নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদন

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপে কম্বোডিয়ার গার্মেন্টস শিল্পে ধসের শঙ্কা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:৫১

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্য নীতিতে কম্বোডিয়ার ওপর ৪৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগে পড়েছেন কম্বোডিয়ার পোশাক শ্রমিকরা। তাদের আশঙ্কা, এই শুল্ক বহাল থাকলে সংক্ষিপ্ত চুক্তিতে নিয়োগ, চাকরি হারানো কিংবা দেশ ছেড়ে বিদেশে কাজ খোঁজার মতো কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে।
কম্বোডিয়ার মোট রপ্তানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই যায় যুক্তরাষ্ট্রে যায় এবং এর বড় অংশ হলো তৈরি পোশাক, জুতা ও ভ্রমণ সামগ্রী। এই খাতে কাজ করেন প্রায় নয় লাখ শ্রমিক। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্কিন ব্র্যান্ডগুলো সাধারণত ছয় থেকে ১২ মাস আগেই অর্ডার দিয়ে রাখে, তাই তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়বে না। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে উৎপাদন অন্য দেশে সরিয়ে নেওয়া হলে ভয়াবহ ধাক্কা খাবে কম্বোডিয়ার গার্মেন্টস কারখানা ও শ্রমিকেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা
কম্বোডিয়া গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৯ দশমিক ৯ বিলিয়ন (৯৯০ কোটি) মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা দেশটির মোট রপ্তানির ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করেছে মাত্র ২৬৪ মিলিয়ন (২৬ কোটি ৪০ লাখ) ডলারের পণ্য। এই অসম বাণিজ্য সম্পর্কে বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির কারণে তুলনামূলকভাবে কম্বোডিয়ার ওপর প্রভাব অনেক বেশি পড়বে।
বাংলাদেশের পণ্যে শুল্ক আরোপ করা উচিত হয়নি: পল ক্রুগম্যান
নম পেনের ঝেন তাই কারখানার ইউনিয়ন নেতা কোয়েম সোফেন বলেন, এই শুল্ক কার্যকর হলে আমাদের শ্রমিকরা মারাত্মক কষ্টে পড়বে। আমরা ভালো পণ্য উৎপাদনে দক্ষতা বাড়াতে পারলে আরও অর্ডার পেতে পারি।
তবে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, সেই সুযোগ না-ও মিলতে পারে। শ্রম অধিকার সংগঠন ‘সেন্ট্রাল’-এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর খুন থারো বলেন, বিশ্বজুড়ে গার্মেন্ট উৎপাদনে কম্বোডিয়ার অংশ খুবই কম। তাই ব্র্যান্ডগুলো সহজেই উৎপাদন অন্যত্র সরিয়ে নিতে পারে।
চাকরি হারানোর শঙ্কায় পোশাকশ্রমিকরা
কম্বোডিয়ান অ্যালায়েন্স অব ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি ইয়াং সোফর্ন বলেন, করোনার সময় মালিকেরা যেভাবে স্থায়ী কর্মীদের অস্থায়ী হিসেবে নামিয়ে দিয়েছিলেন, এখন হয়তো আবারো সেই পথেই হাঁটবেন। কিছু শ্রমিকের কাজের চুক্তি এখন মাসিক বা এমনকি দৈনিক ভিত্তিতেই হচ্ছে।

সোফর্ন আরও বলেন, প্রথম ধাক্কা খাবে সরাসরি কারখানার কর্মীরা, এরপর তাদের পরিবারের সদস্য, কারখানার আশপাশে খাবার বিক্রেতা বা অন্যান্য সহায়ক কর্মীরাও প্রভাবিত হবেন।
এই প্রেক্ষাপটে দেশটির গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন ‘টেক্সটাইল, অ্যাপারেল, ফুটওয়্যার অ্যান্ড ট্রাভেল গুডস অ্যাসোসিয়েশন ইন কম্বোডিয়া’ সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এখনো আলোচনার সুযোগ রয়েছে।
কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, ১৯টি মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।
তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, এই পদক্ষেপ যথেষ্ট হবে না। প্রতিবেশী দেশ ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যের ওপর শূন্য শুল্ক নির্ধারণ করেছে। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, অন্য দেশগুলো শুল্ক কমালেও যুক্তরাষ্ট্র নিজে খুব বেশি ছাড় দিতে আগ্রহী নয়।