মার্চের শুরু থেকেই গাজায় ঢোকার চেকপয়েন্টগুলো বন্ধ করে রেখেছে ইসরাইল। ফলে ঢুকতে পারছে না ত্রাণবাহী কোন ট্রাক। তাই শিগগিরই এই চেকপয়েন্টগুলো খোলা না হলে, ক্ষুধায় নিশ্চিতভাবেই মৃত্যু হবে বেশির ভাগ গাজাবাসীর। এদিকে আবাসিক ভবনে ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর হামলায় আরো ৩৫ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে যুদ্ধের বিরোধিতা করা বিমান বাহিনীর সদস্যদের বহিষ্কারের হুমকি দিয়েছে ইসরাইল।
এদিকে কয়েক মাসের মধ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে ফ্রান্স। গাজা উপত্যকার ২৩ লাখ বাসিন্দার জন্য সব ধরনের সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার ছয় সপ্তাহ পার হয়েছে। বছরের শুরুতে যুদ্ধবিরতির সময় যেটুকু খাবার মজুত করা হয়েছিল তা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। জরুরি খাবার বিতরণ থেমে যাচ্ছে, বেকারিগুলো বন্ধ, বাজারগুলো খানি। খান ইউনিসের একটি শরণার্থী শিবিরে প্লাস্টিকের ছাউনিঘেরা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নিজের পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন আখরাস (৬৪)। সেখানেই তিনি কার্ডবোর্ড জ্বালিয়ে আগুন জ্বালান এবং একটি শিমের ক্যান গরম করেন। এটাই তাদের শেষ খাবার। তিনি বলেন, আমরা ১৩ জনের পরিবার। এক ক্যান ফাভা শিম দিয়ে কী হবে? আখরাস আরো বলেন, 'আমরা যুদ্ধ বেঁচে গেছি, প্রতিদিন সকাল-বিকাল বোমাবর্ষণ সহ্য করেছি। কিন্তু আমরা ক্ষুধা সহ্য করতে পারব না। না আমরা, না আমাদের সন্তানরা।' উত্তরে নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে শত শত ফিলিস্তিনি একটি খোলা জায়গায় রান্না করা গরম ভাতের জন্য একটি সারিতে দাঁড়িয়ে আছেন। ছোট শিশুরা সামনে এগিয়ে আসছে, হাতে বালতি-পরিবারের জন্য কিছু খাবার নিয়ে যেতে চায় তারা। এই জরুরি খাবার বিতরণ যেসব ত্রাণ সংস্থা চালাচ্ছে। তারা বলছে, যদি নতুন করে খাবার ঢুকাতে না পারে, তাহলে আর কয়েক দিনের মধ্যেই তাদেরও এই খাবার বিতরণ বন্ধ করে দিতে হবে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি আগে গাজর ২৫টি বেকারিতে রুটি সরবরাহ করত। এখন সবগুলো বেকারি বন্ধ। অল্প পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী বিতরণও বন্ধ হয়ে যেতে চলেছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার জুলিয়েট তৌমা বলেছেন, সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর মানে, শিশুরা, নবজাতকেরা না খেয়ে ঘুমাতে যাচ্ছে। প্রতিদিন এই সামগ্রী ছাড়া গাজা গভীর দুর্ভিক্ষের দিকে আরো এক ধাপ এগোচ্ছে।
এদিকে গাজা সিটির শুজাইয়া শহরের আবাসিক ভবনগুলোতে দফায় দফায় বোমা হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। এসব হামলায় কমপক্ষে ৩৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরো ৫৫ জন। এছাড়া ধ্বংসস্তূপের নিচে আরো ৮০ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। শুজাইয়া শহরে হামলার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সেখানে ইসরাইলি বাহিনী বোমা হামলার মাধ্যমে গণহত্যা চালাচ্ছে। আহতদের চিকিৎসায় রক্তদানের জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। ইসরাইলি বাহিনী অধিকৃত পশ্চিম তীরের বালাতা শরণার্থী শিবির এবং নিকটবর্তী নাবলুসে বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছে। এর আগে গাজায় দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় একদিনেই কমপক্ষে ৫৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। এছাড়া আহত হয়েছে আরো ২১৩ জন। গাজা জুড়েই ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরাইল।
এদিকে গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে স্বাক্ষর করা একটি খোলা চিঠি থেকে নাম না সরালে অন্তত ৯৭০ জন ইসরাইলি বিমান বাহিনীর পাইলট, কর্মকর্তা ও সৈন্যকে বরখাস্ত করার হুমকি দিয়েছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে। হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি বিমান বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার বরাবর গাজায় সামরিক অভিযানে আপত্তি ও এ সংঘাত বন্ধের দাবি জানিয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে নিয়মিত স্টাফদের পাশাপাশি রিজার্ভ পাইলট ও সেনাসদস্যদের স্বাক্ষর রয়েছে।
তাদের অভিযোগ, গাজায় চলমান সামরিক আগ্রাসন ইসরাইলের নিরাপত্তা নয়, রাজনৈতিক স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে। এরপর তাদের সঙ্গে বিমান বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা যোগাযোগ করে বলেন, যেসব স্বাক্ষরকারী অলিকা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করতে রাজি আছেন, কেবল তারাই বাহিনীতে থাকবেন। এরপর মাত্র ২৫ জন স্বাক্ষরকারী নিজের নাম প্রত্যাহার করেছে। বাকিরা নিজেদের অবস্থানে অটল আছেন। বরং আরো আট জন নতুন করে স্বাক্ষর নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
সোর্স/ রয়টার্স, আলজাজিরা