ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ২৮ মে ২০২৫, ২২:২২

বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়া ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত। তবে একটিই শর্ত—ইসরায়েলকে অবশ্যই ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। 
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন। বুধবার (২৮ মে) ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রাবোও সুবিয়ান্তো সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, ‘প্রাবোও সুবিয়ান্তো বলেছেন, দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাই একমাত্র পথ। এটি সত্যিকারের শান্তি প্রতিষ্ঠার উপায়। আমাদের ইসরাইলের অধিকারকে স্বীকার করতে হবে। ইসরাইল একটি সার্বভৌম দেশ। এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ইসরাইল যদি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়, তবে ইন্দোনেশিয়া ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে।’
ইন্দোনেশিয়া সফররত ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর পাশে দাঁড়িয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন। পাশাপাশি, ফ্রান্সের ভূমিকাও তিনি তুলে ধরেন। তিনি জানান, ফ্রান্সও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা এবং শান্তির সমর্থনে পদক্ষেপ গ্রহণে উৎসাহী থাকবে।
বর্তমানে, ইন্দোনেশিয়ার ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই এবং দেশটি ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোর এই অবস্থান ইন্দোনেশিয়ার আন্তর্জাতিক কূটনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ইন্দোনেশিয়া আগেও ফিলিস্তিনের প্রতি তার সমর্থন জানিয়ে এসেছে এবং এই পরিস্থিতিতে, তাদের শর্ত পুরণ হলে তারা ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।
ইন্দোনেশিয়ার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা স্বীকৃতির পক্ষে বিশ্বব্যাপী সমর্থন বাড়ছে। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্স, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন এবং আরও কিছু ইউরোপীয় দেশ রয়েছে।
এর আগে, ইউরোপের দেশ মাল্টা আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী রবার্ট আবেলার এ ঘোষণা ৪৫ বছরের পুরোনো এক জাতীয় বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছে। তিনি গাজায় চলমান ‘মানবিক ট্র্যাজেডির’ কথা উল্লেখ করে এ সিদ্ধান্তকে নৈতিক বাধ্যবাধকতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে, এ স্বীকৃতি আগামী ২০ জুন এক সম্মেলনের পর কার্যকর হবে।
তার আগে, গত ১০ এপ্রিল ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও ফিলিস্তিনকে তার দেশ স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে বলে জানান। আগামী জুনেই এ স্বীকৃতি দেওয়া হতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের স্বীকৃতির দিকে এগিয়ে যেতে হবে এবং আমরা আগামী মাসগুলোতেই তা করব।
তিনি উল্লেখ করেন, ফ্রান্স ও সৌদি আরবের আয়োজনে এক সম্মেলনে এ পরিকল্পিত স্বীকৃতি চূড়ান্ত করা হতে পারে, যার লক্ষ্য ফিলিস্তিনি সমস্যার সমাধান করা।
গত বছরের মে মাসে স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে পৃথক বিবৃতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। স্পেন সরকারের এক মুখপাত্র ঘোষণা করেন, স্পেন আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। দেশটির মন্ত্রিসভা আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ের অনুরূপ পদক্ষেপের সমান্তরালে এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে।
২০১৪ সালে, সুইডেন প্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ হিসেবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। এরপর বুলগেরিয়া, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড এবং রোমানিয়া এই পদক্ষেপ নেয়। এর আগে গত বছর, স্পেন, আয়ারল্যান্ড এবং নরওয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। এ পর্যন্ত জাতিসংঘভুক্ত বিশ্বের ১৪৭টি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বিশ্বে চলমান এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্বব্যাপী চাপ বাড়ছে।
এখন, বিশ্বের অনেক দেশই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থন জানাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া তার অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছে, ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য তাদের শর্ত হলো ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা। এর মাধ্যমে, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির পক্ষে আরও একধাপ এগিয়ে গেল বিশ্ব।