ভারতের উত্তরাখন্ডে টানেলধসে আটকেপড়া ৪১ শ্রমিকের সবাইকে ১৭ দিন পর গতকাল উদ্ধার করা হয়েছে। শ^াসরুদ্ধকর অভিযানে উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের শুভেচ্ছা জানান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং - এনডিটিভি
ভারতের উত্তরাখ-ে নির্মাণাধীন সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে আটকে থাকা ৪১ শ্রমিককে ১৭ দিন পর নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। সুড়ঙ্গটির একাংশ ধসে যাওয়ায় গত ১২ নভেম্বর থেকে সেখানে আটকে পড়েন শ্রমিকরা। ১৬ দিনের টানা প্রচেষ্টার পর ১৭তম দিনে গতকাল মঙ্গলবার সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স-এনডিআরএফ) কর্মীরা। উদ্ধারকারীরা ‘র্যাট হোল মাইনিং’ কৌশল ব্যবহার করে ধ্বংসস্তূপের ভেতর ৬০ মিটার লম্বা একটি মোটা পাইপ স্থাপন করেন। গতকাল স্থানীয় সময় রাত ৯টার আগেই এ পাইপ দিয়েই স্ট্রেচারের মাধ্যমে একজন একজন করে শ্রমিককে বের করে আনা হয়। উদ্ধারকারী দলের চিকিৎসকরা জানিযেছেন, সব শ্রমিকই সুস্থ আছেন। খবর: এনডিটিভি।
টানেলের এই উদ্ধার অভিযানের সমন্বয়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) সৈয়দ আতা হাসনাইন গতকাল বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, আটকে পড়া শ্রমিকদের
উদ্ধারের চলমান অভিযান শেষ করতে মঙ্গলবার পুরো রাত লাগতে পারে। তবে তার আগেই উদ্ধার কাজ শেষ হয়। উদ্ধার কাজ শেষ হওয়া মাত্রই এনডিআরএফ কর্মীদের গাঁদা ফুলের মালা পরিয়ে স্বাগত জানান উত্তরাখ-ের মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধমি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি কে সিং।
আটকে পড়া ৪১ শ্রমিকের জন্য ৪১টি অ্যাম্বুলেন্স আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। সুড়ঙ্গের ভেতরে পর্যন্ত একাধিক অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসকদের একটি দলও প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। উত্তরকাশী জেলা হাসপাতালে একটি বিশেষ ওয়ার্ড খালি করে সেখানে পাতা হয় ৪১টি বিছানা। হাসপাতালের কাছেই তৈরি হয়েছে একটি হেলিপ্যাড, যাতে প্রয়োজনে কাউকে চট করে হৃষিকেশের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বিশেষ খননযন্ত্র ভেঙে যাওয়ার পর গত সোমবার থেকে উলম্বভাবে মাটি খোঁড়ার কাজ বন্ধ করা হয়। পরে বিকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী শুরু হয় ‘র্যাট হোল মাইনিং’। ইঁদুরের মতো গর্ত খুঁড়তে ব্যবহার করা হয় গাঁইতি-শাবল। এভাবে সুড়ঙ্গের বাধা সরিয়ে সমান্তরালভাবে মাটি কেটে এগোনো শুরু হয় গতকাল থেকে। অবশেষে দুপুরে আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে যান এনডিআরএফ সদস্যরা। তবে কর্তৃপক্ষ এখনো টানেল ধসের কারণ জানায়নি। এর আগে ধ্বংসাবশেষ খনন করার পর টানেলে একটি ছোট পাইপলাইন স্থাপন করা হয়। এর মাধ্যমে সুড়ঙ্গে আটকা শ্রমিকদের কাছে খাবার, পানি, অক্সিজেন, ওষুধ, লাইট এবং ওয়াকি-টকি পাঠানো হয়। সবাই জীবিত আছেন বলে আগেই নিশ্চিত করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চরধাম তীর্থযাত্রা প্রকল্পের আওতায় উত্তরাখন্ডে সিল্কিয়ারা বেন্ড-বারকোট টানেল নামে এই সুড়ঙ্গটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি সিল্কিয়ারা ও দান্দলগাঁওয়ের চারটি উল্লেখযোগ্য হিন্দু তীর্থস্থানকে সংযুক্ত করেছে। প্রায় দেড় মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে দ্বিমুখী রাস্তার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।