জন্মহারে বিস্ময়কর সামাজিক পরিবর্তন

পতনের মুখোমুখি হতে পারে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:০৩

বিস্ময়কর সামাজিক পরিবর্তনের দিকে ধাবিত হচ্ছে ইউরোপ। জন্মহার কমে যাওয়ার কারণে ভবিষ্যতে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো পতনের মুখোমুখি হতে পারে। 
বৈশ্বিক উর্বরতা সম্পর্কিত একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক মেডিকেল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’ সমীক্ষাটি প্রকাশ করেছে।
গত মার্চে তাদের সমীক্ষা সম্পর্কিত এ প্রতিবেদনটি সংকলন করেছে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের (আইএইচএমই) আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল। ২১০০ শতকের পূর্বাভাসসহ ২০৪টি দেশ ও অঞ্চলে বিশ্বব্যাপী উর্বরতা, ১৯৫০-২০২১ (পিডিএফ)’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে তারা। 
সমীক্ষায় দ্য ল্যানসেট জানিয়েছে, “২০২১ সালে সমস্ত দেশ ও অঞ্চলে অর্ধেকেরও বেশি হারে প্রতিস্থাপন স্তরের নিচে বিশ্বব্যাপী সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে নারীদের উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে।” 
অভিবাসনের মাত্রা নিয়ে উদ্বেগে আছে এমন পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর জন্যও এ উর্বরতা হার হ্রাসের প্রভাব অপরিসীম বলে জানিয়েছেন এ প্রতিবেদনের সহ-প্রধান লেখক নাটালিয়া ভি ভট্টাচার্য। 
উর্বরতার হার এবং জীবিত শিশু জন্মের এ ভবিষ্যৎ প্রবণতাগুলো বিশ্ব অর্থনীতি এবং ক্ষমতার আন্তর্জাতিক ভারসাম্যকে সম্পূর্ণরূপে পুনর্বিন্যাস করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আর জন্মহার হ্রাসের প্রভাব ঠেকাতে সমাজ পুনর্গঠনের প্রয়োজন হবে বলেও এ প্রতিবেদনের সহ-লেখক উল্লেখ করেছেন। 
দ্য ল্যানসেটের সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে নারীদের সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে উর্বরতার হার ২০২১ সালে ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ থেকে ২০৫০ সালে ১ দশমিক ৩৮ শতাংশে এবং ২১০০ সালে তা ১ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে যাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। 
এ ফলাফল সঠিক হলে দেশটিকে পরবর্তী আট দশক বা তারও বেশি সময় ধরে অভিবাসনের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। 
এছাড়া কম শিশুর জন্ম এবং চিকিৎসার অগ্রগতির কারণে মানুষ দীর্ঘকাল বেঁচে থাকলে দ্রুত বার্ধক্য জনসংখ্যার সম্ভাবনার মুখোমুখি হবে পশ্চিম ইউরোপ। 
পশ্চিমা দেশগুলো বয়স্কদের টিকিয়ে রাখার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের কারণে সামনের দশকগুলোয় গুরুতর অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে বলেও সমীক্ষায় জানিয়েছে তারা। 
দ্য ল্যানসেটের প্রকাশিত সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, পশ্চিম ইউরোপে অতি-ডানপন্থীরা দীর্ঘকাল ধরে উর্বরতা হ্রাসের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখে আসছে। তবে সামনের দশকগুলোতে এ জন্মহারের কারণে দেশগুলো পতনের মুখোমুখি হতে পারে। 
এ সমস্যা সমাধানের জন্য দেশগুলোকে নিরবচ্ছিন্ন অভিবাসনের জন্য পুনরায় সুযোগ করে দিতে হতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তারা। 
প্রতিবেদনে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, একটি বিস্তৃত স্থিতিশীল জনসংখ্যা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি নারীর ২ দশমিক ১ জন শিশুর মোট উর্বরতা হার প্রয়োজন।
প্রতিবেদনটিতে ২০২১ সালে যে হার ছিল তা থেকে পশ্চিম ইউরোপে এ উর্বরতার হার ১ দশমিক ৫৩-তে নেমে যাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আর ২০৫০ সালে এ হার ১ দশমিক ৩৭-এ নেমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা পতনের শিকার হবে স্পেন।
সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে উর্বরতার হার হ্রাসের কারণ হিসেবে কর্মক্ষেত্রে নারীদের বৃহত্তর অংশগ্রহণ আর সেই সঙ্গে গর্ভনিরোধক ব্যবহারের সুযোগ বৃদ্ধির বিষয়গুলোকে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র: আল জাজিরা, ল্যানসেট