অস্ট্রিয়ার স্কুলে বন্দুকধারীর হামলায় নিহত ১০

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১১ জুন ২০২৫, ২১:২৯


অস্ট্রিয়ার গ্রাজ শহরের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা।  মঙ্গলবার (১০ জুন) স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে শহরের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ড্রাইয়ারশুটসেনগাসে নামের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বন্দুকধারীর হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। অস্ট্রিয়ার ইন্টারিয়র মিনিস্টার গেরহার্ড কার্নারের মতে, নিহতদের মধ্যে ৬ জন নারী ও ৩ জন পুরুষ শিক্ষার্থী এবং এক শিক্ষক রয়েছেন। হামলার পরপরই ২১ বছর বয়সী বন্দুকধারী নিজেই স্কুলের একটি বাথরুমে আত্মহত্যা করে। হামলায় আরও অন্তত ২৮ জন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনার পর দেশব্যাপী তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার সকাল ১০টায় এক মিনিটের নিরবতা পালন করে পুরো অস্ট্রিয়া। ভিয়েনার হফবার্গ প্রাসাদে, যেখানে রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার ভ্যান ডার বেলেনের কার্যালয় অবস্থিত, সেখানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।
অস্ট্রিয়ার শিক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টোফ উইডারকেহর জানিয়েছেন, ওই বিদ্যালয়টি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ঘটনার পর পরই কর্তৃপক্ষ ভবন থেকে সমস্ত ছাত্র এবং শিক্ষকদের সরিয়ে নিয়েছে। পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে স্কুলটি সুরক্ষিত করা হয়েছে এবং জনসাধারণের জন্য আর কোনও বিপদ নেই।
গেরহার্ড কার্নার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, হামলাকারী ছিলেন ঐ বিদ্যালয়েরই একজন প্রাক্তন ছাত্র, যিনি পড়াশোনা শেষ না করেই স্কুল ত্যাগ করেছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, তার নামে আগে কোনো অপরাধের রেকর্ড ছিল না এবং হামলার সময় ব্যবহৃত দুটি আগ্নেয়াস্ত্রই তার নামে বৈধভাবে লাইসেন্সকৃত ছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (ব্রিটিশ সময় সকাল ৯টা) স্কুল ভবনের ভেতর থেকে গুলির শব্দ শোনা যাওয়ার পর তারা অভিযান শুরু করে। 
একইসঙ্গে স্কুলে পাঠানো হয় কোবরা নামের একটি বিশেষ ট্যাকটিকাল ইউনিট, যারা জিম্মি উদ্ধার ও সশস্ত্র হামলার মতো জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশিক্ষিত।
অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর ক্রিস্টিয়ান স্টকার একে "দেশের ইতিহাসে এক অন্ধকার দিন" হিসেবে অভিহিত করে বলেন, "এরা ছিল তরুণ যাদের সামনে তাদের পুরো জীবন ছিল। একটি স্কুল শুধু শিক্ষার স্থান নয়, এটি একটি নিরাপদ আশ্রয়—সেখানে এমন রক্তক্ষয় আমাদের জাতির হৃদয়কে বিদীর্ণ করেছে।"
স্থানীয় মেয়র এলকে কাহার এই ঘটনাটিকে "ভয়াবহ ট্র্যাজেডি" বলে অভিহিত করেছেন।
এছাড়া ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কাইয়া ক্যালাস এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন, "প্রতিটি শিশুরই স্কুলে নিরাপদভাবে শিখবার অধিকার থাকা উচিত।"
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারা কখনো এমন ঘটনার কল্পনাও করেননি। সাংবাদিক ফ্যানি গাসার বলেন, "গ্রাজ শহরটি খুব বড় নয়। এখানে প্রায় সবাই কাউকে না কাউকে চেনে, যারা ঐ স্কুলে ছিল। অনেকে তাদের বন্ধু হারিয়েছে।"
অস্ট্রিয়ার ইতিহাসে এই স্কুল হামলা এক নতুন অধ্যায় হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।