ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা টানা ৫২ দিন ধরে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। গাজা ইলেকট্রিসিটি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (জিইডিসিও) থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে জাতিসংঘ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। খবর আল জাজিরার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গত ১১ অক্টোবর থেকে বিদ্যুৎ নেই। গত ৮ অক্টোবর গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। এতে ১১ অক্টোবর গাজা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
এমনকি বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগেও, গাজায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে মাত্র ১৩.৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকতো।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশক ধরে, গাজা উপত্যকা একটি দীর্ঘস্থায়ী বিদ্যুতের ঘাটতিতে ভুগছে, যা ইতিমধ্যেই সেখানকার জীবনযাত্রাকে ভঙ্গুর করে তুলেছে।
গাজায় চলমান বিদ্যুৎ ঘাটতি অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিশেষ করে স্বাস্থ্য, পানি ও স্যানিটেশন পরিষেবার প্রাপ্যতাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। এছাড়া উৎপাদন ও কৃষি খাতকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলার পর গাজায় সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল। গাজায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খাদ্য, পণ্য ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তারা।
হামাসের হামলার প্রতিরোধ নিতে সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ১৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের তালিকায় ১০ হাজারের বেশি নারী ও শিশু রয়েছে।গত সপ্তাহে ৭ দিনের যুদ্ধবিরতি দেওয়া হয় গাজায়। যুদ্ধবিরতি শেষে গত শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ফের গাজা উপত্যকায় আগ্রাসন শুরু করেছে।
দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৩০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত
ইসরায়েলি হামলায় গাজার উত্তরাঞ্চল ইতিমধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আর এবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলে তীব্র হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
আল জাজিরা অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, রোববার (৩ ডিসেম্বর) সকালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিস এবং রাফাহ এলাকায় ৩০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল রাত থেকে চলমান বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত খান ইউনিসের পূর্ব দিকের অনেক অংশ ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে। বাসিন্দাদের শহরের পশ্চিম দিকে বা রাফাহ শহরে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গাজা উপত্যকায় আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ বলেন, ‘ইসরায়েলি ঘোষণা শুনে মানুষজন সেখানে (রাফাহতে) পালাতে শুরু করে, কিন্তু সেখানেও তারা বোমা হামলার শিকার হয়। যা আবারও এই সত্যটি নিশ্চিত করে যে, গাজায় কোনো নিরাপদ স্থান নেই।’
উত্তর গাজায় অভিযানের সময় বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইসরায়েল। সেখানকার বাসিন্দাদের বেশির ভাগই তখন দক্ষিণাঞ্চলে আশ্রয় নেয়। এখন দক্ষিণ গাজায়ও ইসরায়েল হামলা জোরদার করেছে। গাজার বাসিন্দাদের প্রশ্ন, এখন তারা কোথায় যাবে?
হানি মাহমুদ বলেন, ‘খান ইউনিসের লক্ষ্যবস্তু এলাকায় এখনও শত শত বাসিন্দা আটকা পড়েছেন। কারণ শহরের অন্যান্য অংশে বা আরও দক্ষিণে যাওয়ার প্রধান রাস্তাগুলো ধ্বংস বা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
গতকাল শনিবার ইসরায়েল জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর গাজায় ৪০০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে তারা।
গাজায় ইসরায়েলের টানা ৪৭ দিনের হামলার পর ২৪ নভেম্বর থেকে তিন দফায় ৭ দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। যুদ্ধবিরতির পর গত শুক্রবার সকাল থেকে গাজায় আবার হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।
গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় এখন পর্যন্ত ১৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের তালিকায় ১০ হাজারের বেশি নারী ও শিশু রয়েছে।