ইসরায়েল-হামাস সংঘাত তীব্রতর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় ও বিস্তৃত যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির জন্য নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপনের প্রচেষ্টা জোরদার করেছে চীন।
বেইজিংয়ের শীর্ষ এক কূটনীতিক গত সোমবার ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি কূটনীতিকদের ডেকে সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। চীনের এক রাষ্ট্রদূত মধ্যপ্রাচ্য সফর করছেন। বৃহত্তর যুদ্ধ এড়াতে সহায়তার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। এর আগে গত বুধবার জাতিসংঘে যুদ্ধ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে ভেটো দেয় চীন। কারণ, ওই প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতির আহ্বান ছিল না।
চীন কূটনৈতিকভাবে সংঘাত কমানোর চেষ্টা করছে। তবে দেশটির ভূমিকা অনেকাংশে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনের পক্ষে যাচ্ছে। হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার জন্য নিন্দা জানায়নি বেইজিং।
পাশাপাশি দেশটির ইন্টারনেট ও রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমেও ইহুদিবিদ্বেষ ও ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব স্পষ্ট। চীনে ব্যাপক নজরদারি করা হয় ইন্টারনেটে। এর মধ্যেই ইসরায়েলের সমালোচনা চরমভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়াও ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র চোখ বুজে আছে বলে অভিযুক্ত করেছে। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ইহুদি নিয়ন্ত্রণ শক্ত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
এতে বোঝা যায়, চীনের ইন্টারনেট ও রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমেও ইহুদিবিদ্বেষে সরকারের পরোক্ষ সমর্থন আছে। রাষ্ট্রীয় পত্রিকা চায়না ডেইলি রোববার একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। যেখানে ঘোষণা করা হয়, ওয়াশিংটন ‘ইসরায়েলকে অন্ধভাবে সমর্থন করে’ সংঘাত আরও বাড়িয়ে তুলছে।
চীনের প্রভাবশালী ভাষ্যকার এবং কমিউনিস্ট পার্টির সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমসের সাবেক সম্পাদক হু জিজিন চীনা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘ওহ, শান্ত হও, ইসরায়েল! আমি চিন্তিত, তুমি পৃথিবীকে সৌরজগৎ থেকে মুছে ফেলবে।’
অনেক সময় ইসরায়েলবিরোধী মন্তব্যগুলো চীনের জাতীয়তাবাদী সুরে পরিণত হয়। এমনই একটি পোস্ট ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। চীনা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ওয়েইবোতে ২.৯ মিলিয়ন অনুসারীর এক ব্যক্তি বলেছেন, তিনি হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠনের পরিবর্তে ‘প্রতিরোধ সংগঠন’ বলতে চান। একই সঙ্গে তিনি ইসরায়েলকে সন্ত্রাসী দেশ হিসেবে অভিযুক্ত করেন। সম্প্রতি একটি আলোচনা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয় চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম ওয়েইবোতে।
এতে বলা হয়, ইহুদিরা যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের অসম পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণকে নাৎসিদের আগ্রাসনের সঙ্গে তুলনা করেছেন ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শেন ই। চীনে ইসরায়েলের দূতাবাসের অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে সাম্প্রতিক পোস্টগুলোতে করা অসংখ্য মন্তব্যেও ইসরায়েলিদের সঙ্গে নাৎসিদের তুলনা করেছেন চীনারা। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান এবং চীনা ইন্টারনেটে ইহুদিবিদ্বেষ সমন্বিত প্রচারণার অংশ কিনা- তা বলা কঠিন।