।
এর কেন্দ্রস্থল ছিল দেশটির উত্তর-পশ্চিমের শহর সাগাইং থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে। এলাকাটি রাজধানী নেপিদো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে।
ভূমিকম্পটির তীব্র প্রভাব অনুভূত হয় প্রতিবেশী বাংলাদেশ, চীন, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামেও।
ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় বাধা
মিয়ানমারে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োজিত সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশটির সামরিক সরকার নিয়মিতভাবে সংঘাতপূর্ণ এলাকায় যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ায় নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহও কঠিন হয়ে পড়েছে।
ওয়ার্ল্ড ভিশন মিয়ানমারের জাতীয় পরিচালক ড. কাই মিন বলেন, কিছু এলাকাকে পুনর্গঠনের জন্য বছর লেগে যেতে পারে। মহাসড়ক ও বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সহায়তা দলগুলো দুর্গত এলাকায় পৌঁছাতে পারছে না।
মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ার্স-এর মিয়ানমার প্রধান ফেদেরিকা ফ্রাঙ্কো বলেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল, কারণ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর অনেক জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। চার বছর ধরে চলমান গৃহযুদ্ধ দেশটিকে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গবেষক জো ফ্রিম্যান মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের আঘাত মিয়ানমারের জন্য সবচেয়ে খারাপ সময়ে এসেছে।
ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির মিয়ানমার পরিচালক মোহাম্মদ রিয়াজ বলেছেন, ধ্বংসযজ্ঞের প্রকৃত চিত্র পেতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।
রেড ক্রস জানিয়েছে, ভূমিকম্পে মান্দালয়, সাগাইং, নেপিদো, বাগো ও দক্ষিণ শান রাজ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সূত্র: সিএনএন