ভয়াবহ ভূমিকম্পের পরও মিয়ানমারজুড়ে তীব্র হামলা অব্যাহত রেখেছে জান্তা সরকার। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইরাবতি জানিয়েছে, সাগাইং অঞ্চল এবং চিন রাজ্যে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর জান্তার বিমান হামলায় ৩০ জনেরও বেশি বেসামরিক নিহত হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, জান্তা বাহিনীর নৃশংসতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা কাওলিন ইনফো জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বিকেলে সাগাইং অঞ্চলের কাওলিন টাউনশিপের ইন পিন হ্লা গ্রামের একটি স্কুলে সরকারি যোদ্ধারা দুটি ৫০০ পাউন্ড ওজনের বোমা নিক্ষেপ করে। এর ফলে এক শিশুসহ ৩ জন নিহত হয়।
২৮ মার্চের ভূমিকম্পে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হওয়ার পর ঘোষিত যুদ্ধবিরতি ২২ এপ্রিল পর্যন্ত স্থায়ী হওয়ার কথা ছিল। জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পর দেশজুড়ে ১২০টিরও বেশি আক্রমণ চালানো হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি হামলা যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর ঘটেছে।
ইরাবতির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বুধবার বিকেলে উত্তর সাগাইং অঞ্চলের ওনথো টাউনশিপ সংলগ্ন নানখাম গ্রামে জান্তা বিমান বাহিনী একটি গ্রামের খাবারের দোকান এবং একটি সরকারি হাসপাতালের কাছে ক্যাফেতে বোমা হামলা চালায়। এর ফলে শিশুসহ বেশ কয়েকজন নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়।
এরও দুই দিন আগে কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি, অল বার্মা স্টুডেন্টস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এবং প্রতিরোধ মিত্ররা নানখাম গ্রামের প্রায় ৪৬ কিলোমিটার উত্তরে ইন্দাউ শহর দখল করে। বুধবার সন্ধ্যায় নেপিদো বিমানঘাঁটি থেকে একটি ফাইটের জেট দক্ষিণ চিন রাজ্যের মিন্দাত টাউনশিপের পিউই গ্রামে দুটি ৫০০ পাউন্ড বোমা ফেলেছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
বিমান হামলায় একজন যাজক এবং আট মাস বয়সী এক শিশুসহ ছয় গ্রামবাসী নিহত হয়। বিমান হামলায় একটি গির্জাসহ দশটি ভবন ধ্বংস হয়ে যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর চিন রাজ্যের টেডিম টাউনশিপের সাইজাং গ্রামে জান্তা বিমান হামলায় একটি পরিবারের ছয় সদস্য নিহত হয়। বিমান হামলায় বাড়িঘর এবং একটি স্কুল লাইব্রেরি সহ চারটি ভবন ধ্বংস হয়ে যায় এবং গ্রামবাসীরা কাছের জঙ্গলে পালিয়ে যায়।
বেসামরিক জাতীয় ঐক্য সরকারের মানবাধিকার মন্ত্রণালয়ের অনুমান, ২৮ মার্চ থেকে ৮ এপ্রিলের মধ্যে মিয়ানমারের ১৫টি অঞ্চল ও রাজ্যের ১২টিতে ৯২টি গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলা চালানো হয়েছে, যার ফলে ৭২ জন নিহত এবং ৯১ জন আহত হয়েছেন।
জান্তার মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাও মিন তুন বুধবার অভিযোগ করেন, যুদ্ধবিরতি চলাকালীন সাগাইং ও মাগওয়ে অঞ্চল এবং রাখাইন ও কারেনি (কায়া) এবং উত্তর শান রাজ্যে সরকারবিরোধী গোষ্ঠীগুলো তাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে।