ভারতের ইতিহাসে প্রথম সাঁওতাল প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন দ্রৌপদী মুর্মু। দেশটির দ্বিতীয় নারী প্রেসিডেন্ট তিনি।
পূর্ব ভারতীয় রাজ্য ওড়িশার মেয়ে দ্রৌপদী মুর্মুর জন্ম ১৯৫৮ সালের ২০ জুন। একজন সাধারণ কাউন্সিলর হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরু তার। এরপর ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছেন।
ওড়িশা সরকারের একজন কেরানি হিসাবে কর্মজীবন শুরু হয় মুর্মুর। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত সেখানকার সেচ ও জ্বালানি বিভাগের জুনিয়র সহকারী হিসাবে কাজ করেন তিনি। শাশুড়ির পীড়াপীড়িতে ভুবনেশ্বরে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর পরিবারের দেখভালের জন্য রায়রাংপুরে ফিরে আসেন দ্রৌপদী। পরে শ্রী অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি নেন তিনি।
দ্রৌপদীর রাজনীতিতে পথচলা শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। ওই বছর তিনি রায়রাংপুরের স্থানীয় নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তাকে প্রায়ই ড্রেন পরিষ্কার থেকে শুরু করে আবর্জনা অপসারণের সময়ও রোদে দাঁড়িয়ে শহরের স্যানিটেশন কাজের তত্ত্বাবধান করতে দেখা যায়।
গত কয়েক দশক ধরে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জন্য কাজ করেন। ময়ূরভঞ্জে নিজ শহর রায়রাংপুর থেকে তিনি ২০০০ এবং ২০০৯ সালে ২ বার বিজেপির হয়ে রাজ্য বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন।
দ্রৌপদী মুর্মুর বয়স ৬৪ বছর। বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৪ জুলাই। এরপরই দ্রৌপদী ভারতের ১৫তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেবেন।
দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকবেন দ্রৌপদী। কোনও দেশের সাংবিধানিক প্রধানের বাসভবন হিসাবে এটিই বিশ্বের বৃহত্তম।
কী কী সুবিধা পান ভারতের রাষ্ট্রপতি : দিল্লির প্রেসিডেন্ট ভবনে থাকবেন দ্রৌপদী। কোনো দেশের সাংবিধানিক প্রধানের বাসভবন হিসেবে এটিই বিশ্বের বৃহত্তম। এই ঐতিহাসিক ভবনে ৪টি তলা মিলিয়ে ৩৪০টি ঘর রয়েছে। আড়াই কিলোমিটার করিডর এবং ১৯০ একর জমির ওপর রয়েছে বাগান।
এছাড়াও প্রেসিডেন্টের থাকার জন্য হায়দরাবাদে রয়েছে ‘রাষ্ট্রপতি নিলয়ম’ নামে একটি বিলাসবহুল ভবন। একইভাবে ছুটি কাটানোর জন্য সিমলায় রয়েছে রিট্রিট বিল্ডিং।
প্রেসিডেন্টের সচিবালয়ের ৫ জন কর্মী ছাড়াও প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রায় ২০০ কর্মী রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন।
ভারতের প্রেসিডেন্টের বেতন কত : প্রেসিডেন্ট বেতন পান মাসিক ৫ লাখ টাকা। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিল দেড় লাখ টাকা। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সপ্তম বেতন কমিশন কার্যকরের পরে প্রেসিডেন্ট থেকে প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপালদেরও বেতন বাড়ায়।
বেতন ছাড়াও প্রেসিডেন্টরা বিনা খরচে চিকিৎসার সুযোগ পান সারা জীবন। প্রেসিডেন্ট ভবনে কর্মীদের বেতন থেকে অতিথি আপ্যায়ন এবং খাওয়া দাওয়ার জন্য বছরে বরাদ্দ থাকে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
ভারতের প্রেসিডেন্ট ব্যবহারের জন্য পান কালো রঙের একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি। মার্সিডিজ বেঞ্জ ছাড়াও প্রেসিডেন্টের ব্যবহারের জন্য একটি লিমুজিন গাড়িও থাকে।
প্রেসিডেন্ট এবং তার স্ত্রী বা স্বামী বিশ্বের যেকোনো দেশে বিনা খরচে ঘুরতে পারেন। অবসরের পর প্রেসিডেন্টরা পান মাসে দেড় লাখ টাকা। অবসরপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের স্বামী বা স্ত্রী মাসে পান ৩০ হাজার টাকা।
দ্রৌপদী মুর্মুকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
অবসরের পরে থাকার জন্য আসবাবপত্রসহ একটি সরকারি বাংলো পান বিনা খরচে। দুটি ল্যান্ডলাইন ও একটি মোবাইল ফোনও বিনা খরচে ব্যবহার করতে পারেন আজীবন।
অবসরের পরে প্রয়োজনীয় কর্মীদের বেতন বাবদ বছরে পান ৬০ হাজার টাকা। একজন সঙ্গী নিয়ে অবসরের পরেও প্রেসিডেন্টরা বিমান বা ট্রেনে বিনা খরচে ভ্রমণ করতে পারেন।
সূত্র : আনন্দবাজার, এনডিটিভি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, পিটিআই