ট্রাম্পের বিশেষ দূত বললেন

যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে হামাসের প্রতিক্রিয়া অগ্রহণযোগ্য 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ০১ জুন ২০২৫, ১৩:৫৯

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস গতকাল শনিবার জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তবে ওয়াশিংটনের প্রধান মধ্যস্থতাকারী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ এ প্রতিক্রিয়াকে ‘একেবারেই অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
হামাস বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে তারা তাদের প্রতিক্রিয়ায় একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তার প্রতি জোর দিয়েছে। যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ করার দাবিটি অনেক দিন ধরেই ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে আছে।
এদিকে উইটকফের মতো একই সুরে কথা বলেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, হামাসের এ প্রতিক্রিয়া ‘অগ্রহণযোগ্য’। হামাস সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে চলেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ইসরায়েল বলছে, যুদ্ধ থামাতে হলে হামাসকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র হতে হবে। ভেঙে ফেলতে হবে তাদের সামরিক ও প্রশাসনিক কাঠামো। গাজায় এখনো থাকা ৫৮ জিম্মিকেও ফেরত দিতে হবে।
ইসরায়েল গত শুক্রবার হামাসকে হুঁশিয়ার করে বলেছে, তারা যেন এ চুক্তির প্রস্তাব মেনে নেয় এবং গাজায় বন্দী জিম্মিদের মুক্তি দেয়। তা না হলে হামাসকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে।
গতকাল এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, তারা মধ্যস্থতাকারী পক্ষগুলোর কাছে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এ চুক্তির অংশ হিসেবে হামাসের হাতে বন্দী দখলদার শক্তির ১০ জীবিত জিম্মি মুক্তি ও ১৮ জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়া হবে। বিনিময়ে নির্দিষ্টসংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিতে হবে।’
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা উইটকফকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তবে এর সঙ্গে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে পুরোপুরি ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছে।
উইটকফ বলেছেন, হামাসের এ প্রতিক্রিয়া ‘পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য, যা আমাদের আরও পিছিয়ে দিচ্ছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রস্তাব মেনে নিতে সংগঠনটির প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার চায় হামাস
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে উইটকফ লিখেছেন,‘ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ৬০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে এটিই (যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব) একমাত্র উপায়। এর আওতায় জীবিত জিম্মিদের অর্ধেক ও নিহত জিম্মিদের অর্ধেক পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবেন। আমরা একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে আন্তরিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা শুরু করতে পারব।’
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাঈম পরে এএফপিকে বলেন, তাঁরা উইটকফের প্রস্তাবে ‘ইতিবাচক ও দায়িত্বশীল’ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তবে তিনি অভিযোগ করেন, ‘আলোচনার এ প্রক্রিয়া পুরোপুরিভবে ইসরায়েলের পক্ষপাতদুষ্ট। ইসরায়েল যে শর্তগুলো মানতে চাইছে না, তা নিয়ে আমরা আগেই মার্কিন দূতের সঙ্গে একমত হয়েছিলাম।’
হামাস দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে যে চুক্তিতে যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ করার বিষয়টি থাকতে হবে।
গত মার্চে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে বেশ কয়েকবার আলোচনা হলেও গভীর মতপার্থক্যের কারণে কোনো সমাধান আসেনি।
ইসরায়েল বলছে, যুদ্ধ থামাতে হলে হামাসকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র হতে হবে। ভেঙে ফেলতে হবে তাদের সামরিক ও প্রশাসনিক কাঠামো। এ ছাড়া গাজায় এখনো থাকা ৫৮ জিম্মিকে ফেরত দিতে হবে।
অন্যদিকে হামাস বলছে, তারা অস্ত্র সমর্পণ করবে না; বরং ইসরায়েলকে গাজা থেকে সেনা সরাতে হবে ও যুদ্ধ বন্ধে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলি হামলা এ উপত্যকায় এখন পর্যন্ত ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পুরো উপত্যকা।