ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের নাটকীয় উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর। সোমবার (২৯ এপ্রিল) নয়াদিল্লির কিরোরি মাল কলেজে ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং জাপানের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের একীকরণ: অর্থনৈতিক বন্ধন এবং পরিবেশগত সংরক্ষণের ভারসাম্য’ শীর্ষক একটি অধিবেশনে বক্তব্য দেওয়ার সময় এ কথা বলেন জয়শঙ্কর। ভারতের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের নাটকীয় উন্নতিতে উত্তর-পূর্ব ভারত বড় সুবিধাভোগী। তার দাবি, ভারত-বিভাজন উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রাকৃতিক সংযোগকে ভেঙে দিয়েছিল। তবে গত এক দশকে কেন্দ্রীয় সরকারের নানা প্রচেষ্টা ওই এলাকার উন্নয়ন ঘটিয়েছে।
জয়শঙ্কর বলেন, আমরা যখন ২০১৫ সালে স্থল সীমানা চুক্তি করি, তখন উভয় দেশের মধ্যে আস্থা ও সম্পর্কের নতুন দিক খুলে যায়। এরপর থেকে আপনারা সন্ত্রাসবাদ এবং অস্থিতিশীলতা মোকাবিলাসহ অন্যান্য অনেক সমস্যার সমাধান হতে দেখেছেন।
জয়শঙ্কর বলেন, ২০১৫ সাল থেকে আমরা আসলে যা দেখেছি তা হল প্রাথমিকভাবে আপনি যা বলতে পারেন তা ছিল সম্পর্কের পুনর্নির্মাণ। ১৯৬৫-এর পূর্বের পরিস্থিতি। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে, পূর্ব পাকিস্তান সমস্ত রেল ও সড়ক যোগাযোগ সহ সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় যা তখন বাকি ভারতের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সুতরাং, প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ ছিল এটি ফিরে পাওয়া।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম এবং মংলার মতো বাংলাদেশের বন্দরগুলিতে ভারতের ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া এই অঞ্চলে, বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বে বাণিজ্যকে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করেছে। ভৌগোলিকভাবে দেখলে মংলা বা চট্টগ্রামের মতো বন্দরগুলো উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বন্দর হতো। কিন্তু, রাজনৈতিক কারণে ওই বন্দরগুলোতে আমাদের প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। আজ, যখন আমরা উত্তর-পূর্বের সাথে উন্মোচিত সম্ভাবনার দিকে তাকাই, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিশাল উন্নতি আসলে সেখানে আরও অনেক সুযোগের দ্বার উন্মোচন করেছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প যা মোদি সরকার প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করেছে তা হল ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপাক্ষিক মহাসড়ক যা অবশেষে ভিয়েতনামের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বকে সংযুক্ত করবে।
জয়শঙ্কর স্বীকার করেছেন যে, মিয়ানমার আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের বেশ কিছু সমস্যা ছিল। সামরিক বাহিনী ক্ষমতা গ্রহণের পর গত কয়েক বছরে আরও গুরুতর সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা আমাদের নিজেদের সীমান্তে সেসব সমস্যার পরিণতি প্রশমিত করার কাজ করছি। মিয়ানমারের মাধ্যমে কানেক্টিভিটিতে আমাদের বড় অংশীদারিত্ব রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যদি এই সব পদক্ষেপ ফলপ্রসূ হয় এবং উত্তর-পূর্ব মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে পূর্ব দিকে যাওয়া যায়, একইসঙ্গে বাংলাদেশের দক্ষিণ দিকে সংযোগ পাওয়া যায়, তাহলে ভারতের সমুদ্র তীরসহ সমগ্র পূর্ব ভারত আরও নিবিড়ভাবে বিকশিত হবে, যা মোদি সরকারের উদ্দেশ্য।