
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান সামিটে সরাসরি অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পাকিস্তান নিয়ে সম্ভাব্য আলোচনার জটিলতা এড়িয়ে যাওয়াই এটির প্রধান কারণ। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়েছে।
মোদি কুয়ালালামপুরে গিয়ে সামিটে উপস্থিত না হয়ে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন। সরকারি কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে ট্রাম্প পুনরায় দাবি করতে পারেন যে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতা করেছিলেন—যা ভারত দীর্ঘদিন ধরে অস্বীকার করে আসছে।
মোদি ছিলেন অনিচ্ছুক এমন একটি বৈঠকে অংশ নিতে, কারণ এটি বিহারের আসন্ন রাজ্য নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে তার জন্য ‘অস্বস্তিকর’ হতে পারত।
এটি ট্রাম্পের সঙ্গে সম্ভাব্য বৈঠক এড়িয়ে যাওয়ার প্রথম ঘটনা নয়; গত মাসে মোদি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সেশনেও সরাসরি উপস্থিত হননি।
পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে গত মে মাসে সংঘটিত সামরিক সংঘাত ছিল কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। এটি শুরু হয় কাশ্মীরের পেহেলগামের একটি সন্ত্রাসী হামলার পর, যার পেছনে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলে নয়াদিল্লি। ইসলামাবাদ অভিযোগ অস্বীকার করে। হামলায় ২৬ জন নিহত হন।
ঘটনার পর ভারত তিন দিনের জন্য পাকিস্তানে অপ্ররোচিত হামলা চালায়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রতিরক্ষামূলক অপারেশন বুনিয়ান-উম-মারসুস পরিচালনা করে। এই সময় পাকিস্তান সাতটি ভারতীয় বিমান, যার মধ্যে ফরাসি তৈরি রাফালও রয়েছে, ভূপাতিত করে এবং বহু ড্রোন আটকায়। সংঘাত শেষ হয় মে ১০-এ মার্কিন মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, তার মধ্যস্থতার কারণে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ রোধ সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি পারমাণবিক সংঘাত রোধ করেছি। এটি হতে পারত ভয়ঙ্কর, লাখ লাখ মানুষ মারা যেত। এজন্য আমি গর্বিত।’
ট্রাম্পের এ দাবির সমর্থনে পাকিস্তান তার মধ্যস্থতাকে স্বীকার করেছে এবং তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ট্রাম্পকে ‘সত্যিকারের শান্তিপ্রিয় মানুষ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও প্রশংসা করেছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনির এবং প্রধানমন্ত্রী শাহবাজকে, তাদের ‘মহান মানুষ’ হিসেবে উল্লেখ করে।
বৈঠকের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, মোদি-ট্রাম্প সম্পর্ক সাম্প্রতিক মাসে কিছুটা শীতল হয়ে গেছে, বিশেষ করে পাকিস্তান সংঘাত ও বাণিজ্য ইস্যুতে। আগস্টে ট্রাম্প ভারতের রপ্তানিতে ৫০% শুল্ক আরোপ করেন, যার অর্ধেক ছিল ভারতের রাশিয়ার তেল কেনার শাস্তি হিসেবে। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা চললেও এখনও কোনো চূড়ান্ত চুক্তির ইঙ্গিত নেই।